উপদেষ্টা হতে চান ভিঞ্চি ও আইনস্টাইন

১৫২ পঠিত ... ১৭:০৯, নভেম্বর ১৩, ২০২৪

13

বাংলাদেশে রেড রেভোল্যুশনের কথা শুনে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ফোন করেন আইনস্টাইনকে, আইনদা চলুন বাংলাদেশটা একটু ঘুরে দেখে আসি।

আইনস্টাইন রাজি হয়ে যান। এক অনাবাসী বাংলাদেশি তাদের পরামর্শ দেয়, ড. ইউনূসরে জানাইয়া প্রটোকল নিয়া যান। ভি আই পি গেট দিয়া ঢুকবেন। ফট কইরা ইমিগ্রেশন হইয়া যাইব। আর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে উঠবেন। গাড়ি নিয়া নিবেন সরকারি পুল থিকা। নাইলে কিন্তু বেইল নাই।

ভিঞ্চি বলেন, না না, এসব ঝামেলায় যেতে পারব না। টুরিস্ট হিসেবে ঘুরে ফিরে চলে আসব।

হোটেল সোনারগাঁর একটা রুম বুক করতে গিয়ে আইনস্টাইন লক্ষ্য করেন ভাড়া অনেক বেশি। তাই দার্শনিক লাকাকে ফোন করেন, ভাই লাকা তোমার বন্ধু সলিমুল্লাহ খানকে বলে ঢাকায় কম খরচে একটা হোটেল বুকিং করে দাও। লাকা ঢাকায় ফোন করতেই সলিমুল্লাহ খান বলেন, ওনাদের চলে আসতে বলুন। ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে।

ঢাকা বিমানবন্দরে নামলে ড. খান তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক টিএসসিতে ভিঞ্চি ও স্টাইনের জন্য একটা রিসিপশনের ব্যবস্থা করে। বিধিবাম। ক্যাম্পাসে আইমান সাদেকের টেন মিনিটস স্কুলের একটা স্টার্ট আপ বিষয়ক অনুষ্ঠান থাকায় ভিঞ্চি ও আইনস্টাইনের রিসিপশনে লোক তেমন হয় না।

অল্প কিছু দর্শকের উপস্থিতিতে রিসিপশনে ডেইলি স্টারের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে, আইনস্টাইন আপনি ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হবার অফার ফিরিয়ে দিলেন কেন!

: কারণ আমি আমার ল্যাবরেটরিতে যে কাজটা করি সেটা নেতানিয়াহুর প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরির কাজের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দদায়ক ও মানবিক।

অনুষ্ঠানের মডারেটর ড. সলিমুল্লাহ খান দর্শকদের অনুরোধ করেন, প্লিজ পদ পদবী নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। ওনাদের সমাজে এসব ব্যাপার এত গুরুত্বপূর্ণ নয়।

একজন ব্যবসায়ী আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করে, বাংলাদেশে কোনো স্টার্টআপের পরিকল্পনা কি আপনাদের রয়েছে!

ভিঞ্চি জিজ্ঞেস করেন, স্টার্ট আপ কী!

দর্শকের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, অনেক নাম শুইনা আসছিলাম, অহন দেখতেছি লোকটা কিছুই জানে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ভিঞ্চিকে জিজ্ঞেস করে, আপনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানলাম আপনি ইটালির এয়ারফোর্সের জন্য এয়ারক্রাফটের ডিজাইন করেছিলেন। আর্মি লবি ইউজ কইরা মন্ত্রী টন্ত্রী হইলে তো পারতেন!

ড. সলিমুল্লাহ খান হেসে বলেন, মোনালিসা নিয়ে প্রশ্ন করেন।

এক তরুণ আর্টিস্ট জিজ্ঞেস করে, মোনালিসা এঁকে আপনি কত পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন!

ভিঞ্চি বলেন, তা তো মনে নেই; আমি ছবি আঁকার জন্য পারিশ্রমিক নিয়েছি। কিন্তু সেটা গৌণ ছিল আমার কাছে।

ট্যাবলয়েডের এক সাংবাদিক হেসে বলে, মোনালিসার সঙ্গে আপনার প্রেমের গুঞ্জন আছে; তাই হয়তো পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ হয়নি।

ভিঞ্চি উত্তর দেন, আমাদেরও তল্লাটে জন্মালে তুমি পাপারাজ্জি হতে বাপু।

ললিতা আপা উঠে দাঁড়িয়ে কাব্যিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে, আপনারা কি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেট্রোরেলে চড়েছেন!

শিবব্রতদাদা বলে, পদ্মা সেতুটা কিন্তু দেখতেই হবে আপনাদের।

সহমত ভাই চুক চুক করে বলে, এমন এক সময় এলেন আপনারা; যখন দেশটা মৌলবাদির খপ্পরে।

আইনস্টাইন বলেন, আমার তো আপনার বক্তব্যটাকেই যথেষ্ট মৌলবাদী মনে হচ্ছে।

কয়েকটি তরুণ সহমত ভাইকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যেতে চাইলে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ওকে ওর অভিমত প্রকাশ করতে দিন। হোক তা দলাভিমত।

প্রথম আলোর সাংবাদিক আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করে, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আপনার দেখা হবার স্মৃতিচারণ করুন।

: রবীন্দ্রনাথ আমাকে বলেছিলেন, শাহজাদপুরে গেলে লোকজন শুধু ক্ষুদ্র ঋণ চাইত, আর কলকাতায় থাকলে লোকে শুধু নিন্দামন্দ করত। বড় কষ্ট পেয়েছে লোকটা। আমাকেও নাতসিরা বড্ড বিরক্ত করত। আমাদের দুজনের অভিজ্ঞতা মোটামুটি একই রকম।

এক ট্রেন্ডি তরুণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, আপনি না এসে ওপেনহাইমার এলে তাকে দিয়ে একটি পারমানবিক বোমা বানিয়ে নিতাম।

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, অনেক হয়েছে আজ। সবাইকে ধন্যবাদ যারা প্রশ্ন করেছেন।

অনুষ্ঠান শেষ করে অতিথিদের টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সা-সপ-সমুসা খেতে খেতে এক বিজ্ঞানী এসে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করেন, ইউনূস সাহেব কি আপনাকে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হতে ডেকেছেন; নইলে এসময়ে আপনি বাংলাদেশে কেন!

আইনস্টাইন হাসতে হাসতে একটা চেয়ারে বসে পড়েন। একজন চিত্রকর গিয়ে ভিঞ্চিকে আক্ষেপ করে বলে, আর দুইদিন আগে এলে আপনি সংস্কৃতি উপদেষ্টার পদটা পেতে পারতেন। এখন কী হবেন, চারুকলা অনুষদের ডিন নাকি জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক। আপনার সিভিটা দিয়েন। আসিফ নজরুল আর নাহিদের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। উনারা আমার সুপারিশ ফেলতে পারবে না।

হঠাৎ একটা থ্রি পিস স্যুট পরা লোক ক্যাফেটেরিয়ায় উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, উনাদের নিয়ে এত মাতামাতি ক্যান! উনারা কি পোস্টে আছেন? আপনারা শিগগিরই আইমান সাদিকের প্রোগ্রামে আসেন, ঐখানে বানিজ্য উপদেষ্টা আইসা উপস্থিত হইছেন।

 

১৫২ পঠিত ... ১৭:০৯, নভেম্বর ১৩, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top