পদত্যাগ করুন শেখ হাসিনা

৫৩৫ পঠিত ... ১৭:৪৯, আগস্ট ০৪, ২০২৪

11

আমরা বুঝতে পারছি, এটা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, এখন পদত্যাগ করতে হবে। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন বৈষম্যধূসর রিকশাচালক, মেহনতি মানুষকে আপনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মোহনায় মিলিত করে, তখন আপনাকে ক্ষমতা ছেড়ে অবসরে যেতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার ছিলো গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক সুবিচার। ছাত্রছাত্রীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সেই আকাঙ্খারই অনুবাদ। যে অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ) সমাজের স্বপ্ন লালিত হয়েছে জনমানুষের মনে, আজকের রাজপথের সাহসী মিছিল সেই স্বপ্নেরই দৃপ্ত হেঁটে চলা। রংপুরে সাঈদের বুকে গুলি করেছে খুনে পুলিশ, সিলেটে রুদ্রকে হত্যা করেছে নরভোজি বাহিনী। ক্ষমতার বুলেটের নিশানা কখনও হিন্দু নয়, মুসলমান নয়, বৌদ্ধ নয়, খ্রিস্টান নয়, আদিবাসী নয়; ক্ষমতা হত্যা করে কেবল মানুষকে। ঘোমটা টানা মা, সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া মা, তাদের সন্তান হারানোর অশ্রুতে বাংলাদেশের পুনর্জন্ম দিয়েছেন রক্তাক্ত জুলাইয়ের বিষাদ সিন্ধুতে।

সুতরাং আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে শত শত তরুণ-তরুণী হত্যা, শত শত ছাত্রছাত্রীকে রাবার বুলেটে অন্ধ করে দেয়া, হাজার হাজার মানুষকে আহত করার দায় নিয়ে। হাজার-হাজার তরুণী-তরুণীকে কারাগারে ছুঁড়ে ফেলে পুলিশি নির্যাতনের দায় আপনাকেই নিতে হবে। জুলাই ছাত্রগণহত্যার দায়ে আপনি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। জুলাই পেরিয়ে অগাস্ট এসে গেলেও আপনি অনুতাপহীন। আজ রবিবারেও আপনার নেতৃত্বধীন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র মানুষকে হামলা করে তাদের হত্যা করেছে। ফলে আপনার মানবতাবিরোধী অপরাধের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। শহীদের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি আপনি পদত্যাগ করবেন; তত তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে এই ক্ষমতার অন্ধ দৈত্যের মানুষ শিকার।

এদেশের মানুষের জীবনে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এক্সপ্রেস হাইওয়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাদের সন্তান। আপনি আপনার উন্নয়নের দালান-কোঠার শোকে মুহ্যমান থেকে হত্যা করে চলেছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যত।

দুর্নীতির বসন্ত সৃষ্টি করে আপনি অযোগ্য-মেধাহীন-আত্মকেন্দ্রিক-খুনে লোকেদের দেশডাকাতির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আপনার ১৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্থ ও সম্পদ পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে। বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ-প্রবাসী শ্রমিকের রক্তঘামে অর্জিত অর্থ লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের দখলদার বাহিনী।

ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ভোটকেন্দ্রকে আপনি পরিণত করেছেন প্রহসনের রঙ্গমঞ্চে। স্বৈরাচারি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আপনি যে গণতন্ত্রের স্বপ্নের সারথি হয়েছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে আপনি নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছেন। আপনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের “একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবি”-র সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন। এই বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এই দেশে যেই মানবতাবিরোধী অপরাধ করবে, সেই শাস্তি পাবে।

আপনি আয়নার সামনে দাঁড়ালে বুঝতে পারবেন, এরশাদের স্বৈরাচারি শাসনের চেয়ে আপনার স্বৈরাচারি শাসন অনেক বেশি ভয়ংকর। “স্বজন হারানোর কষ্ট আমি বুঝি” বাক্যটি আপনি শত-সহস্রবার বলেছেন। অথচ আজ আপনার হাতে শত-হাজার স্বজনের রক্ত, কাঁধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়। আপনার যে দলান্ধ অনুসারীরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের পরেও নিহত ছাত্রছাত্রীদের মাদকাসক্ত ও জামায়াত-শিবির-বিএনপি বলে তকমা দিয়েছে, তারাও অনরেকর্ড মানবতাবিরোধী অপরাধের সহযোগী হয়ে পড়েছে। একাত্তরের কাদের আর দু’হাজার চব্বিশের কাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দেজাভুঁ চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আপনি প্রায়ই বলেন, আমি জাতির জনকের সন্তান, ঐ জায়গাটা কেউ নিতে পারবে না! তাই কি হয়? পুরো জাতির জনকের পিতৃত্বের উত্তরাধিকার কেবল একজন কি হতে পারেন? ১৯৭১ সালে আপনি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ধানমন্ডির বাড়িতে গৃহবন্দী থেকেছেন, সিএমএইচ-এ ডাক্তার দেখিয়েছেন। অথচ ঐসময় বাংলাদেশের লাখ লাখ মা খড়ের গাদায় একাত্তরের যিশুর জন্ম দিয়েছেন, শরণার্থী জীবনের বঞ্চনা সয়েছেন, খুনে সেনাদের ভয়ে চুল কেটে নিজেকে অসুন্দর দেখিয়েছেন, জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য ছিলো ঐ মায়েদের।

