দেশ-বিদেশের দম্পতিদের অদ্ভূত সব বিচ্ছেদ-বিভ্রাট

৩৭০০ পঠিত ... ১৫:৫০, আগস্ট ৩০, ২০২১

ল’ইয়ার ডট কমের হিসেবে, সারা বিশ্বে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২৭৭টি ডিভোর্স ফাইল করা হয়। বিচ্ছেদ আদতে বেশ বেদনাদায়ক হলেও কিছু কিছু বিচ্ছেদের কেস লড়তে গিয়ে আইনজীবীদের সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন উদ্ভট পরিস্থিতির। অদ্ভুতুড়ে কারণে বিচ্ছেদ কিংবা সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিব্রতকর কেচ্ছা- অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বাদ যায়নি এদের কোনটিই। আমেরিকায় ঘটে যাওয়া সেরকম কিছু হাস্যকর বিচ্ছেদের গল্প নিয়েই এই আর্টিকেল। 

Bicched-bivrat

 

শ্বাশুড়ির যন্ত্রণায় বিচ্ছেদ!

স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত সময়ে শ্বাশুড়ির নাক গলিয়ে দেওয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হরহামেশা দেখা গেলেও আমেরিকায় এমন বিষয় বেশ অপরিচিত। তাই আমেরিকান এক ভদ্রমহিলা এশিয়ান এক ভদ্রলোককে বিয়ে করে বেশ বিপাকেই পড়ে যান। এশিয়ান শ্বাশুড়ি নিজের চল্লিশ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়মিত গোসল করিয়ে পাউডার মেখে দিতেন, এমনকি ওই দম্পতি বেডরুমের দরজা বন্ধ করে কাটানো ব্যক্তিগত মুহূর্তেও এসেও হানা দিতেন শ্বাশুড়ি, বারবার দরজা ধাক্কাধাক্কি করে জানতে চাইতেন তারা দরজা বন্ধ করে কী করছে! 

শ্বাশুড়ির দরজা ধাক্কানোতে অতীষ্ঠ হয়ে ভদ্রমহিলা শেষ পর্যন্ত আদালতে ডিভোর্স ফাইল করতে বাধ্য হন। 

 

বিধি তুমি বলে দাও আমি কার
একটি সন্তান, নেই কোন দাবিদার! 

এক দম্পতি বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। সাধারণত বিচ্ছেদের পর সন্তান বাবার সাথে থাকবে নাকি মায়ের সাথে-- তা নিয়ে মারামারি লেগে গেলেও এক্ষেত্রে ঘটনা হয়েছে উলটো। একমাত্র সন্তানকে বাবা-মায়ের কেউই নিজের কাছে রাখতে চান না। কারণ, তাদের সন্তানের নাম “স্নুপি ফ্রগ”! 

 

টিয়াপাখির অভিশাপ

স্বামী বেশ কিছুদিন ধরেই ডিভোর্সের পরিকল্পনা করছেন। তবে এই পরিকল্পনা ঠিক স্বাভাবিক পরিকল্পনার মতো নয়। স্বামী বহুদিন ধরে একটা টিয়াপাখিকে পেলেপুষে বড় করে তাকে বেশ কিছু গালিগালাজ শিখিয়ে দিয়েছেন, যাতে সম্পর্কছেদের পর টিয়াপাখি তার প্রাক্তন স্ত্রীকে গালিগালাজ শুনিয়ে বিরক্ত করতে পারে। 

বিধিবাম, বিচ্ছেদের পর আদালতের রায়ে স্ত্রীর বদলে পাখিটির কাস্টডি পেয়েছেন স্বামী নিজেই!

 

গেম খেলা বারণ... কারণে অকারণ

এক ভদ্রমহিলা বিচ্ছেদের পর তার প্রাক্তন স্বামীর নামে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। স্বামীর অপরাধ, তিনি তাদের ছেলের সাথে অনলাইনে মাইনক্রাফট খেলতেন, যা কিনা সন্তানের কাস্টডির কন্ট্রাক্টে লেখা নেই! 

 

divorce (2)

 

ভাষাবিভ্রাট

এক দোভাষী ভদ্রলোক বিয়ে করেছেন ত্রিভাষী এক ভদ্রমহিলাকে। স্বামী স্ত্রী দুজনই স্প্যানিশ আর ইংরেজিতে কথা বলেন, স্ত্রী আর তার পরিবার আবার এই দুটোর পাশাপাশি ফ্রেঞ্চও বলেন। স্বামী একসময় খেয়াল করলেন, স্ত্রীর পরিবারের কেউ তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলেই স্ত্রী মেহমানদের সাথে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলা শুরু করেন যার বিন্দুবিসর্গও স্বামী বেচারা বোঝেননা। শেষমেষ নিরুপায় হয়ে একদিন তিনি স্ত্রী আর তার পরিবারের ফ্রেঞ্চ ভাষার আলাপ রেকর্ড করে সেটা অনুবাদ করিয়ে নিলেন। জানতে পারলেন, স্ত্রী তার সাথে সংসার করতে করতে বিরক্ত, তাই বাপের বাড়ির কাউকে পেলেই তিনি ফ্রেঞ্চ ভাষায় স্বামীর নামে গালাগাল জুড়ে দেন। অগত্যা আর কী, মনোক্ষুণ্ণ, অপমানিত, হতাশ স্বামী ডিভোর্সের আবেদন নিয়ে দৌড়লেন আদালতে!

 

তুমি আমি আর বিড়াল
আমাদের বিড়াল!

