নাইজেরিয়ার সাথে আর্জেন্টিনার নাটকীয় জয়ের আমিই নায়ক : স্যার গঞ্জালো হিগুয়েইন

১৯৯২ পঠিত ... ২১:০৬, জুন ২৭, ২০১৮

নাইজেরিয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আমরা জয় পেয়েছি, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাবো না। আমি খুবই খুশি যে আমি এই জয়ে আর্জেন্টিনার মূল ত্রাতার ভূমিকা, দলের মূল নায়কের ভূমিকা পালন করতে পেরেছি। আসলে যখন জানতে পেরেছিলাম নাইজেরিয়ার সাথে ম্যাচে আমি প্রথম একাদশে আছি, সত্যি বলতে আপনাদের মতো আমিও বেকুব হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক, মেসি ম্যাচ শুরু আগে আমাকে এসে বলল, ‘দ্যাখ হিগু, তোর গোল করা লাগবে না, কিন্তু পিলিজ লাগে ভাই, গোল মিস করিস না। যদি দেখোস বল তোর দিকে আসে অন্য দিকে দৌড় দিবি’। মূলত এই কাজটাই আমি সবসময় করতে চেয়েছি, কখনই আমি আসলে গোল করতে চাইনি। কারণ ফুটবল আমার ভালোবাসা, গোল আমার প্রেমিকা। আর আমার প্রেমিকাকে আমি সবসময়ই মিস করি, বল যদি কোনোমতে পায়ে চলে আসে আকাশে উড়িয়ে দেই।

আজ আমার মনে পড়ে যাচ্ছে, ২০১৪ সালে জার্মানির সাথে ফাইনালের কথা। আমি মনে প্রাণে চাইছিলাম, ফাইনালটা জিততে। ছিলাম অফসাইডে দাঁড়িয়ে যাতে আমার দলের কোন প্লেয়ার আমাকে বল না দিতে পারে। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। ক্রুস ব্যাটা বিপক্ষ দলের হয়েও হেড করে আমার পায়েই বলটা দিল। আমি আর কী করব? সুন্দর করে বাইরে মেরে দিলাম। মাঝেমাঝে মনে হয়, ক্রুস আমার সাথে মজাই নেয়ার জন্যই ওই পাসটা দিয়েছে, যেন গোলটা আমি মিস করি আর আমাকে নিয়ে ট্রল হয়! তবুও কোপা আমেরিকা ফাইনালের কথাও আমি এখনো ভুলতে পারি না, ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের মতো ম্যাচে তো আর এমন মোয়া গোল মিস করার সুযোগ জীবনে বারবার আসে না।

কৃতজ্ঞতা: Rantages Goatposting

২০১৫ সালের কোপা ফাইনালের কথা ভাবুন, খেলার ১২০ মিনিটের মাথায় আমাকে পাস দিয়েছে, আবার আশাও করে যে আমি গোল দেবো। আরে, গোল দিতে চাইলে কি কেউ পাসটা আমাকে দেয়, তাও আবার আবার অমন ক্রুশিয়াল সময়ে! আমিও সুন্দর মতো বল পোস্টের বাইরে মেরে দিলাম। এমনকি ২০১৬-এর কোপার ফাইনালে যখন ডিফেন্ডার আমাকে বল দিয়ে দিল তখনো আমি মিস করি। কারণ সুফিয়া কামাল বলেছেনে, ‘গোল করো না, গোল করো না/খোকন ঘুমায় খাটে!’ আমি শুধু শুধু খোকনের ঘুম নষ্ট করতে চাই না। সুফিয়া কামাল আমার খুব প্রিয় কবি!