অথচ আপনি ও আপনার সমর্থকরা, বিন্দুমাত্র ভিন্নমত দেখলেই তাকে “রাজাকার” বলে তকমা দিয়ে চলেছে গত দেড় দশক ধরে। সংবাদ সম্মেলনে আপনি যখন বললেন, সরকারি চাকরির কোটা মুক্তিযুদ্ধের নাতিপুতি পাবে না তো রাজাকারের নাতিপুতি পাবে!” একাত্তরে সব হারিয়ে শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা পরিবারের সন্তানদের গড়ে রাজাকার বলা হয়েছে আপনার তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে ভরা মন্তব্যটিতে। ঐ মন্তব্য এই জুলাই ছাত্রগণহত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। সেইসময় আপনার যে মুখভঙ্গি ছিলো, তা ছিলো জমিদারের মুখভঙ্গি। অথচ প্রজাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বৃটিশ কোলাবরেটর জমিদার ও পাকিস্তানি কোলাবরেটর জমিদার খেদাতে আপনার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। ভ্রান্ত জমিদারি মনোভঙ্গির কারণে আপনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে আপনার বিপক্ষে নিয়ে গেছেন।

আপনি আপনার পিতা-মাতা ও স্বজনের হত্যার বিচার আদায় করেছেন। সুতরাং রক্তাক্ত জুলাইয়ে যারা সন্তান ও স্বজন হারিয়েছে তারা এর বিচার আদায় করবেই। এটা পৃথিবীর শাশ্বত সত্য।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ভাববেন না, ঐ চেতনাই হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই, সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের মানবিক ঐক্য।

রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এ সেই মিছিল যা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে একাট্টা। বঙ্গবন্ধুর ইমেজ নিয়ে ভাববেন না। ত্রিকালদর্শীর মতো উনি বলেছিলেন, আমার প্রথম মৃত্যু হবে দৈহিক মৃত্যু; কিন্তু দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটবে আমার নিজ দলের লোকের হাতে।

বর্তমানের যে কোন সংকট জাস্টিফাই করতে টাইম মেশিনে চড়ে অতীতের খারাপ অবস্থা তুলে ধরার ক্লিশে রাজনীতি আর ছবি ঝুলিয়ে দেশ ডাকাতির শঠতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধু উভয়ের মুক্তি ঘটেছে রক্তাক্ত জুলাই রেনেসাঁর মাধ্যমে।

আপনি এখন পদত্যাগ করুন।

নবীন কিশোরের জন্য যে সভ্য কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে আপনি ব্যর্থ হলেন; নবীন কিশোর সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এই সভ্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটি নিজেদের হাতে নিয়েছে। এরা ইন্টারনেট যুগের কিশোর-তরুণ বলে, গণতন্ত্র, সুশাসন, কল্যাণ রাষ্ট্র সম্পর্কে তাদের খুবই স্পষ্ট ধারণা। ডেড পলিটিশিয়ান’স সোসাইটি যারা বাংলাদেশ আমলের অত্যাচারী জমিদার হিসেবে কেবল নিজেদের পরিবার, সন্তান, নাতি নিয়ে ভেবেছে; তারা ডেট এক্সপায়ার্ড। এই নিষ্ঠুর বৃদ্ধ জরদগব জাঢ্য, মেধাহীন প্রৌঢ়, তেলাঞ্জলির দাসানুদাসেরা এখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। আপনি সরে গেলে বাংলাদেশের কিশোরের হাতের তালুর হাতের অবাক সূর্যোদয়-এর ওপর থেকে সরে যাবে অন্ধ ক্ষমতা দৈত্যের ছায়া।

আপনি এক্ষুণি পদত্যাগ করুন। আর প্রার্থনা করি আপনি শতায়ু হন।

৫৩৫ পঠিত ... ১৭:৪৯, আগস্ট ০৪, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top