শাহবাগী কারা?

৪৩৯৮ পঠিত ... ১৫:১৯, মার্চ ০৪, ২০২৫

31

লেখা: অরিত্র আহমেদ 

'শাহবাগী' কোনো স্পেসিফিক ট্যাগ না, যতদূর বুঝলাম। এইটা একটা আমব্রেলা কনসেপ্ট। যারেই অপছন্দ হবে, তারেই এই আমব্রেলার নিচে ঢুকায়ে দেওয়া যায় আর কী। মাজার ভাঙার বিরুদ্ধে কথা বললে সে শাহবাগী। LGBTQ নিয়ে কথা বললে সে শাহবাগী। আদিবাসী নিয়ে কথা বললে সে শাহবাগী। নারী-হেনস্থার বিরুদ্ধে কথা বললে সেও শাহবাগী। মোট কথা, মেজোরিটির কালচারাল ও পলিটিকাল আধিপত্য বা শাসনের বাইরে যেই যাওয়ার চেষ্টা করবে, সেই শাহবাগী। ২০১৩ সালের সেই আদিম শাহবাগ, বা গত পনেরো বছরের আওয়ামীফাইল, কালচারাল শাহবাগের ভেতরে 'শাহবাগী' ট্যাগটা আর সীমাবদ্ধ নেই।

ফেসবুকে বুদ্ধিমান মানুষজনের পোস্ট পড়লে ইদানীং মনে হয় 'শাহবাগী'রা যে এই দেশে আদৌ বেঁচে আছে, এইটা তারা চানই না। ফলে মানুষজন এই যে যত্রতত্র শাহবাগী ট্যাগ দিয়ে বেড়াচ্ছে, এইটাকে তারা নিষেধ করা দূরে যাক, ডিসকারেজও করেন না। আদপে এই ট্যাগিঙের সাথে শিবির বা জঙ্গী ট্যাগের কোনো পার্থক্য নেই। আওয়ামী আমলে শিবির মানে শুধু শিবিরই বোঝানো হতো, ব্যাপারটা এমন না। আওয়ামী শাসন ও আওয়ামী সাংস্কৃতিক বাসনার বিরুদ্ধে বা বাইরে যারা ছিল, তারা সবাই-ই আওয়ামীলীগের চোখে শিবির হিসেবে গণ্য হতো। তো সেই ট্যাগিঙের ফাঁকিটা আজ আমরা ধরতে পারছি। কিন্তু নতুন একটা ফাঁকিবাজি যে এর মধ্যেই তৈরী হয়ে গেছে, এবং এইটাকে তোল্লাই দিলে যে ভবিষ্যতে আওয়ামী স্টাইলের আইডিওলজিকাল রিপ্রেশন কায়েম হতে পারে, এই জিনিসটা ফেসবুকের অনেক পপুলার লোকজন বুঝতে পারেন না। বা ইচ্ছা করেই বোঝেন না। এরা উল্টো একটা নতুন নিপীড়নের আইডিওলজিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরী করে দিচ্ছেন। যদি আসলেই গণতন্ত্রের আকাঙ্খা এনাদের মনে থাকে, তো একদিন এই কাজের জন্য এনাদেরকে অনুতাপ করতে হবে।

মজলুম মানেই নির্ভুল, মজলুমের কোনো বাসনাই খারাপ হতে পারে না—এইটা একটা পপুলিস্ট স্ট্যান্ড। মজলুমকে ফুট-সোলজার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য এই ধাঁচের রাজনীতি করা হয় আর কী। তো এইরকম একটা নাজুক সময়ে যারা মাজার ভাঙ্গা নিয়ে কথা বলেন না, নারী-হেনস্থার ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন না, যত্রতত্র 'শাহবাগী' ট্যাগিঙের বিরুদ্ধে কথা বলেন না, তারাও আসলে নতুন এক জুলুমেরই শরীক হচ্ছেন। বাঙলাদেশের মুসলমানরা মজলুম ছিল বা আছে, এর মানে এই না যে কোনো একটা ইস্যুতে 'জনগণে'র অন্যায়, অগণতান্ত্রিক বাসনাকেও সালাম জানিয়ে চলতে হবে। মেজোরিটিই খালি জনগণ, আর বাকিরা এই দেশের কেউ না—এই মতাদর্শ ধারণ করে সর্বোচ্চ আরেকটা ফ্যাসিজম কায়েম করা যায়। গণতন্ত্র এত শস্তা না। আপনি গণতন্ত্রের পক্ষে না থাকলে সেটা স্পষ্ট করে বলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের নাম করে মেজোরিটারিয়ানিজম কায়েম করবেন, এইটা তো হতে পারে না।

মজলুমের পক্ষে থাকার জন্য পপুলিস্ট হওয়া লাগে না। মজলুমের পক্ষে থাকার জন্য ট্যাগিংয়ের রাজনীতি করা লাগে না। মজলুমের পক্ষে থাকার জন্য খালি আইডিওলজির ভিত্তিতেই কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে খরচযোগ্য বা বধযোগ্য করে তোলার দরকার পড়ে না। এগুলোর দরকার হয় জালেম হওয়ার জন্য।

সহনশীল হতে শেখেন। এই নাজুক সময়ে বিবেক আর সহনশীলতার সদ্ব্যবহার খুবই জরুরি।

৪৩৯৮ পঠিত ... ১৫:১৯, মার্চ ০৪, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top