প্রেমের টানে টেনে এনেছিলেন উজবেকিস্তানের উরফি মালাইকা ম্যাডিসনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঙ্কু ছেলে জাভেদ ওমর ডালিম। বিয়ে করে মালাইকার নাম বদলে রাখেন মালেকা। দেশীয় নানান সংস্কৃতি,খাবার, ঐতিহ্যের সাথে খাপ খাওয়াতে শুরু করে মালেকা।
বিপদ বাঁধলো এক সপ্তাহ পরে। জাভেদ, মালেকা আর ওদের এক বয়স্ক চাচি গেলেন বেড়াতে। পথে চাচি হঠাৎ জানালেন তার প্রস্রাব পেয়েছে, আশেপাশে কোথায় যাওয়া যায়?
মালেকা সাথে সাথে রাস্তার পাশের ঘাস দেখিয়ে সেখানে বসতে বলল। চাচি ২০০ ভোল্ট শক খাওয়ার মতো তাকালেন, তাকাল জাভেদও। জাভেদের চোখে আতঙ্ক।
কিন্তু মালেকা নির্বিকার।
ওদের আশ্চর্য হবার পেছনের যৌক্তিকতাও সে বুঝতে পারছে না।
হোয়াট!
জাভেদ, তুমিই তো সেদিন রাস্তার পাশে, ইনফ্যাক্ট এই ঘাসের পাশেই তো হিসু করলে, অনেককেই তো দেখি করতে। চাচী করলে কী প্রবলেম? তোমাদের দেশের এই দেশব্যাপী বাথরুম ব্যাপারটা জোশ ইউ নো! আই উইশ আমাদেরও এমন থাকত! আমিও ভেবেছি কয়েকবার যে রাস্তায় এমন দারুণ একটা সুবিধা থাকতে শুধু শুধুই দশ টাকা দিয়ে কেউ পাবলিক টয়লেটে কেন যাবে!
চাচি হাঁ করে তাকিয়ে আছেন, তার হাত পা কাঁপছে!
ও জাভেদ, কারে লইয়াইছস? কয় কী ও! আমারে রাস্তার পাশে...ইয়া মাবুদ!
জাভেদ মাটির দিকে তাকিয়ে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
একদিন পাশের বাসার খালা এসে জাভেদকে ফিসফিস করে জানায়, ছ্যাঃ ছ্যাঃ! তোর বউ বিড়ি খায়?
জাভেদ ব্যাপারটা জানলেও খালার সামনে অবাক হয়ে প্রথমবার শোনার মতো বিস্মিত হলো।
খালা মুখ বাঁকিয়ে আরও অনেক কথা শোনালেন যার সারমর্ম হলো, এমন মেয়েকে কী করে পারল জাভেদ বউ করে আনতে!
মালেকা কথাটা শুনে ফেলল। একটু মুখ ফুলিয়েই নালিশের সুরে বলল, খালা আপনি জাভেদকে ভালোই বাসেন না। শুধু আমাকেই বাসেন। তা না হলে জাভেদ কে তো কখনও সিগারেট খাওয়া নিয়ে কিছু বলেননি। আমাকেই বলছেন। সিগারেট খেলে সবারই ক্ষতি হয়। খালা আমায় এত ভালোবাসেন—বলে খালাকে জড়িয়ে ধরলে খালা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে দ্রুত প্রস্থান করেন। জাভেদ পড়েছে মহা মুসিবতে। এদিকে মালেকা নিজের জন্য যা করে জাভেদের জন্যও তাই করে। তার দেশে এটা নাকি ঐতিহ্য। স্কার্ফ নিজের জন্য কিনলে জাভেদের জন্যও কিনে। সেদিন মালেকা নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, কখনও ভাবিনি এত কেয়ারিং শ্বশুরবাড়ি পাব। আমার স্বামীকে নিয়ে কারোর কোনো চিন্তাই নেই। সব চিন্তা আমায় নিয়ে। এটা করো না, ওটা করো না, এভাবে করো না, ওভাবে করো না! মাঝেমাঝেই ঐ গানটা গুণগুণ করতে ইচ্ছে হয়, উহু করো না, আহা করো না এত ভালোবাসা, ফিলিং ব্লেসড! সন্ধ্যা হয় হুজুরের কাছে রিংকি-পিংকির সাথে মালেকাও নিয়ম করে পড়া শুরু করেছে। মেয়েদুটো ফিসফিস করে মালেকাকে জিজ্ঞাসা করল, তোমারে হাত দিছে? মালেকা ঠিক বুঝল না। হাত দেওয়া মানে কী হতে পারে!
হুজুর সেদিন পড়িয়ে চলে যাবার পর রাতে জাভেদকে ডেকে মালেকা বলে, জাভেদ ইউ নো, তুমি আমায় মিথ্যে কথা বলেছ!