এক দম্পতির বিচ্ছেদের কারণ হলো তাদের আদরের সাদা বিড়াল। স্ত্রীর আবদার, তিনি বিড়ালের নাম দেবেন স্নোবল আর তাকে কেবল মুরগিই খাওয়াবেন। সেটা আবার স্বামীর পছন্দ না। তিনি বিড়ালকে লিলি বলেই ডাকবেন আর তাকে ক্যাটফুড ছাড়া আর কিছু খেতে দেবেন না। এই নিয়ে ঘরের ঝগড়াঝাঁটি পার করে তারা গেলেন আদালতে, এক বছর ধরে মামলা চললো বিড়ালের কাস্টডি কে পাবেন তা নিয়ে। 

আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাদের বাড়িতে আরো তিনটি প্রানী ছিলো। প্রানী তিনটি তাদের পনেরো বছর, ছয় বছর আর এক বছর বয়সী তিন শিশু সন্তান, যাদের কাস্টডি নিয়ে দুজনের কেউ মাথাই ঘামাননি!


কাঁটাচামচের কাটাকাটি

ষাটোর্ধ্ব এক দম্পতি, বিয়ে করেছেন প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে। এখন এই বৃদ্ধকালে এসে ডিভোর্স চাইছেন, সম্পত্তি ভাগাভাগিও হয়ে গিয়েছে। ঝামেলা লেগেছে এক কাঁটাচামচ সেট নিয়ে। স্ত্রী কিছুতেই চামচের সেট হাতছাড়া করবেন না, এই সেট নাকি তার বাবার দেওয়া উপহার। অন্যদিকে স্বামীও নাছোড়বান্দা। তার দাবি, এই চামচের সেট তিনি নিজে কিনেছেন হানিমুনে গিয়ে। তাই এই চামচের সেট তার কাছেই থাকবে। অনেক অনেক জল ঘোলা করে, উকিলের পিছনে এক হাজার ডলার খরচ করে শেষ পর্যন্ত চামচের মীমাংসা হলো। 

কিন্তু মীমাংসার ঠিক তিন মাস পর ওই দম্পতি আবার পরস্পরকে বিয়ে করে ফেললেন! 

 

divorce (1)

 

পোকেমনে বাঁধা মন!

এক স্বামী ডিভোর্সের মামলা করেছেন, তার সন্দেহ তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। তদন্ত করে জানা গেল। স্ত্রী আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় প্রেম করার বদলে পোকেমন গো খেলেই কাটিয়ে দিতেন!

 

নোংরামির জ্বালা!

এক ভদ্রমহিলা স্বামীর নামে ডিভোর্সের মামলা করেছেন, 'অযৌক্তিক আচরণ' করার দায়ে। তার স্বামী প্রায়ই বাথরুম থেকে বের হয়ে প্যান্ট খুলে ফেলে রাখতেন, যেসব প্যান্টে অদ্ভুত রকমের হলুদ দাগ আর দূর্গন্ধ বের হতো। স্বামীর দাবী, এই হলুদ দাগের উৎস হলো ইস্ত্রি মেশিন, প্যান্ট ইস্ত্রি করতে গিয়েই নাকি এমন দূর্গন্ধযুক্ত হলুদ দাগ লেগেছে। 

স্বামীর এহেন যুক্তি অবশ্য ধোপে টেকেনি, কেননা স্ত্রীপক্ষের উকিলের জেরার মুখে তিনি বাধ্য হয়ে জানান, মলত্যাগের পর তিনি টয়লেট পেপার একটু কম করেই ব্যবহার করতেন, কারণ তার কখনোই মনে হয়নি তার ত্যাগকৃত বর্জ্য নরম প্রকৃতির হয়ে প্যান্ট নোংরা করে ফেলবে!

 

আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না,
ল্যাম্পের আলো তুমি কখনো আমার হবে না!

এক নবদম্পতি বিয়ের সানাই বাজতে না বাজতেই ছুটে এসেছেন ডিভোর্স নিতে। তাদের জীবনে সবই ভালো, শুধু একটাই সমস্যা, আলো। স্ত্রী আলো না জ্বেলে ঘুমাতে পারেননা, এদিকে স্বামী আবার অন্ধকার ছাড়া দুই চোখের পাতা এক করতে পারেন না। আলো নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি মারামারি সব সীমা ছাড়িয়ে একজন আরেকজনকে বাড়ি থেকে বের করে সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে। তাই খুনোখুনি হওয়ার আগেই তারা এসেছেন বিয়ের আলো নিভিয়ে দিতে। 

 

আঁধারে নয় আলোতে ভয়, 
খাদ্যগুলো শব্দময়!

স্ত্রী খাবার খাওয়ার সময় বেশ কচকচ শব্দ করে খান। স্বামী বেচারা বহুবার চেষ্টা করেছেন স্ত্রীকে শোধরানোর, শেষে বিরক্ত হয়ে আর উপায় না দেখে শরণাপন্ন হয়েছেন বিচ্ছেদের!

 

বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র পিনাট বাটার!

বেশ তিক্ত সাংসারিক জীবন শেষে এক দম্পতি ডিভোর্সের আবেদন নিয়ে আদালতে বসেছেন তাদের সম্পত্তি ভাগাভাগি করতে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ডলারের সম্পত্তির মীমাংসা হয়ে গেলেও ঝামেলা বাঁধলো তাদের বাড়ির ফ্রিজে রাখা খাবার কে নেবে তা নিয়ে। প্রচুর কাদা ছোড়াছুড়ির পর শেষ পর্যন্ত সমাধান হলো ফ্রিজ যুদ্ধের। 

বলে রাখা ভালো, ফ্রিজে খাবার বলতে ছিলো কেবল একটা আধখাওয়া পিনাট বাটারের জার!

 

তথ্যসূত্র: Boredpanda

৩৭০০ পঠিত ... ১৫:৫০, আগস্ট ৩০, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top