পদ্মা থেকে গঙ্গা; বহমান ‘বাংলা বসন্ত’

২৫৯ পঠিত ... ১৬:৩১, আগস্ট ১৭, ২০২৪

18

ওপার বাংলা এবং এপার বাংলার বন্ধন যে অটুট তা পুনরায় প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে বিদ্রোহের মাধ্যমে। বিদ্রোহের নিয়মই যে ছড়িয়ে পড়া, এলাকা থেকে অঞ্চলে এবং দেশ থেকে দেশান্তরে, এই একবিংশ শতাব্দী তার সাক্ষী হয়ে থাকছে। বাংলাদেশের সরকার বদলের বিদ্রোহের সফল অনুপ্রেরণা নদী পার করে এসে বর্তমানে বাংলার মানুষের মনে সাহস যোগাচ্ছে। কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে ১৫ই আগস্ট গোটা বাংলায় ২৫০ এরও বেশি জায়গায় মহিলারা মধ্যরাতে রাস্তা দখল করেছে। ১৫ই আগস্টের স্বাধীনতা পালন করেছে রাত ১২টায় লক্ষ লক্ষ মহিলা রাস্তায় বসে, চিৎকার করে বলেছে, রাতের অধিকার, হোক মেয়েদের। যোগদান করেছে অসহায় পুরুষরাও। ৯ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধাদের ভীড় উপচে পরাতে রাত ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থেকেছে শহরগুলির প্রধান সড়ক। রাতের জন্য বিনামূল্যে পরিবহন ব্যবস্থা দেওয়া হয় বেসরকারি বাসগুলির তরফ থেকে, বাড়ানো হয় মেট্রোর সংখ্যা।

তবে ১৫ই আগস্টের মধ্যরাতের ঐতিহাসিক ভীড় বাঙালিকে ভাবিয়েছে যে এটি শুধু একটি ধর্ষণের রাগের প্রতিবাদ নয়। পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবে উপলদ্ধি করছি যে, এই প্রতিটি মধ্যরাতের চিৎকারে লুকিয়ে আছে স্বৈরাচারী মমতা ব্যানার্জীর দলের প্রতিনিয়ত শোষণ, প্রতি নির্বাচনে হাজার হাজার খুন, বুথে ভয় দেখিয়ে ভোট আদায় করা, এলাকার দাদাদের শাসানি, প্রভাবশালী মানুষের ভয়ে সর্বদা কেঁপে ওঠা সাধারণ মানুষ, যেসবকে এখন মানুষ নাম দিচ্ছে, সরকারি ধর্ষণ। সাথে পেছনের ১০ বছরের অভাবনীয় দুর্নীতি, লুটতরাজ, এলাকা ভিত্তিক গুন্ডারাজ, মোটা টাকার বিনিময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিয়োগ, এবং এখন সামনে এসেছে সরকারি হাসপাতালগুলির সেক্স রাকেট (এখনও প্রমান সাপেক্ষ)। বাংলাতে এই আন্দোলনের প্রখরতা এতই যে পুরো ভারতব্যাপী মহিলারা তাতে প্রভাবিত হয়েছে এবং প্রতিটি রাজ্যে প্রতিবাদ শুরু করেছে। পুরো ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া ফিড ভরে গিয়েছে নারী নিরাপত্তা বিষয়ক কন্টেন্টে, তাতে সামিল হয়েছে ছোটো ইনফ্লুয়েন্সার থেকে বড় সেলেব্রিটিরাও। এমনকি ১৪ আগস্টের রাত ১২টার মহিলাদের রাস্তা দখল মুভমেন্টটিও গোটা পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং সফল হয়েছে শুধু মাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই। ঠিক যেমন বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ার রোল ছিল সরকার বদলের আন্দোলনে। আমি নিজের জীবনে পূর্বে এত বড় কোনো সোশ্যাল মিডিয়া মুভমেন্টের সাক্ষী হইনি। বাংলার প্রায় সকল মানুষ এখন সমষ্টিগতভাবে ডাক তুলছে #resignMAMATA.

আমার এখন পর্যন্ত এই ২৬ বছরের ছোটো জীবনকালে দেখা সব থেকে বড় বিদ্রোহ ছিল বাংলাদেশের যুবশক্তির সরকার বদলের বিদ্রোহ যা পরিবর্তিত হয় কোটা আন্দোলন থেকে। ঠিক একইভাবে এই ধর্ষণের আন্দোলনও পশ্চিমবঙ্গ বাসীকে উপলদ্ধি করাচ্ছে তাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গাত্রদাহকে। আমার উপলব্ধী, এই ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের বদান্যতায় এক গণঅভ্যুত্থান সমীপবর্তী। অপরদিকে সাম্প্রতিকতম খবরে জানা গেছে, স্বৈরাচারীর সরকার দ্বারা  আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রধান মুখগুলিকে উত্তরবঙ্গের হাসপাতালে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাল থেকে বাংলায় নতুন মোঢ় নিয়েছে এই ঘটনা, মমতা ব্যানার্জী রাস্তায় নেমেছে এই ঘটনার প্রতিবাদে। আপনারা আগে কখনও দেখেছেন যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাস্তায় নেমেছে প্রতিবাদে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং স্বাস্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে? যেখানে ৩ জন ব্যক্তি একজনই মানুষ? কী জানি আমি তো দেখিনি!  

২৫৯ পঠিত ... ১৬:৩১, আগস্ট ১৭, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top