ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার কাছে প্রশ্ন ও একটি পরামর্শ

৪৬১ পঠিত ... ১৬:৩৫, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

১৭ নভেম্বর, ২০২৫। সেদিন সকালে একদল মানুষকে বুলডোজার নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির দিকে রওনা হতে দেখা যায়, তাদের লক্ষ্য ছিল ভাঙচুর করা, বিশৃঙ্খলা তৈরি করা–অর্থাৎ 'মব' তৈরি করা।

শুরু থেকেই এই 'মব'কে উস্কানি দিচ্ছিলেন ফ্রান্সপ্রবাসী 'মবমাস্টার' পিনাকি ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামিও সামাজিক মাধ্যমে ৩২ নম্বর  বাড়িটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য এই মবকে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন, যদিও পরে তিনি তার সেই পোস্টটি মুছে ফেলেন। এই উস্কানিমূলক রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি হওয়ার পরেই মাঠে নেমেছিলেন ডাকসু নেত্রী রাফিয়া।

সরকারি, বেসরকারি কিংবা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাঙচুর করা অধিকার নয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে যখন এই মবজনতা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল, ঠিক তখনই সেখানে হাজির হন ডাকসু নেত্রী রাফিয়া। তার মূল লক্ষ্য ছিল পুলিশকে বাধা দেওয়া, যেন এই ভাঙচুরপ্রিয় জনতাকে কোনো আঘাত না করা হয় এবং তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হন, শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়।

আমার প্রশ্ন, এই জনতাকে কি রাফিয়া 'মব' হিসেবে স্বীকার করেন? সম্ভবত তিনি করবেন না। কিন্তু তিনি স্বীকার না করলেও এটি একটি মব। কারণ এই জনতা কোনো দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বা প্রতিবাদ করতে যায়নি। তারা সেখানে গিয়েছিল আরেকজনের সম্পত্তি ভাঙচুর করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। আর ভাঙচুর করা একটি অবৈধ ও অন্যায় কাজ। সেটি শেখ মুজিবের বাড়ি হোক কিংবা অখ্যাত কোনো কলিমুল্লাহর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হোক। কারও ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পত্তি মবের হাত থেকে রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাংবিধানিক দায়িত্ব, তারা সেটাই করেছেন।

আমি দেখলাম, রাফিয়া সেখানে গিয়ে ফটাফট কয়েকটি ইংরেজি বাক্য বলেছেন। প্রশ্ন জাগে, রাফিয়া কি এমনটা মনে করেন যে, ইংরেজি বললেই একটি বেআইনি কাজকে বৈধতা দিতে হবে?

অতীতের কৃতিত্ব বর্তমানের অপরাধের ঢাল নয়

এই ঘটনায় রাফিয়া তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লে অনেকেই রাফিয়ার জুলাই আন্দোলনের সময়ের ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। আপনারা এর মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চান? কেউ জুলাইয়ের মতো একটি গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেই কি তাকে তার পছন্দমতো মব তৈরি করার ও ভাঙচুর করার অধিকার দিতে হবে?

আমি মনে করি, জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি মানুষকে মব করার অধিকার দেওয়ার এই ধারণাটি অত্যন্ত সমস্যাজনক। লক্ষ লক্ষ মানুষ জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে, তাহলে কি এখন লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভাঙচুর করার অধিকার দিতে হবে? মনে রাখবেন, অতীতের কোনো কৃতিত্ব, তা যত বড় অর্জনই হোক–এমনকি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও–বর্তমান সময়ে কোনো বেআইনি বা বিশৃঙ্খল কাজকে ন্যায্যতা দিতে পারে না। অতীতের আন্দোলনের ছবি শেয়ার করে বর্তমানের ক্রাইমকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা আসলে সস্তা রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। 

হিজাবকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করা বন্ধ করুন

আরেকটি পক্ষকে দেখলাম তারা বলছেন, রাফিয়া হিজাব করেন বলেই তার সমালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি মোটেও এমন নয়। বরং তার সমালোচনা হচ্ছে একটা সুস্পষ্ট মবকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। 

দয়া করে নিজেদের অবৈধ কাজকে, নিজেদের ক্রাইমকে বৈধতা দিতে হিজাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন না। সমালোচনা হচ্ছে রাফিয়া একটি মবকে সমর্থন করতে যাওয়ায়। এই সমালোচনা হওয়া স্বাভাবিক। কেউ হিজাব পরে অবৈধ কাজ করলেও সেটা অবৈধ, আবার কেউ জিন্স, টি-শার্ট পরে অবৈধ কাজ করলেও সেটা অবৈধ। 

মুসলমান মেয়েদের ভালোবাসার এই হিজাবকে আপনারা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের 'টুল' হিসেবে ব্যবহার করছেন। এটি লক্ষ লক্ষ হিজাব পরা মেয়ের প্রতি অন্যায় ও অবিচার। এই ধরনের 'হিজাব ব্যবসা' বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, শেখ হাসিনার স্বজন হারানোর বেদনার ব্যবসাও দীর্ঘকাল টেকেনি; মানুষ তা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। হিজাব নিয়ে আপনাদের এই রাজনৈতিক ব্যবসা এ দেশের হিজাব পরা মেয়েরাই একদিন ছুড়ে ফেলে দেবে।

মস্তিষ্কের অবমূল্যায়ন নয়, সঠিক ব্যবহার জরুরি

আমার চূড়ান্ত পরামর্শটি খুব সহজ: আল্লাহ আমাদের মস্তিষ্ক দিয়েছেন। সেই ব্রেইনটাকে একটু কাজে লাগান, খাটান। কোনটা অন্যায়, কোনটা অবৈধ কাজ, কোনটা উস্কানি–তা বুঝতে শিখুন।

জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারা জরুরি। সামনে আপনি রাজনীতি করেন আর না করেন, এটি আপনার জীবনকে সঠিক পথে চালিত করবে। নিজের ব্রেইনকে পিনাকির হাতে কিংবা কোনো সংগঠনের হাতে দিয়ে দিবেন না। অন্যের এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করে, নিজের প্রজ্ঞা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন। সচেতনতার এই আলোকবর্তিকা দিয়েই আমরা বিশৃঙ্খলার রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে পারি।

৪৬১ পঠিত ... ১৬:৩৫, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top