লেখা: আরিফ সোহেল
ঢাকায় এক সেমিনারে একজন জুলাই বিপ্লবী অভ্যুত্থানের তুঙ্গ মূহুর্তে পুলিশ পেটানোর কথা স্বীকার করেছেন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জুলাই ঘোষণাপত্র না হলে তিনি এবং সকল রাজপথের বিপ্লবীদের এই সহিংস লড়াই সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে স্বীকৃত হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় তার বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে জুলাই বিপ্লবীদের সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। খুবই স্বাভাবিক।
মননে প্রতিবিপ্লব ঘটে গেছে বলছি কারন এর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াই ঐ জুলাই বিপ্লবীকে ব্যাপকভাবে ট্রল করা হচ্ছে, নিন্দা ও তিরষ্কার করছে আন্দোলনের সহযোদ্ধারাই। সে কেন এমন কথা বলতে গেলো! জুলাইয়ে যা করেছে করেছে এখন চুপ থাকবে, পুলিশ পিটিয়েছে এইটা গলা ফুলায়ে বলার কী আছে! হায় রে বিপ্লব! হায় রে বিপ্লবের স্পিরিট!
জুলাইয়ে আপনারা, আপনাদের প্রাণপ্রিয় সন্তান যখন রাস্তায়, একের পর এক স্নাইপার বুলেট ছুটে আসতেছে। শাটার, কারেন্টের খাম্বার পিছনে কোনোমতে জায়গা নিছেন। হঠাৎ দেখলেন গুলি বন্ধ হয়ে গেলো। আবার রাস্তায় উঠে স্লোগান শুরু করলেন। খবর নেন নাই কখনো মাঝের ঐ ১০ মিনিটে ৫ জন পথশিশুর দুঃসাহসী একটা দল ঐ স্নাইপার পুলিশকে লোকেট করে খতম করে দিছে। আপনাকে আর আপনার সন্তানকে গুলির হাত থেকে বাঁচায়ে দিছে। নিছেন কখনও এই খবর? জুলাইয়ের স্টালিনগ্রাড যাত্রাবাড়ীতে গিয়া জিগান।
সাভারে শহীদ ইয়ামিন কিভাবে শহীদ হইছে জানেন? পুলিশের এপিসি বুলেটের বৃষ্টি ছড়াইতে ছড়াইতে মেইন রোড ধরে আসতেছিল। অসহায় চোখে ইয়ামিন দেখেছে তার ভাই, বোন, বন্ধুরা গুলি খেয়ে পাখির মতো শেষ হয়ে যাচ্ছে। দামাল ছেলেটা একটা লাঠি নিয়ে পুলিশের এপিসিকে সরাসরি এটাক করে। পুলিশ গুলি করে তাঁর লাশ টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে রাখে। শহীদ ইয়ামিন শহীদ হইছিলেন জুলাইয়ের হানাদার পুলিশ খতম করতে গিয়া, পুলিশ পিটাইতে গিয়া। এই কথা জোর গলায় বলতে লজ্জা লাগে? থু আপনাদের এই সুশীলতার ওপর। আমার ক্ষমতা থাকলে আমার ভাই ইয়ামিনরে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দিতাম রাষ্ট্রীয়ভাবে।
৭১য়ের মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরী আমরা। কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে হানাদার বাহিনীর সোলজার খতম করা নিয়া মিনমিন করতে দেখছেন? ব্রীজ, কালভার্ট উড়ায়া দেওয়া নিয়া চুপচাপ থাকতে দেখছেন। জনতার অধিকার, স্বাধীনতার স্বাদ পেতে যেই আত্মত্যাগ আর লড়াই সেইটার কথা জোর গলায় বলতে শরম পাইতে দেখছেন? আমরা কেন শরম পাব। ৭১য়ের রাজাকারের কাছে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা মিসক্রিয়েন্ট, ২৪য়ের হানাদার জয়ের কাছে আমরাও সন্ত্রাসী, এটাই তো স্বাভাবিক।
আমি, আরিফ সোহেল, জুলাই-আগস্ট, ২০২৪য়ে সাভার, চাঁনখারপুল ঢাকা, ও গাজীপুরে সরাসরি হানাদার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে আক্রমনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার কো-অর্ডিনেশনে পথশিশু, শ্রমিক ও ছাত্ররা এইসব অঞ্চলে আর্বান কমান্ডো আক্রমন পরিচালনা করেছে। সাভারে থানা লুট করে সশস্ত্র হয়ে গেরিলা জনযুদ্ধ পরিচালনার সকল প্রস্তুতি আমার নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছিল। ৭১য়ের মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বিপ্লবী জনতা ও দেশমাতৃকার প্রয়োজনে এইসকল কাজে অংশ ও নেতৃত্ব দিতে পারায় আমি গর্বিত।
নেন, স্টেটমেন্ট দিয়ে দিলাম। এইবার আপনাদের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সুশীলতা দিয়ে কি ছিঁড়বেন ছিঁড়েন।
পাঠকের মন্তব্য