যুগে যুগে নানা গণ-অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি তৎকালীন যোগাযোগ প্রযুক্তিগুলো হয়ে উঠেছিল এক বড় হাতিয়ার। সেটা হোক ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের রেডিও কিংবা বর্তমান সময়ের নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়াকে আমাদের বাবা-মায়ের জেনারেশন যতই দুই চোখের বিষ ভাবুক, যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে যেকোনো আন্দোলনে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা কিন্তু অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। চলুন আজ একটু জেনে নিই যুগে যুগে কীভাবে যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আন্দোলনে যুগিয়েছে সাহস, ছড়িয়ে দিয়েছে সকলের মাঝে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১
মুক্তিযুদ্ধের সময় টেলিভিশন, সংবাদপত্র থাকলেও সরকারের নজরদারি ছিল বেশ। তাই হাতের কাছে সহজে পাওয়া যেত রেডিও। এজন্য ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ যেন ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রাণভোমরা। এই রেডিওর মাধ্যমে স্বাধীনতার ডাক আসে, সেই রেডিওর মাধ্যমেই গান, কবিতা কিংবা স্যাটায়ার অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে রেখেছিল সাহস, করে রেখেছিল প্রাণবন্ত। সেখানে ছিল চরমপত্রের মতো অনুষ্ঠান যা যুদ্ধের ভারী পরিস্থিতিকে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরত। জয় বাংলা বাংলার জয়, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি- এর মত চেতনাদীপ্ত গান।
আরব বসন্ত, ২০১০
আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়তে প্রথম দেখা যায় ২০১০ সালে যাকে বলা হয় ‘আরব বসন্ত’। যা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে তিউনিসিয়ায়। সেই আন্দোলনে ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউবে ওঠে ঝড়, ফলাফল– ২৩ বছরের শাসন ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন বেন আলি। এরপর একে একে মিশর, লিবিয়া, সিরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। হ্যাসট্যাগ, কমেন্ট পোস্টে সয়লাব হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া। মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ৩০ বছরের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলন, ২০২৪
২০২৪ সালে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রথমে কোটা বিরোধী আন্দোলন দিয়ে শুরু হলেও এটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যমে। আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে পর্যন্ত ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে খবর পৌছে যায়। এ সময় তৎকালীন সরকার সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিলেও কোনভাবেই তাদের অন্যায় অত্যাচারের ভিডিও, লেখা, ছবি, এগুলোর প্রচার বন্ধ করতে পারেনি। বরং এগুলো ব্লক করার কারনে আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
নেপালের জেন-জি আন্দোলন, ২০২৫
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নেপালের আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপের মাধ্যমে। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ডিসকর্ড-এর। দেখা যায় ডিসকর্ডে নানা গ্রুপ চ্যাট এবং একাউন্ট থেকে সরকার পতনের জন্য নানা স্লোগান , পোস্ট, হ্যাসট্যাগসহ ছিল আন্দোলনের ডাক। বাংলাদেশের মতই নেপাল সরকারের নানা অত্যাচারের ভিডিও, ছবি এবং লেখাও ছড়িয়ে পড়ে ডিসকর্ডে। নেপাল সরকারও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। তবে ডিসকর্ডের নীতিমালার জন্য সেটিকে আটকাতে পারেনি নেপাল সরকার। এমন কি নেপাল সরকার পতনের পর ডিসকর্ডে ভোটাভুটির মাধ্যমেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাছাই করে জনগণ।
পাঠকের মন্তব্য