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে এক গোল খেয়ে ফেলার পরও আমি ঠিক সেভাবেই মাঠে এমনি এমনিই দৌড়াচ্ছিলাম। দেখলাম আমি যখন দৌড়াচ্ছি তখন নাইজেরিয়ার ডিফেন্ডাররা আমাকে মার্ক করছে না কেউ। আমার পায়ে বল আসলেই উল্লাসে মেতে উঠছে নাইজেরিয়ার সমর্থকেরা, আর হতাশ হয়ে পড়ছে আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। তারপরেও আমার পায়ে কেমন করে একটা বল চলে আসলো। পায়ে বল আসলেই আপনারা জানেন, আমার সেটাকে আকাশে পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছা করে, দিলামও। কিন্তু তারপর থেকেই ভয়ে ছিলাম, হেরে গেলে তো শেষ! মেসি আবারো আমাকে ডেকে বলল, ‘হিগু, ভাই আমার, তোর পায়ে পড়ি, পিলিজ। তোর শুট মারার দরকার নাই। বল পায়ে আসলে চায়া থাকিস, তাও শুট মারবি না’। এদিকে আবার কোচও আমাকে তুলে নিচ্ছিল না, আমি তো ভয়ে ভয়ে আছি কখন আবার পায়ে বল আসে। কিন্তু তারপরেও একবার আমার পায়ে প্রায় বল চলে আসল, আর তখন আমি আমার দায়িত্ব আমি ঠিকমত পালন করতে পারাটাতেই গোলটা হল। আমরা জিতে গেলাম! বুঝতে পারছেন না আমার কথা?

আপনারা হয়তো খেয়াল করেননি। মার্কেডো যখন ক্রস করল তখন রোহোর একটু পিছনেই আমি ছিলাম। আমি দৌড়ে গেলে, রোহো না পেয়ে বলটা আমিই পাই। কিন্তু তখনই আমার মনে পড়ে গেল মেসির কথা, এইটা মিস করলে শেষ। বেচারা আবার কান্নাকাটি শুরু করবে। তাই বলটা বাতাসে ভেসে আসার পরেও আমি বলের দিকে আগাইনি, ইচ্ছা করছিল রোহোর আগে দৌড়ে যাই। বলটাকে আকাশে পাঠিয়ে দেই, আরেকটা গোল মিস করি। কিন্তু আমি গেলাম না, আর সেই সুযোগে রোহো ভলি করে গোল করে দিল।

আর্জেন্টিনার জন্যে আমি মনে করি মেসির চেয়ে আমার অবদান বেশি। মেসি আর্জেন্টিনাকে একটা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে না পারলেও আমি আর্জেন্টিনাকে তিনটা রানার্স আপ ট্রফি জিতিয়েছি। ফুটবল মানে শিল্পের খেলা, বিনোদনের খেলা। আমি গোল মিসকে যেভাবে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছি, আর কেউ কখনো তা করতে পেরেছে বলে বিশ্বাস করে না। আমিই সত্যিকারের G.O.A.T, আমার সাথে কদুরও (বেনজেমার) তুলনা হয় না। আর আমার গোল মিস আপনাদের যে বিনোদন দেয়, তা রোনালদোর ফ্রি কিক, মেসির ড্রিবলিং-ও আপনাদের দিতে পারে না, পারবে না।

কোনোমতে গ্রুপ পর্ব পার হলাম আমরা, আমাদের সামনে একটা কঠিন টুর্নামেন্ট অপেক্ষা করছে। নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই আমাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স! আমি জানি না বলদের মতো এত মিস করে যাওয়ার পরেও কী করে আর্জেন্টিনা দলে জায়গা পাচ্ছি, আশা করি ফ্রান্সের সাথেও পরের ম্যাচেও পাব।

আমি অবশ্যই চাই আর্জেন্টিনা জিতুক আগামী ম্যাচটা, এমনকি ফাইনাল পর্যন্ত যাক, গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হোক। দরকার হলে এই ম্যাচে আমি যেভাবে ত্রাতার ভূমিকা নিলাম, সামনের ম্যাচগুলোতেও নিব। ক্রস, পাসগুলো ছেড়ে দিব মেসি, আগুয়েরো, রোহোদের জন্যে। গোল মিস করতে না পারায় কষ্ট হবে অনেক, তাও দিব। তবে একটা যদি আছে, সেই যদিটা হল, যদি আমার পায়ে কোনমতে বল চলে আসলে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন- এই হিগু আপনাদের হতাশ করবে না।

১৯৯২ পঠিত ... ২১:০৬, জুন ২৭, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top