সাহিত্যিক আনিসুল হকের ১০টি অসাধারণ উক্তি

৩০৯১ পঠিত ... ১৬:৫১, মার্চ ০৪, ২০২১

‘আমার শৈশব মানে রংপুরে শীতভোর, কুয়াশার সাদা চাদরে মোড়া। টিনের চালে সারা রাত শিশির পড়ত, গাছের পাতা থেকে টুপটুপ করে, আমরা আসলেই শিশিরের শব্দ শুনতে পেতাম।’

প্রবন্ধ কলাম পড়তে আমার বেশ আলসেমি। কিন্তু মোবাইল স্ক্রিনের ওপর হাত নাড়াতে নাড়াতে, প্রথম আলোতে আনিসুল হকের লেখা ‘আমার না-হওয়াগুলো’ শিরোনামে ‘রংপুরে বেড়ে ওঠা কিশোর কবি থেকে আজকের আনিসুল হক হয়ে ওঠা’ সংশ্লিষ্ট এক কলামের ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করলাম। পড়তে শুরু করে পেয়ে যাচ্ছিলাম কবির চমৎকার সব উদ্ধৃতি। মনে হল, কম তো কলাম লেখেননি তিনি। তাঁর প্রবন্ধ/কলাম থেকে কিছু উদ্ধৃতি বেছে একত্র করলে তো মন্দ হয়না! সে থেকেই আনিসুল হকের প্রথম আলোতে লেখা কলাম থেকে কিছু উদ্ধৃতির সংকলনের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। 

প্রেমের কবিতা, সূক্ষ্ম খোচাত্মক রাজনৈতিক স্যাটায়ার ও হাস্যরসের লেখায় অদ্বিতীয় আনিসুল হক। ছোটবেলায় তাঁর হাসির আর প্রেমের গল্প পড়ে হাসি-আনন্দের সাথে সাথে এক ভালো লাগার অনুভূতিও হত। ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ জন্ম নেওয়া কবির বয়স আজ পড়েছে ৫৬ বছরে। একাধারে কবি, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক আনিসুল হকের জন্মদিনে তার বিভিন্ন কলাম বা প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত উদ্ধৃতি তুলে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য। 

anisul haq

১# আমি শিল্পী নই, কিন্তু ছবি–রংতুলি দেখলে হাত আপনিই ছুটে যায়; আমি লেখক নই, কিন্তু লিখতে লিখতে লিখতে আয়ু ক্ষয় করে ফেললাম, আমি কবি নই, কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোকে আকার দিতে জীবনপাত করে যেতে রাজি আছি। একটা জীবন কিছুই করলাম না, নিজের মতো করে জীবনটাই যাপন করলাম না। বড় দুঃখী একটা মানুষ আমি। আমার সেই দুঃখ আমি ভুলে যাই, যখন আমি লিখি, যখন আমি আঁকি! 

২# ‘আমি বারবার বলি, মা উপন্যাসটি আমার মাধ্যমে লিখিত হয়েছে বটে, কিন্তু এটি আসলে শহীদ আজাদ তাঁর বুকের রক্ত এবং তাঁর মা অশ্রু দিয়ে লিখেছেন। মাকে আমরা সবাই ভালোবাসি, দেশকেও ভালোবাসি। কাজেই মা যে বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় হয়ে উঠবে, এতে আমার খুব কৃতিত্ব নেই। আমি অনুরোধ করে কাউকে মা উপন্যাস অনুবাদ করতে বলেছি, তা নয়। একেকজন পড়েছেন ও মনে করেছেন, বইটি অনূদিত হওয়া উচিত, মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানো উচিত। তাঁরা তা করেছেন।’ 

৩# কাজেই এই দূষণ, এই কুয়াশা, এই মেঘ, ভূমধ্যসাগর থেকে আসা নয়, আমাদের খাসলতের মধ্য-সাগর থেকে আসা। খাসলত কখন মরে! স্বভাব যায় না ম’লে! আমরা করোনায় মরব, নিউমোনিয়ায় মরব, হাঁপানিতে মরব, শ্বাসকষ্টে মরব, তবু আমাদের স্বভাব ভালো হবে না। ভূমধ্যসাগরের মেঘ কেটে যাবে, ঢাকার আকাশ পরিষ্কার হবে না হবে না হবে না। করোনা চলে যাবে, প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সঙ্গে ঠিকই, কিন্তু রমনায় গিয়ে তারা শ্বাস নিতে পারবে না পারবে না পারবে না। 

৪# আমাদের জীবনে আমরা কলুর বলদের মতো চোখে ঠুলি পরেছি, মাড়াইয়ের গরুর মতো মুখে টোপর পরেছি, আর একই চক্রে ঘুরছি। আমরা দেখি না, আমরা খাই না। শুধু তা–ই না, আমরা বলিও না। সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, মানুষের চোখ আছে তা দেখবার জন্য শুধু নয়, কাঁদবারও জন্য। আমরা বলি, মানুষের মুখ আছে, তা কেবল খাওয়ার জন্য নয়, বলবারও জন্য। আমাদের মুখে আমরা মুখোশ পরে আছি। আমরা মুখ দেখাব না এবং আমরা কিছু বলবও না। বোবার শত্রু নেই।

৫# বলতে চাইছি, রাষ্ট্রগুলো কেবল নিজেদের স্বার্থ দেখে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সাম্য, মৈত্রী কেবল নিজের জন্য, অন্যদের জন্য নয়।

৬# আমাদের অফিস যেখানে, কারওয়ান বাজারে, একটা পরিবার সারাটা দিন, বাসের নিচে দিনের বেলাটা কাটিয়ে দেয়। দুটো শিশু বাসের নিচে ঘুমায়, খেলা করে। পাঁচটার পরে বাসটা চলে যায়, তারা উঠে আসে বহুতল অফিস ভবনের এক পাশের উঁচু বেদিতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো করে দীর্ঘশ্বাস ফেলি: আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি, তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ।

৭# আমরা একটা চক্রে পড়ে গেছি। রাষ্ট্রগুলো, ব্যবস্থাগুলো আমাদের মুক্তি দেয় না, আমাদের ক্রমাগতভাবে বন্দী করে। আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার তো দেয়ই না, বরং আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলার অধিকার, আমাদের কথা বলার অধিকার ক্রমাগতভাবে সংকুচিত করাই রাষ্ট্রের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৮# আমি শিল্পী নই, কিন্তু ছবি–রংতুলি দেখলে হাত আপনিই ছুটে যায়; আমি লেখক নই, কিন্তু লিখতে লিখতে লিখতে আয়ু ক্ষয় করে ফেললাম, আমি কবি নই, কিন্তু আমার স্বপ্নগুলোকে আকার দিতে জীবনপাত করে যেতে রাজি আছি। একটা জীবন কিছুই করলাম না, নিজের মতো করে জীবনটাই যাপন করলাম না। বড় দুঃখী একটা মানুষ আমি। আমার সেই দুঃখ আমি ভুলে যাই, যখন আমি লিখি, যখন আমি আঁকি! 

৯# মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মায়, কিন্তু সবখানেই সে শিকলে বাঁধা। আমাদের দেহই তো একটা কারাগার। নারী–পুরুষ বা তৃতীয় লিঙ্গ, বাঙালি–অবাঙালি, প্রতিবন্ধী–চৌকস, বুদ্ধিমান–বুদ্ধিকম, একালের–সেকালের কত রকমের শিকলে যে আমরা বাঁধা।

১০# আমরা এই ক্ষমতাকাঠামো এবং মূল্যবোধের কাঠামোর বাইরে যেতে পারি না। কেউ যদি যায়, তাহলে তাকে মানসিক হাসপাতালে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, না হলে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কাজেই মানুষের মুক্তি নেই।

৩০৯১ পঠিত ... ১৬:৫১, মার্চ ০৪, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top