জাভেদ অবাক হলো, কী মিথ্যে?
তুমি বলেছ তোমার দেশে নাকি কালচারটা একটু লাজুক টাইপের, এই ওড়না, স্কার্ফ পড়া, ছেলে-মেয়ে সাধারণ ভদ্রতা রক্ষা করা...আই লাইক দ্যাট।
হ্যাঁ, কিন্তু এখানে মিথ্যে কী বললাম?
হুজুর তো আমার টিচার তাই না?
অবশ্যই।
সে আমার হাত ধরে আজ অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করেছে, বলেছে এত ফর্সা হাত নাকি রিংকি-পিংকিরও না। দ্যাট টাচ ওয়াজ নট ইউজুয়াল ইউ নো!
জাভেদ মালেকার দিকে না তাকিয়ে ওর রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে রিংকি-পিংকির ঘরে গেল। ওরা জাভেদের ভাইয়ের মেয়ে। ছোটো মেয়েদুটো প্রথমে কিছু বলতে চাইল না। অনেক কষ্টে ওদের কাছ থেকে সত্যিটা জানা গেল। হুজুর প্রায়ই ওদের শরীরে বাজেভাবে নানান জায়গা স্পর্শ করে। শুধু ওদেরই না, ওদের ছোটো ভাইটা পাশে খেলে, ভাইটাকেও সে নানাভাবে... হুজুরের লাঠির ভয়ে ওরা কেউ কিছু বলে না। কারণ আব্বা হুজুরকে কড়াভাবে শাসন করতে বলেছে যেহেতু ওরা পড়ায় ফাঁকি দেয়। এই কথা মালেকা ছাড়া আর কারোর কাছে গোপন থাকল না। পরদিন আর হুজুরকে না দেখে মালেকা জিজ্ঞাসা করল, হোয়ার ইজ দ্যাট টাচিং টিচার? জাভেদ মুখ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল, লম্বা ছুটিতে গেছে টু হ্যা আ রিল্যাক্স!
বিকেলে জাভেদের চাচাতো-মামাতো ভাইয়েরা বেড়াতে আসলো। মালেকার সৌন্দর্য্য নিয়ে তারা বেশ আপ্লুত। সন্ধ্যায় রান্নাঘরে মালেকা একা কিছু একটা করছিল। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে মালেকা টের পায় জাভেদ তাকে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরই ছেড়ে দিয়ে কিছু না বলেই চলে গেল, জাভেদ তো সাধারণত এমন করে না। রাতে জাভেদ তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়ল, অনেক বলে কয়েও সে ঐ রাতে বাড়ি ফিরতে পারল না। এদিকে পরদিন নারী দিবস, মালেকা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নারী এটা সে বিশেষভাবে উদযাপন করতে চায়। মালেকা সে রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কিছু অস্বস্তিবোধ করে। আধোঘুমে অন্ধকারে বুঝতে পারে রুমে সে একা নয়, যে বা যারা আছে তাদের মধ্যে জাভেদ নেই। পশ্চিমা সংস্কৃতি লালন করে আসা মালেকা ধরে নেয় ঘরে চোর ঢুকেছে। চিৎকার দিতে যাবে এমন সময়েই কয়েকটা হাত ওকে চেপে ধরে।
পরদিন খুব ভোরে জাভেদ বাড়ি ফিরে দেখে মালেকা খুব খুশি মনে ওর দিকে প্রায় ছুটে এল। ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বলল, জানো গত রাতে কী হয়েছে?
কী?
গতরাতে তোমার ভাইয়েরা আমার রুমে ঢুকেছিল।
কী?
হ্যাঁ! ওরা আমার মুখ চেপে ধরেছিল কোনো কারণ ছাড়াই!
জাভেদের আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না।
আমি ওদেরকে জিজ্ঞাসা করব কেন এসেছে, কী চায়! তাই উপায় না পেয়ে গ্রিপ ব্রেক করে হাত ছাড়িয়ে ফেললাম। কিন্তু ওদের ন্যুড দেখে আমার মাথায় সেই বিজনেস আইডিয়াটা আসলো। তুমি তো জানোই একটুর জন্য আমার কারাতের ব্ল্যাক বেল্টটা মিস হয়। ওদের আমি স্কার্ফ দিয়ে দ্রুত বেঁধে ছবি তুলে ডার্কসাইটে সেল পোস্ট দিয়ে দিয়েছি। সাইট টা রিসেলেবল। ওরা নিজেদের বারবার সেল করতে পারবে চাইলে। তুমি রাগ করোনি তো? ওরা যথেষ্ট ট্যালেন্টেড বলে আমার মনে হলো!
জাভেদ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হেসে উঠে বলল, হ্যাপি ওমেন্স ডে।
পাঠকের মন্তব্য