মিহিরের বিয়ের জন্য যখন তার বোন মেয়ে দেখা শুরু করলো

১০৬৩ পঠিত ... ১৩:০৬, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১

Mihirer-meye-dekha

মিহিরের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার দায়িত্ব পড়লো তার বড় বোন মনির উপর। মনি মিহিরের একমাত্র বোন, মনির পছন্দই সবার পছন্দ। কথাটি মিহিরের বাবা ও মা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে। মিহিরও বাবা-মা-বোনের বাধ্যগত। মেয়ে সে নিজেও দেখবে না। সবার পছন্দ হলে না দেখেই সে বিয়ে করতে রাজি।

মিহিরের বিয়ের জন্য মিহিরকে ছাড়াই মনির এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের কাজিনকে দেখতে গেলো তারা৷ মেয়ে সুশ্রী, গাত্রবর্ণ ফর্সা, উচ্চতা ৫ ফুট চার ইঞ্চি। মেয়েকে এখনো আনা হয়নি৷ মনি বসে বসে মেয়ের বড়বোনের সাথে গল্প করছেন। যদিও গল্পে খুব একটা মন নেই তার৷ মেয়েকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষে সে নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করছে৷

মেয়ে আসার কিছুক্ষণ পরই মনি নিজের ভেতর একজন বিসিএস ভাইভা গ্রহণকারীকে আবিষ্কার করলেন। বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে আপেলের টুকরা মুখে দিচ্ছেন ও একটা করে প্রশ্ন করছেন। মেয়ের নাম ঠিকানা জানতে চাওয়ার পর কিছু ধর্মীয় প্রশ্নও করলো মনি৷ মেয়ে মোটামুটি প্রতিটি প্রশ্নই উতরে গেল। কিন্তু মেয়ের নাম বাংলা ও ইংরেজিতে বানান করে বলতে পারলেও আরবি ও হিব্রু ভাষায় না পারায় মনি বেশ হতাশ হলেন। একবার ভাবলেন, আরবি ও হিব্রু ভাষায় মেয়ের নামের বানান বলে সবাইকে তাক তাকিয়ে দিবেন। কিন্তু হুট করে মনির মনে পড়লো সে নিজেও আরবি ও হিব্রু ভাষা পারে না।

এই মেয়ে পছন্দ হলো না তাদের। দ্বিতীয় মেয়ে দেখতে গেলো।

এই মেয়ে আরবিতে নাম লিখতে পারলেও হিব্রুতে পারলো না। মনে মনে মনি হিব্রুর বিষয়টা ছাড় দিতে রাজি হলো। তবে আচমকা মনি নিজের মধ্যে একজন গণিতবিদের উত্থান লক্ষ্য করলো। দশম শ্রেণীতে পড়া পিথাগোরাসের উপপাদ্য ও বীজগণিতের কিছু সূত্র কাজে লাগিয়ে মনি খেয়াল করলো মেয়ের বামচোখ ডানচোখের চেয়ে ১.৭ মিলি ছোট।

তৃতীয় মেয়ে দেখতে গেলো তারা৷ এই মেয়ে মোটামুটি মনির সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হলো৷ মনির মনে হলো, এমন ভয়ংকর জ্ঞানী মেয়ে মনি ইহজীবনে দেখেনি। মনির দাদাও দেখেনি। মনির চোদ্দগুষ্টির কেউ দেখেনি। দেখার সম্ভাবনাও নেই। মনি এত খুশি হলো যে, ইউরেকা ইউরেকা বলে রাস্তায় রাস্তায় দৌঁড়াতে ইচ্ছে করলো তার।

কিন্তু একটা কথা মনে পড়ে মুহূর্তেই মনির সকল খুশি ধূলিসাৎ হয়ে গেল। মনির দাদার বোনের ননদের একটা কথা মনির মনে পড়ে গেলো। তিনি বলেছিলেন, 'বেশি জ্ঞানী মেয়েরা জামাইকে পাত্তা দেয় না।'

এখানে মেয়ে তাদের পছন্দ হলো না। এরপর প্রায় একশ মেয়ে দেখেছে মনি। কাউকে কোকড়া চুলের কারণে পছন্দ হয়নি। কারণ মনি ফেসবুকে দেখেছে, কোকড়া চুলের মেয়েরা সংসারি হয় না। নাদিয়া নাম হওয়ার কারণেও একজনকে পছন্দ হলো না। কারণ মনি ফেসবুকের একটা পেজ থেকে জেনেছে, নাদিয়া নামের মেয়েরা জামাই পিটায়।

১০৪ নাম্বার মেয়ের ক্ষেত্রে এসে পরিবারের সবার মেয়ে পছন্দ হলো। কিন্তু মনির মনের ভেতর কোন কারণে একটু খুতখুত রয়ে গেছে৷ তার ঠিক মেয়েটাকে পছন্দ হচ্ছে না। আবার কেন পছন্দ হচ্ছে না তাও মনি বুঝে উঠতে পারছে না।

মেয়ে দেখা শেষে সবাই বাড়ি আসলো। এদিকে মনির গলায় কী যেন একটা আটকেই রইলো। মেয়ের কোন একটা সমস্যার কথা বলা ছাড়া গলা থেকে বস্তুটি নামবেও না। হুট করেই মনি এবার নিজের ভেতর একটা গুণী দার্শনিকের অস্তিত্ব টের পেলো। বাড়ির সবাইকে ডেকে এনে বললেন, 'এত ভালো মেয়েও ভালো না কিন্তু বলে রাখলাম।'

শেষ পর্যন্ত ১০৪ নাম্বার মেয়ের সাথে মিহিরের বিয়ে হলো। সব ঠিকঠাক। বউ আসলো। খাওয়া দাওয়া হলো। বাড়ির সবাই খুশি৷ কিন্তু ঝামেলা ঘটলো বাসর ঘরে। যেই না মিহির রুমে ঢুকলো ওমনি নতুন বউ চিৎকার চেচামেচি করতে শুরু করলো। মিহিরকে কয়েকটা কিল-ঘুষি, খামছিও দিয়ে দিয়া শেষ৷ নতুন বউকে শান্ত করার পর জানা গেল, 'নতুন বউ মনির সাথেই ঘুমাবে৷ সে মনে মনে মনিকেই নিজের স্বামীর আসন দিয়ে দিয়েছে৷ মনি যেদিন দেখলে গেলো, নানাবিধ প্রশ্ন করলো সেদিন থেকেই মেয়ে ভেবেছে মনির সাথেই তার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে।'

১০৬৩ পঠিত ... ১৩:০৬, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top