কেমন গেল দিল্লির ইদ

৪৪৬ পঠিত ... ১০:৩৯, মার্চ ২৭, ২০২৫

4thumb

এবারের ইদটা অন্য রকম কাটল। অনেক বছর পর ঢাকার বাইরে, দেশের বাইরে, একেবারে দিল্লির লুটিয়েন্স বাংলোর নির্জনতায় ইদের সকাল শুরু হলো। কোনো হইচই নেই, দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় নেই, সকালে ফুলের তোড়া হাতে এসে তেলবাজির প্রতিযোগিতায় নামা মন্ত্রী-এমপিরাও নেই। চারপাশ কেমন যেন নিরব, পানসে।

সকালে বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়লেন এক পরিচিত অতিথি; মোদিজি! যথারীতি হাসিমুখে এসে বললেন, ইদ মোবারক, শেখজি! ক্যায়সে হো আপ? হাতে একটা গুজরাতি মিঠাইয়ের বক্স। বসতে বসতেই বললেন, ইস বার কার ইদ ক্যায়সা লাগ রাহা হ্যায়?

আমি মুচকি হেসে ভাঙা হিন্দিতে বললাম, দেশের মানুষ, দেশের বাতাস, দেশের ইদের আমেজ খুব মিস করছি। মোদিজি হাল্কা মুচকি হেসে আমার রান্না করা সেমাই খেতে খেতে বললেন, মাগার দেখিয়ে আপকে লিয়ে বিরিয়ানি, সিউয়াই (সেমাই) সাব কুছ তো হ্যায়। আমি হালকা হেসে বললাম, ইদের দিনে তো শুধু খাবার খেলেই ইদ হয় না, মোদিজি। এখানে তো ইদের দিন বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার এসব খেতে পাই না—তাই স্বাদটা কেমন যেন কমে গেছে। এগুলোও তো ইদের দিনের স্বাদ বাড়ায়।

মোদিজি বললেন আমার নিরাপত্তার জন্য আমাকে এখানে এভাবে তারা রেখেছেন। আমি কিছু বললাম না। নিরাপত্তা তো আছে, কিন্তু ক্ষমতার সেই চিরচেনা আমেজ নেই। ঢাকায় থাকলে এই দিনে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। কার আগে কে আমাকে ইদের শুভেচ্ছা জানাবে, কার উপহার সবচেয়ে দামি হবে, কে কতটা অনুগত সেটা দেখানোর প্রতিযোগিতা চলত। এখানে সেই তেলবাজির বন্যাটা নেই, আছে শুধু নিস্তব্ধতা।

এরপর আরও কিছু বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীরা এল, তাদেরকে আমার হাতে রান্না করা সেমাই, বিরিয়ানি খাওয়ালাম। জয়কেও আসতে বলেছিলাম কিন্তু এবারের ইদে কয়েক হাজার কোটি টাকা সালামি না দেওয়ায় সে আমাকে ব্লক করে রেখেছে, মনটায় বড় কষ্ট। রাজাকারের বাচ্চারা আমার সাথে সাথে আমার নাদান ছেলেটারও ইদ আনন্দ কেড়ে নিলো। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর মোদিজিকে সাথে নিয়ে জার জার ওবস্তান থেকে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সাথে অনলাইন কুশল বিনিময় এবং কিঞ্চিৎ প্রোপাগান্ডা প্ল্যানিং করলাম। 

বিকেলে টিভি চালিয়ে বাংলাদেশের ইদের খবর দেখছিলাম। রাজাকারের বাচ্চাদের বদৌলতে সুদি ইউনূসের সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু ইদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে কেমন যেন একটা জড়তা। গণভবনের গেটের সামনে সেই চিরচেনা ভিড়ও নেই। যে নেতা-কর্মীরা একসময় আমাকে ঘিরে রাখত, তারা আজ ছত্রভঙ্গ। কেমন যেন সব বদলে গেছে। বিকেলবেলার দিকে মোদিজি বিদায় নিতে নিতে বললেন, শেখজি, আপনার জন্য দিল্লীর দরজা সবসময় খোলা। আমি হেসে বললাম, কিন্তু আমার জন্য তো ঢাকার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে!

 

৪৪৬ পঠিত ... ১০:৩৯, মার্চ ২৭, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top