[হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মদিন উপলক্ষে এবার (১৩ নভেম্বর, ২০১৭) গুগল বাংলাদেশ ডুডল প্রকাশ করেছে হুমায়ূন আহমেদ ও তার সৃষ্ট চরিত্র হিমুকে নিয়ে। কীভাবে এই চমৎকার ব্যাপারটি ঘটলো সেই গল্প জানাচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।]
২০/২১ দিন আগে অভিনেত্রী তনিমা হামিদ এর ফোন। গুগল বাংলাদেশ থেকে নাকি আমার ফোন নম্বর চাওয়া হয়েছে, তিনি নম্বর দেবার অনুমতি চাইছেন। আমি অবাক হলাম। আমাকে গুগলের হঠাৎ কী প্রয়োজন পড়ল! জবাবে তনিমা যা বললেন, আমি তো অভিভূত। তাড়াতাড়ি গুগলকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বললাম।
এরপর শুরু হলো আমার অপেক্ষার পালা। গুগল বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আর ফোন করেন না। আমি অস্থির হয়ে গেলাম। ১৫ মিনিটকে ১৫ ঘন্টার মতো মনে হল। আমার মনে হওয়া ১৬তম ঘন্টা পর (আদতে মাত্র ১৬ মিনিট) গুগল বাংলাদেশের তরফ থেকে ফোন দিলেন হাশমি রাফসানজানি। তিনি জানালেন google.bd.com এ বছর পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস ছাড়াও প্রথমবারের মত বাংলাদেশের একজন লেখককে নিয়ে ডুডল করবে এবং এক্ষেত্রে তাঁদের একমাত্র পছন্দ হুমায়ূন আহমেদ। কিঞ্চিত অস্বস্তি নিয়ে তিনি জানতে চাইলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি আছে কিনা!
আমি হেসে ফেললাম। হুমায়ূনকে সম্মান জানানোতে আপত্তি! তাও কি সম্ভব!
তড়িঘড়ি করে অনুমতিপত্র আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজে সই করে সুখবরটা সবাইকে দেবার জন্য যখন আমার মন আকুপাকু করছে, তখন শুনি এক মহাদু:সংবাদ। এই খবর নাকি ১৩ নভেম্বর প্রথম প্রহর মানে রাত ১২.০১ মিনিট এর আগে কাউকে জানানো যাবে না।
মন খারাপ করে ঘুরঘুর করি আমি। কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে খবরটা। দখিন হাওয়ার বারান্দায় বসে আমি আকাশের কালো মেঘগুলোকে জানাই, পাশের ছাদের রেলিংয়ে বসা কর্কশ স্বরে 'কা কা' করা কাকটাকে জানাই, আমার বারান্দায় রাখা অযত্নে ফোটা অর্কিডের ফুলটাকে জানাই, নিষাদ-নিনিতের বিরক্ত মুখভঙ্গীর পোষা কচ্ছপ ভাতৃদ্বয় হাম্পটি-ডাম্পটিদের জানাই, আমি ফিসফিস করে আমার হুমায়ূনকে জানাই, আমি নীরব চিৎকারে পুরো বিশ্বকে জানাই—"আমাদের এক কিংবদন্তী ছিলেন, আমাদের এক কিংবদন্তী আছেন। আমাদের হুমায়ূনকে কেউ ভালোবেসে সম্মান দিলে আমরা তাঁকে মাথায় তুলে রাখি, আমাদের হুমায়ূনকে কেউ বিকৃত করলে আমরা তাকে ছুড়ে ফেলি, আমরা হুমায়ূনকে ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি!”
পাঠকের মন্তব্য