এই দেশে হুজুর কিংবা মাদ্রাসা সিস্টেম নিয়ে কথা বলা যায় না। স্কুল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনি যত সহজেই কথা বলতে পারবেন, মাদ্রাসা নিয়ে বলতে গেলে আপনাকে দশবার ভাবতে হবে। কারণ নাস্তিক কিংবা ধর্মবিদ্বেষী ট্যাগ দেওয়া ডাল-ভাত কাজ। স্কুলে এবং মাদ্রাসায় যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো, স্কুলের যত খুঁটিনাটি মানে, প্রোজ অ্যান্ড কনস সবই আপনি জানেন। আপনি জানেন এখানে শিশুরা দুষ্টুমি করে, পড়ালেখা করতে চায় না, ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকরা প্রহারও করেন। কিন্তু মাদ্রাসার ব্যাপারটা? এখানে সন্তানদের পাঠানো হয় জান্নাত লাভের আশায়, কিন্তু জান্নাতে যাওয়ার প্রক্রিয়াকরণ মাদ্রাসার মধ্যে কীভাবে হয় তা বাবা-মায়েরাও জানেন না। স্কুল কলেজে আপনি E=mc2 কে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন, লা শাতেলিয়ার নীতির সমস্যা নিয়ে শিক্ষকের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তর্ক করতে পারবেন, কিন্তু মাদ্রাসায় তা অসম্ভব।
স্কুল কলেজ আর মাদ্রাসার মধ্যে মূল পার্থক্য হলো স্বচ্ছতায়। স্কুল কলেজ আপনাকে যেমন জবাবদিহি করতে বাধ্য, মাদ্রাসা তেমন নয়। হুজুর যদি বলেন, তিনি যে জায়গা স্পর্শ করবেন বা প্রহার করবেন সেই জায়গা বেহেশতে যাবে, ছাত্রের জবাব দেবার বা পালটা প্রশ্ন করার জায়গা কমে যায়। অর্থাৎ মাদ্রাসায় একজন শিক্ষক যত সহজেই ম্যানিপুলেটর হইয়া উঠতে পারেন, স্কুল কলেজে ওইটা হওয়া কষ্ট ও চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো শিক্ষকের ভুল ধরা। স্কুল কলেজে মনোযোগী কিংবা অমনোযোগী ছাত্রের অন্যতম প্রিয় কাজ শিক্ষকের ভুল ধরা। এতে করে যদি শিক্ষক অপদস্থ কিংবা অপারগতাও প্রকাশ করেন, তা থোরাই কেয়ারড। পরবর্তী ক্লাসে হয়তো শিক্ষক প্রশ্নকারীকে ‘এই তুমি উত্তর দাও, ঠিকই তো ক্লাসে ফালতু প্রশ্ন করো’ বললেও বলতে পারেন, তবে তা ভেনজেন্সের দিকে যাবার সম্ভাবনা কম। কারণ স্কুল কলেজের শিক্ষকরা এই চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি শুরু থেকেই রাখেন। কিন্তু মাদ্রাসার ক্ষেত্রে কি চিত্রটা এতটা স্বাভাবিক? হুজুরের ভুল ধরলে ঈমানের উপর আঘাত আসে। মাদ্রাসায় যার কনসিকোয়েন্স হয় ভয়াবহ।
আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াবেন নাকি স্কুলে দেবেন এই চয়েজ সন্তানের ও আপনার। তবে শুধুমাত্র নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য, নিজের শস্যক্ষেত্রে ভালো ফলনের জন্য সন্তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও না দেওয়াই ভালো। মাদ্রাসায় যদি দিতেই হয়, তার উপর নজর রাখুন, সে কিছু বলতে চায় কিনা লক্ষ্য করুন। ‘হুজুর যখন বলছে ঠিকই বলছে’-র তারে তাকে না পেঁচিয়ে অভিযোগকে গুরুত্ব দিন। প্রশ্ন করুন। কেউই ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে তো নয়ই, প্রশ্ন করারও উর্ধ্বে নয়। যেখানেই পড়ান, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করুন, স্বচ্ছতা চান, শিক্ষকের আচরণের পরিধি সম্পর্কে জানতে চান।
পাঠকের মন্তব্য