লাইলাতুল ফিল্ড মার্শাল

১৩০ পঠিত ... ১৭:৩২, মে ২২, ২০২৫

20

মহীনের ঘোড়াগুলি একান্ত অনিচ্ছায় বিষণ্ণ বদনে বুন্ডিরাজ্যের সুবেদার মাদার অফ আর্থকে বলেছিল, হার এক্সেলেন্সি আপনি এখন যান। আবার বসন্ত এলে তখন না হয় ফিরবেন। গাছে গাছে ফুল ফুটলে পাখিরা গান গাইলে আমরা আপনাকে খবর দেব।

একটা ঘোড়া ফুল ও পাখি বিশেষজ্ঞ; মাদার যাকে ইলিশে পদক দিয়েছিল; যে নক্সী পাঞ্জাবি পরে আনত চোখে খোকাখুকুদের ডেকে সার্বভারত্বের ব্যাপ্টিজম করে। সেই ঘোড়াটা ঠিকই পিঠে চড়িয়ে অনন্ত হ্রেষা তুলে মাদারকে পৌঁছে দিয়েছিল শুন্ডিরাজ্যের কাঁচামাল প্রাসাদে। শুন্ডিরাজ্যের ঘোড়াগুলি নিয়মিত ঘোড়ার ডাকে চিঠি চালাচালি করতে থাকে বুন্ডিরাজ্যের ঘোড়াদের সঙ্গে। কখনও কবুতরের পায়ে বেঁধে দেয় রংধনু বার্তা।

অপেক্ষায় অপেক্ষায় মাদার আর্থের সময় যেন কাটে না। তাই তো কাকেদের সামনে বক্তৃতা দিয়ে সময় কাটে। কাকেরা কা কা স্বরে বসন্তের আলাপ করে। সার্বভারত্ব ফিরিয়ে আনার প্রহর গুনতে থাকে।

বুন্ডিরাজ্যের যে কাকেরা কোকিল পুচ্ছ পরে কু কু কু গাইত; মহীনের ঘোড়াগুলিকে উজ্জীবিত করত; অপেক্ষায় অপেক্ষায় তাদের পুচ্ছ খুলে যেতে থাকে।

বুন্ডিরাজ্যের ঘুঘু পাখিরা তখন কোকিলের পুচ্ছ পরে কু কু করতে থাকে আর মহীনের ঘোড়াগুলির পাশে ঘুর ঘুর করতে থাকে। কাকের যুগ পেরিয়েছে কিন্তু ঘুঘুদের যুগ কবে; সেই প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে মনে আসে তাদের। কাকেরা বলে, আমরা ছেড়ে দিয়েছি খুদ কুঁড়োর শস্যক্ষেত্র ও মাছের ঘের। ওখানেই চরে খাও না কেন!

ঘুঘুরা তখন আনন্দে খুদ কুঁড়ো খুটে খুটে খেতে খেতে আহবান জানায়, বিশুদ্ধ কাকেরা তোমরা ঘুঘু সেজে যোগ দাও আমাদের খাওন বুবুদের সঙ্গে।

কাক ও ঘুঘুর জোট তখন দোয়েল পাখিদের অভিসম্পাত দেয়; যারা তাদের দুধভাতে উৎপাত শুরু করেছে। তারা চুক চুক করে বলে, এই দোয়েলগুলোকে বুন্ডি রাজ্যের জাতীয় পাখি করাই ভুল হয়েছে।

মহীনের ঘোড়াগুলি দোয়েলদের বোঝায়, বিশুদ্ধ কাকেদের চরতে দিলে তবেই আমরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক বুন্ডি রাজ্যের কথা ভাবতে পারি। তোমাদের কথা মেনে বুকে পাথর চাপা দিয়ে ফাদার অফ থ্রি জিরোকে বুন্ডিরাজ্যের দায়িত্বে মেনে নিয়েছি। তোমরা বিশুদ্ধ কাকেদের মেনে নাও দোয়েলেরা।

দোয়েলেরা মানছে না বলে মহীনের ঘোড়াগুলি দৌড়ে বেড়ায় বুন্ডি রাজ্যময়। অলৌকিক সব মৃত্যু বিষাদ আর নৈরাজ্য ফাদার অফ থ্রি জিরোকে ব্যর্থ প্রমাণে ধেয়ে আসে।

শুন্ডি রাজ্যের প্রণয় নিকেতন বুন্ডি রাজ্যে দোয়েল পাখিদের নানারকম চুইংগাম উপহার দেয়। চুইংগাম চিবাতে চিবাতে যেন তারা বিস্মৃত হয় কর্তব্য কর্ম। এই চুইংগাম চিবিয়ে কাকেরা বিস্মৃত হয়েছিল কর্তব্য কর্ম। এই সমস্ত চুইংগাম চেবানো শেষ হলে মুখে একটা সার্বভারত্বের স্বাদ জেগে ওঠে। বুন্ডি রাজ্যের কাকেরা এইভাবে শুন্ডিরাজ্যের নেশায় মাতোয়ারা হয়েছিল। এবার ঘুঘুদের চুইংগাম চেবানোর পালা।

আর রয়েছে তোতারা। যারা কখনও কাক, কখনোবা ঘুঘুর পাশে বসে প্রায় দেড়শো বছর ধরে একই গান করে। তারা অত্যন্ত মহীনের ঘোড়া প্রিয়। স্বভাবগতভাবে তারা মহীনের ঘোড়ার কাঁধে চড়ে পাখি রজ্যে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করে। বরাবরই তারা বসন্তের শেষ দিনে অত্যন্ত ডানা ঝাপটে, তোমাদের বসন্ত এনে দিলাম গান গায় বারবার।

চারিদিকে কাক, ঘুঘু আর তোতার কলরোল শুনে আর দোয়েলের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে যেতে দেখে মহীনের ঘোড়াগুলো ভীষণ আত্মবিশ্বাস পায়। তখন কেশর ফুলিয়ে বলে, মহীনের ঘোড়া ছাড়া বুন্ডিরাজ্যের আর কেউ কোনো কাজ করে না। সবাই ব্যর্থ; সাফল্যের জয়টীকা কেবল আমাদের কপালে।

প্রণয় নিকেতনের কাঁচামালের গুদামে ধেড়ে ইঁদুরগুলো ইতস্তত দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে পুলকে। মাদার অফ আর্থকে খবর দেয়, এইবার এইবার বসন্ত চোখ খুলল! মাদার আর্থ শুন্ডিরাজ্যের ঘোড়াদের বলে, বুন্ডি রাজ্য থেকে সেই ইলিশে পদক পাওয়া ঘোড়াটাকে আসতে বলো; আমি সুবে বুন্ডিতে ফিরব।

কাকেরা আবার কোকিলের পুচ্ছ পরে আনন্দে গদগদ হয়, সার্বভৌমত্ব স্যামরাজ্যের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না, আমরা চাই সার্বভারত্ব। ঘুঘুদের সামনে ব্রাদার অফ উইন্ডের মাথায় বুন্ডিরাজ্যের মুকুটের স্বপ্ন। তোতারা মহীনের ঘোড়াদের প্রেমে গান বাঁধে, ওহে দুরন্ত সহিস, তুই যেন আমাদের কথা কহিস।

 

১৩০ পঠিত ... ১৭:৩২, মে ২২, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top