বিজিত দোভাল ৫ আগস্টের পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ম্রিয়মাণ। অগ্নিবীণা সিক্রি খ্যাসখেসে গলায় বলেন, এই যে গতবছর ১৬ জুলাই থেকে বলছি, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের খপ্পরে পড়েছে; পশ্চিম সে কথা কানে তুলছে কই!
বিজিত দোভাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ইউনূস শাসন আমলের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তা ইউরোপ ও এমেরিকার কিছু বৃদ্ধ ককাসের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। কিন্তু শ্বেতপত্র তৈরি করে যারা; তারা তো কারাগারে। ইউরোপ ও এমেরিকাতে গিয়ে একটা ব্যানার টাঙিয়ে টেবিল চেয়ার পেতে ককাসের বুড়ো নিয়ে সেমিনার করে যারা; তারা তো লুকিয়ে আছে গ্রেফতারের ভয়ে।
অগ্নিবীণা সিক্রি মন্তব্য করেন, বিএনপির মুখ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলিয়ে কিংবা উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিইয়ে খেলাটা তেমন জমে না। আওয়ামীলীগ এই লিপ সার্ভিসটা যেরকম কঁকিয়ে কঁকিয়ে দিতে পারে; ওটা তো বামেরাও পারে না। বামেরা কথা কঠিন করে ফেলে। আর জামায়াতের লোকটা ইনূর দল থেকে এলেও তার মুখে চেতনার গল্প পরাবাস্তব শোনায়।
বিজিত দোভাল হাহুতোস্মি করেন, আসিয়ার মৃত্যু নিয়ে একটা মোমেন্টাম তৈরি হয়েছিল; শুধু যদি আসিয়াটা হিন্দু হতো; তাহলে কলকাতার গল্প দাদুরা পূর্ণিমার গল্পটা রিপ্রোডিউস করতে পারত। কিন্তু আসিয়া মুসলমান হওয়াতে সুবর্ণচরের নারীর ট্র্যাজেডির মতো হারিয়ে গেল। ভিকটিম হিন্দু না হলে কলকাতার গল্পকারদের মুডটা ঠিক আসে না।
অগ্নিবীণা সিক্রি অনুসিদ্ধান্ত টানেন, যত যাই বলুন, ঢাকায় আওয়ামীলীগের কালচারাল উইংকে দিয়ে সংস্কৃতি না করানো গেলে; খেলা জমানো যাবে না। বামেদের পথনাটক অথবা পুলিশকে চ-বর্গীয় গালি দিয়ে সাস্টেনেবল উত্তেজনা তৈরি করা যায় না।
বিজিত দোভাল সিগার ধরিয়ে আক্ষেপ করেন, যে ওলামা লীগ তৌহিদি জনতা সেজে মাজার ভাঙছিল, যে যুবলীগ গেরুয়া পতাকা নিয়ে খেলাফতের মিছিল করছিল; তারা পুঁতিয়ে গেছে মনে হচ্ছে।
সিক্রি চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞেস করেন, প্রণব মুখার্জি যে ছয়টি মইনের ঘোড়াগুলি উপহার দিয়েছিলেন; তারা কোথায়! তাদের দিয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানকে যদি আবার রেসকোর্সের ময়দান বানানো যেত।
বিজিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর চক্রাণু ঝুনঝুনিওয়ালাকে ফোন করেন, মেজর ঝুনঝুনি তোমার বাংলাদেশের ভিসা কি আছে নাকি ফুরিয়ে গেছে!
: আমি হলো গিয়ে লম্বা ভিসা নিয়ে রেখেছিলাম চিফ। হুকুম কি জিয়ে।
: মইনের ঘোড়াগুলিকে খুঁজে বার করতে হবে। ঢাকায় রিফাইন্ড আওয়ামীলীগ ইন্সটল করে এস।
মেজর ঝুনঝুনি নেক্সট ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে যায়। গুলশানে একটা রেস্ট হাউজে ওঠে। মইনের ঘোড়াদের সিগন্যালে ফোন করে।
হুইল চেয়ারে বসে একটি বৃদ্ধ ঘোড়া আসে। ঝুনঝুনি তাকে স্যালুট দিয়ে বলে, স্যার রিফাইন্ড আওয়ামীলীগকে ইন্সটল করতে হবে। ফিল্ডে আওয়ামীলীগ না থাকলে অখণ্ড ভারতের আশাটা দুরাশা হয়ে রয়ে যাবে।
হুইল চেয়ারের ঘোড়া বলে, সাবের হোসেন চৌধুরী দেখতে সুন্দর; শিরীন শারমিন ভালো ছাত্রী, সোহেল তাজ বডি বিল্ডার। তাদের ইমেজ ভালো। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
দ্বিতীয় ঘোড়া আসে; শ্মশ্রুমণ্ডিত, মাথায় টুপি, কপালে নামাজ পড়ে পড়ে ঘাঁটি পড়ে গেছে।
ঝুনঝুনি জিজ্ঞেস করে, জনাবে আলী কি ইসলামপন্থী হয়ে গেলেন!
ঘোড়া অট্টহাসি দিয়ে বলে, গত সাতমাসে দাড়ি বাড়িয়ে ফেলেছি; যাতে কেউ হিন্দুত্ববাদী বলে সন্দেহ না করে।
: রিফাইন্ড আওয়ামীলীগের কোনো প্ল্যান কি আছে!
: রিফাইন্ড আওয়ামীলীগের প্রদীপ ক্রসফায়ারে দুইশোর জায়গায় বিশটি পাখি মারবে; বেনজির হাজার হাজার কোটির জায়গায় মাত্র একশো কোটি চুরি করবে, আজিজ রাতের ভোটে বিএনপিকে ১০০ আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামীলীগের জন্য ২০০ আসন টুকিয়ে নেবে।
তৃতীয় ঘোড়া আসে স্যুট টাই পরে। ঝুনঝুনি জিজ্ঞেস করে, উপদেষ্টা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নাকি!
: তালিকায় নাম ছিল; ভারতের ঘোড়া সন্দেহে বাদ পড়েছি।
চতুর্থ ঘোড়া গলফ খেলার পোশাকে আসে। ঝুনঝুনি বলে, আপনাকে খুব ফিট দেখাচ্ছে। রিফাইন্ড আওয়ামীলীগে যোগ দেবেন নাকি!
: আমি মশাই কিং মেকার; কিং হতে চাই না।
পঞ্চম ঘোড়া আসে জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের পোশাক পরে। ঝুনঝুনি হেসে বলে, ও দাদা আপনাকে তো কলকাতার কবির মতো দেখাচ্ছে! হবেন নাকি রিফাইন্ড আওয়ামীলীগের কালচারাল উইং।
: এই যে নেত্রীকে বিমানে উঠিয়ে দিল্লিতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলাম; তারপর থেকে ফুল পাখি লতা পাতা নিয়ে জগদীশ চন্দ্র বসু সেজে আছি। আমাকে আর ঘাঁটাবেন না।
ষষ্ঠ ঘোড়া এসে ফোন থেকে ডয়চেভেলে রিপাবলিক বাংলায় গুলফাত ম্যাডামের ইন্টারভিউ শোনায়। গুলফাত বলছে, হাসিনা ছাড়া আর কারও নেতৃত্বে কোনো আওয়ামীলীগ আমরা মানি না।
ঘোড়ারা অস্থির হয়ে ওঠে, মেজর ঝুনঝুনি, আমরা এখন আসি; আপনার সঙ্গে ধরা পড়লে আমও যাবে ছালাও যাবে।
পাঠকের মন্তব্য