যুগে যুগে বিভিন্ন দেশের গোপন টর্চার সেলের কথা মানুষ জানতে পেরেছে। গুয়ান্তামো বে থেকে শুরু করে মিসরের স্করপিয়ন প্রিজন, সিরিয়ার সেডনায়া কারাগার সবকিছুই সামনে এসেছে ধীরে ধীরে। টর্চার সেল অনেকটা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের কৌতূহল তালিকায় ছিল বরাবরই।
বাংলাদেশের দিকে তাকাই।
আল জাজিরার সেই প্রতিবেদন ব্যাপক সাড়া ফেলে বাংলাদেশের মানুষের মনে। কোন প্রতিবেদনের কথা বলছি বুঝেছেন নিশ্চয়ই। সেবারই প্রথম 'আয়নাঘর' নিয়ে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশের মানুষ। জানতে চান আরও ভেতরে। বেঁচে আসা মানুষগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে শোনায় দুর্বিষহ কোনো স্বপ্নের মতো। হঠাৎ আবিষ্কার করি তাদের সাথে সাথে আমাদের চোখেও পানিও গাল বেয়ে নেমে যাচ্ছে।
বাঙালির তেজ সূর্যের মতো। চোখের পানি আগুনে রূপ নেওয়ামাত্রই পতন হয় স্বৈরাচারী গুমজননীর। পতনের পর কেটে গেছে প্রায় ৭ মাস। এই ৭টি মাস ধরে প্রতিটি দেশপ্রেমী বাংলাদেশীর মনের একটি কমন সূক্ষ্ম ইচ্ছা ছিল আয়নাঘরকে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার। প্রতিটা গল্প শোনার, তাদের সঙ্গী হবার। এতটুকু আশা তো 'আমাদের' সরকারের কাছ থেকে আশা করতেই পারি!
ইউনূস সরকার নিরাশ করেছে-তা বলব না। একেবারে হয়তো নিরাশ করেনি। আয়নাঘর আমরা দেখছি। বিশ্বাস করেছি। কিন্তু আমরা একে দেখতে চেয়েছিলাম 'আয়নাঘর' হিসেবে। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম এর 'র' নেস। আমরা চেয়েছিলাম রোমহষর্ক সেসব সিসিটিভি ফুটেজ যা দেখে আরও একবার কওমীজননীর মুখে থুতু দেওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগ্রত হবে। ডেভেলপারারের হাতে পড়া কোনো পুরোনো বিল্ডিংয়ের ধ্ধংসস্তূপের মতো আমরা একে দেখতে চাইনি। গায়ে রঙ মাখা আয়নাঘর, মাঝের দেয়াল তুলে ফেলা খুপড়ি ঘর ভেঙে বড় করা ঘর আমরা দেখতে চাইনি।
আমরা কেন আদি আয়নাঘর দেখতে পেলাম না—সে প্রশ্ন সরকারকে করা সময়ের দাবি। সরকারকে উত্তর দিতে হবে, আয়নাঘরের মেকআপ আর্টিস্ট কে বা কারা, এবং কেন তা আমরা আদি অবস্থায় দেখতে পেলাম না। উত্তর দিতে হবে কেন ৭ মাস সময় পার হয়ে গেল। সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এলে যারা হুমকির মুখে পড়ে তাদের কেউ এখনও আমাদের সামনে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে কি-না, আমরা জানতে চাই। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা প্রশ্ন করতেই থাকব। করতেই থাকব।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন