১৯৫৮ সাল। চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মাও সেতুং এক অধ্যাদেশ জারি করলেন— কীট ও পাখি হত্যার অধ্যাদেশ। সমগ্র চীন থেকে ইঁদুর, মাছি, মশা এবং চড়ুই বিনাশ করার নির্দেশ দেয়া হলো— প্লেগ রোগের কারণ হলো ইঁদুর, ম্যালেরিয়ার কারণ হলো মশা। মাছি রোগ ছড়ায় আর চড়ুই খাদ্য-শস্য ধ্বংস করে। চীন দেশে মাও সেতুং যা বলে তাই হয়। তার কথা অমান্য করার কোন জো নেই! সুতরাং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হলো।
সমগ্র দেশে চড়ুই হত্যা শুরু হলো। প্রচার মাধ্যমে চড়ুই হত্যার কথা প্রচার করা হলো। পোস্টার ছাপানো হলো। মানুষ যেখানে চড়ুই পায়, সেখানেই মারে। সাথে অন্যান্য পাখিও মারা পড়ে। চড়ুইর ডিম, বাসা, বাচ্চা কিছুই বাদ যায় না। সমগ্র চীন হয়ে উঠে পাখি হত্যার দেশ। চীনের আকাশে পাখিদের আকাল দেখা দেয়।
১৯৬০ সালে এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এক বিজ্ঞানী। তার নাম জুসিন চেং (Tso-hsin Cheng)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত পক্ষিবিদ (Ornithologist)। মাও সেতুঙের নির্দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুক্তি দেয়ার মতো জ্ঞান তার ছিলো। এবং শেষ পর্যন্ত তার প্রভাবে, চীন জুড়ে চড়ুই হত্যা বন্ধ করা হয়।
কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা ইতোমধ্যেই হয়ে গিয়েছিলো।
খাদ্য-শস্য ধ্বংস করে বলে যে চড়ুই হত্যা করা হয়েছিলো, সে চড়ুই পাখি কমে যাওয়ায়, উৎপাত বেড়েছিলো অন্যান্য পোকামাকড়ের। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলো পঙ্গপাল (ঘাস ফড়িং)। পঙ্গপালের উৎপাতে সমগ্র চীনে খাদ্য-শস্যের উৎপাদন ভায়বহভাবে হ্রাস পায়। চীনে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ! ১৯৫৯-৬১ সালের সেই দুর্ভিক্ষ চীনের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এবং গ্রেইট চাইনিজ ফেমিন নাম পরিচিত। সেই দুর্ভিক্ষে কয়েক কোটি মানুষ মারা যায়।
আমাদের প্রকৃতি এক অসম্ভব সুন্দরভাবে হারমোনাইজড ও সিনক্রোনাইজড। এখানে একের সাথে অন্যের সম্পৃক্ততা নিবিড়। এটাকে আমরা বলি বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেম। এই ইকোসিস্টেম যদি ভারসাম্য হারায় তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। চীনের এই ঘটনা এক অনন্য উদাহরণ!
মাও সেতুং আধুনিক চীনের স্থপতি। তিনি চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু তার এই অদূরদর্শী কাজকে অনেকেই তার রাজনৈতিক জীবনের এক ভয়াবহ সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। মাও সেতুং পরবর্তীতে রাশিয়া থেকে চড়ুই পাখি আমদানি করেছিলেন। পাখি জিনিসটাকে সম্ভবত মাও সেতুং আমৃত্যু খুব সমীহ করেছিলেন। কারণ চড়ুই পাখির হত্যাযজ্ঞ যে এমন ভয়াবহ বিপদ আনতে পারে— তিনি কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন?
প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন!
লেখা: রাউফুল আলম
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন