বহু প্রতিক্ষার পর অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখবেন তারকা ফুটবলার হামজা চৌধুরী। দেশের আপামর জনসাধারণের উত্তেজনা আকাশচুম্বী, সেটা চুম্বকের মতো টানছে হামজাকেও। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে উঠতে গিয়েই সেটা তিনি টের পেলেন। উত্তেজিত জনতার কেউ একজন ভালোবেসে তাকে ধরতে গিয়ে জামা ধরে ফেলল। কবি কী সাধেই গেয়েছিলেন, ছুঁতে গিয়েও যেন হাতের নাগলে না পাই। এভাবে ছিঁড়ে যায়, যেই ফিরে তাকায়, কেমন যেন হালকা ছেঁড়া সব, হামজা মনে মনে ভাবে।
বাড়িতে ফিরে দেখে আত্মীয়-স্বজনের বিরাট জটলা। হামজা তো বেজায় খুশি। দ্যাখ দ্যাখ পক্ষীর বাসা—ভিড়ের মধ্যে থেকে কে একজন বলে উঠল। হামজা দেশীয় পাখির বাসা দেখার জন্য এদিক ওদিক তাকিয়েও কিছু দেখল না। প্রাথমিক আপ্যায়ন শেষে গল্প-গুজবের ফাঁকে এক মুরুব্বি চাচা হামজাকে আস্তে করে ডেকে একটু সাইডে নিয়ে গেলেন। কানের কাছে গলা নামিয়ে বললেন, বাবা, কত বছর কাটো না?
:কী আঙ্কেল?
তোমার মাথার চুল।
আই মিন, আআআ...
বাবা, এমন পাখির বাসার মতো চুল নিয়া বাইরে বেশি সময় থাকলে পাখি পায়খানা করে দিতে পারে।
হামজা হাঁ করে তাকিয়ে আছে, চাচার কথা শুনতে আশেপাশে দু তিনজন উৎসুক উঠতি ছেলেমেয়েও ছিল। তাদের একজন বলল, কাকা, উনি বাংলাটা মনে হয় ধরতে পারে নাই। চাচা সেইড, বার্ড উইল লিভ শিট অন ইউর হেড।
বাবা তুমি ওদের কথায় কান দিও না, আমার পরিচিত এক সেলুনের দোকান আছে, তোমারে আমি বিনা পয়সায় চুল কাটায় দেব। আর্মি ছাঁট খুব ভালো, আমার পছন্দও, ওইটা দিয়া দিলে চুল বড় হইতেও সময় লাগবে, বারবার সেলুনে যাওয়া লাগবে না। আর বাবা শেভও মনে হয় ঠিকমতো করো না।
পাশে আরও দুই তিনজন মুরুব্বি চাচা-চাচি চলে এসেছেন।
২য়: হ, হ, বাবা বিদেশে মনে হয় ভালো সেলুন নাই? টিভিতে খেলোয়ারগো চুলের যা অবস্থা দেখি... যা-তা
৩য়: আক্কাসের মতো হাত কী আর বিদেশে পাওয়া যায়?
১ম: ওকে আমার ভাইস্তার সেলুনে নিয়া যামু, আগেই কথা ফাইনাল হইয়া গেছে।
চাচী- বাবাজী, তোমার বেতন কত দেয়?
৩য়- লাখ লাখ টাকা বেতন পায়, তাইনা বাবা?আচ্ছা বউমা নী বাবা নিয়ে নাকি আইযে পাস?
চাচি: বাবাজি, তোমার বেতন কত দেয়?
৩য়: লাখ লাখ টাকা বেতন পায়, তাই না বাবা? আচ্ছা, বউমা কী বাবা বিএ নাকি আই-এ পাশ?
চাচি: বউটাও একটু খেয়াল করে না, নইলে কী আর চুলের এই দশা হয়? অবশ্য তারও বা কী দোষ, বিদেশে বড় হইছে...
১ম: বাবা, একটু উপরের দিকে খেয়াল রাইখ, কাঁক বইসা আছে। যেকোনো সময় ইয়ে করে দিতে পারে! সেলুনে কি আজ বিকেলে ফাইনাল করব? আমাদের বাড়ির নামকরা ছেলে যাবে, একটা ব্যাপার আছে না?
২য়: গেরামে বাবা খেলা ছাড়া বেশি সমায় হাঁটুর ওপর প্যান্ট পরাটা ঠিক হবে না, তুমি তো দেশের অবস্থা জানো না। তোমার চাচি তোমার জন্য ভালো কয়েকটা সুতি লুঙ্গি বানাই রাখছে।
চাচি: উপরে নকশী কাজ যে করছি তা কও...
হামজার মাথা কেমন হালকা লাগছে, কিঞ্চিৎ ঘুরে উঠল নাকি? সামনে তাকিয়ে দেখে আরও কিছু ময়-মুরুব্বিরা আসছে....
পাঠকের মন্তব্য