প্রধানমন্ত্রী (মনোজ বাজপেয়ি)-র বৈঠকখানায় পায়চারি করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অনুপম খের)। প্রধানমন্ত্রী দাড়ি চুলকে বলে, এত অস্থিরতার কী আছে!
: ওয়াকফ আইন সংশোধন নিয়ে আওরঙ্গজেবের বংশোধর খুব ঝামেলা করছে। বিহার ইলেকশনে এর খারাপ ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে।
এমন সময় অর্ণব গোস্বামী হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করে, চিৎকার করে বলে, পাকিস্তান ঐ পাকিস্তান দায়ী এইসব উস্কানির পেছনে।
ময়ূখ তিনটি ডিগবাজি দিয়ে বলে, পাকিস্তান ভেঙ্গে খান খান করুন; বালুচিস্তান, খায়বারপখতুন খোয়া, সিন্ধু প্রদেশ স্বাধীন করুন। শুধু পাঞ্জাবটা শ্রীলংকা সাইজের পাকিস্তান হয়ে পড়ে থাকুক। আর পুরো কাশ্মীর চাই বিজেপির রানের চিপায়।
বিজিত দোভাল বসে বসে চাণক্য পাঠ করছিল। হঠাৎ বলে, আপন যৌবনে বৈরি। ভূস্বর্গে নরক গুলজার করো; দায় চাপিয়ে দাও পররাজ্যের ওপর। অতঃপর আঘাত হানো। আপন রাজ্য তখন ঐক্যের পাথরে জমাট হবে।
ভয় শংকর বলে, ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স। ডার্টি ওয়ার্ক করো; তারপর রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হও।
কাশ্মীর ফাইলস টু পয়েন্ট ও
সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত স্বামীর পাশে সদ্য বিধবা স্ত্রীর বেদনার্ত স্থির চিত্র। ফ্ল্যাশব্যাকে বেতাব উপত্যকায় মধুচন্দ্রিমার সংগীত ও নৃত্য।
সৃজিত আর্তনাদ করে, সন্ত্রাসী নয়, বলুন মুসলিম সন্ত্রাসী; আর নিহত পর্যটক নয়, বলুন নিহত হিন্দু পর্যটক।
চারজন মুসলিম সন্ত্রাসীর স্কেচ; তারা পাকিস্তানি। অর্ণব গোস্বামী ও ময়ূখ কোরাসে গায়, পাকিস্তান পাকিস্তান।
মুসলিম শব্দটি পাকিস্তান প্রতিশব্দ হলেও; গদি মিডিয়ায় হিন্দু-মুসলমান ভাগ বাটোয়ারার গল্প।
বিহার নির্বাচনী প্রচারণা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী। সে অকস্মাত গরিবের বুশ হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, সন্ত্রাসী পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক; আমরা সেখানে গিয়ে তাকে খতম করব।
বিজেপির এক নেতা হাসতে হাসতে বলে, আপনি তো মাত করে দিয়েছেন; বিহার ইলেকশন জয় নিশ্চিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসো মাত, ক্যামেরায় ছবি উঠছে।
একটা ধোয়া ওঠা আলো আধারিময় কক্ষে সিগারে টান দিয়ে বিজিত দোভাল বলে, অনেক ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। এখন একজন মুসলমান আর একজন শিখ নারীকে পাশে বসিয়ে পাকিস্তানে মিশন সিন্দুরে ধরা যাক দু'চারটি ইন্দুর এবার।
ইউনিফর্ম পরা মুসলিম নারী সৈনিক (হুমা কোরেইশি) আর শিখ নারী (তাপসি পান্নু)-কে পাশে বসিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মিছরির ছুরি বলে, আমার মায়ের সোনার সিঁদুর হারিয়ে গেল শেষে, হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি মুসলমান সন্ত্রাসীর দেশে।
বারখা দত্তের চোখে অশ্রু; এই তো আমাদের আসমুদ্র হিমাচল ভারত, হিন্দু-মুসলমান-শিখ এখানে অপার আনন্দে ভাসি; ওমা শত্রু এলে প্রতি আঘাত করতে জানি।
কঙ্গনা রাণাওত গেয়ে ওঠে, আমরা প্রতিশোধ নিতে জানি।
এয়ার ফোর্স অফিসারের ইউনিফর্ম পরে অক্ষয় কুমার ইমরান হাশমি ঋত্বিক রোশান হেলে দুলে হাঁটতে থাকে। নেপথ্যে এ আর রহমান ও লতা মঙ্গেশকর পালা করে ঢুকরে কেঁদে ওঠে, বন্দে মাতারম।
জয়া ভাদুড়ির কপালে হাত রেখে অক্ষয় কুমার বলে, মা তেরি সিন্দুর কি কসম, বদলা লেঙ্গে।
চারপাশ থেকে বুবু ব্রিগেড চেঁচিয়ে ওঠে, খেলা হোঙ্গে।
শামীম ওসমান পতাকা উড়িয়ে বুড়ো আঙ্গুল নাঁচিয়ে অশ্রুসজল হয়। যুদ্ধ বিমান উড়তে থাকে; সেখান থেকে সিঁদুর ঢেলে দিলে নারী সমাজ সে কপাল পেতে সে সিঁদুর সিঁথিতে পরে নিলে; মন্দিরের ঘণ্টাগুলো নিজেই বেজে ওঠে; হর হর মহাদেব, হর হর মহাদেব, জয় শ্রীরাম আওয়াজ ওঠে আকাশে বাতাসে। কৈলাসে ধ্যানস্থ হন প্রধানমন্ত্রী। আকাশে রাফায়েল নিয়ে ডিগবাজি দিতে থাকে অক্ষয় খান্না। ঋত্বিক রোশানের যুদ্ধ বিমানের জানালার পাশে এসে অক্ষয় খান্না বলে, জয় শ্রীরাম।
অর্ণব গোস্বামী চেঁচিয়ে ওঠে, পাকিস্তানে নয়টি জঙ্গী ট্রেনিং ক্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনারা। অমনি গদি মিডিয়ার বিজয় উদযাপন শুরু হয়, জঙ্গী মরেছে; জঙ্গী মরেছে।
পাকিস্তানের মন্ত্রী ও পরাজিত সেনারা সব মাথায় টুপি-পাগড়ি, থুতনিতে দাড়ি, গলায় তাবিজ, চোখে সুরমা পরা, উশকো খুশকো ঝুলে যাওয়া চেহারা। হিজাবে মুখ ঢাকা শেরি রহমান ও মালিহা লোদি, হামিদ মীর গোঁফ ছাড়া দাড়ি নিয়ে টিভিতে বলছে, আমরা হেরে গেছি; হে মহাপরাক্রমশালী আমাদের মাফ করুন। নেকাব পরা বোটক্স মরিয়ম আর্মিকে তেলাঞ্জলি দেওয়া বাদ দিয়ে হঠাৎ গেয়ে ওঠে, জনগন মনো অধিনায়কও জয় হে, ভারতও ভাগ্য বিধাতা। হিজাবি হানিয়া আমির গেয়ে ওঠে, জয় হে জয় হে!
গদি মিডিয়ায় ধুলোয় মিশে যাওয়া করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদের ড্রোন শট। বালুচিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। ময়ূখ গান করছে, পাকিস্তান ভেঙ্গে খান খান, টুকরে টুকরে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ঘিরে ফেলে ইজরায়েলি ড্রোন; যুদ্ধ বিমান থেকে লাফ দিয়ে নেমে অক্ষয় খান্না তেরঙ্গা পতাকা উড়িয়ে দেয় তার বাসভবনে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ (অক্ষয় খান্না) তজবিহ হাতে বলছে, হে পরোয়ারদিগার মোদিজির পা'দুখানি এনে দাও; মাফ চাইব। ট্রাম্পকে ফোন করে কাঁদে, হে জগতের পীর আমার প্রাণ রক্ষা করুন।
ট্রাম্প ধমক দেয়, তুমি গরিবের বুশের সঙ্গে লাগতে গেছিলা কেন! দেখি কী করা যায়!
কলকাতার অতিরঞ্জন বাজার পত্রিকায় শিরোনাম, আজ আর ট্রামে বাসে নয় মশয়, ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরুন।
আজতক টিভিতে মেজর ঝুনঝুনিওয়ালা বর্ণনা করে কীভাবে মাত্র তিনজন বায়ুসেনা পুরো পাকিস্তান দখল করে তেরঙ্গা উড়িয়েছে।
ট্রাম্প মোদিকে ফোন করে বলে, যেদিন আপনারা ক্যানাডা আর এমেরিকায় ঢুকে শিখ সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছিলেন; আমি সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম, মুসলিম সন্ত্রাসীদের আর রক্ষা নেই। অনুগ্রহ করে এবার ক্ষমা করে দিন দুশমনকে।
মোদি বলে, ঠিক হ্যায়; লেকিন শাহবাজ শরিফকো জয় শ্রীরাম বোলনা পড়ে গা।
শাশি থারুর মুচকি হেসে বলে, আই এম আ প্রাউড ইন্ডিয়ান; লেটস ডু পার্টি টু নাইট।
মালাইকা অরোরা, লারা দত্ত জমকালো আইটেম নাম্বারে মহল মাতায়, মেরে সিন্দুর কা কসম, আজ তু মেরা হো যা বেবি, মেরি জওয়ানি কি কসম আজ তু খো যা বেবি।
মাচো অক্ষয় খান্না মৃদু বিরক্ত হয়ে মালাইকার হাত ছাড়িয়ে নেয়। ইমরান হাশমি লারা দত্তের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে গেলে জয়া ভাদুড়ি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে এসে হাতের লাঠি দিয়ে লারা দত্তকে সরিয়ে দেয়। ময়ূখ ঘরময় ডিগবাজি দিতে থাকে; লারা দত্তের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রেম নিবেদন করলে; ঋত্বিক রোশান তাকে তুলে আছাড় মারলে ময়ূখ গিয়ে অর্ণব গোস্বামীর কোলে পড়ে।
পাঠকের মন্তব্য