নয়ন ভাই আমাদের বড় ভাই। থাকতেন নিকেতন। নতুন বাসা নিলেন মোহাম্মদপুরে। আমরা সবাই মিলে ভাইয়ের বাসা চেঞ্জ করে দিলাম। মোটামুটি কোনরকমভাবে সব ঠিকঠাক করা হলো। ফ্যান লাগানোর পালা। আমরা ফ্যান লাগিয়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু নয়ন ভাই বললেন, ‘লাগাতে পারবি, আগে একটু বিশ্রাম নে। ভাইয়ের বাসায় আসছিস মানে শুধু কাজ করবি বিষয়টি তো এমন না।’
আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে গেলো। ফ্যান লাগানো হলো না। ভাই বললেন, ‘চল আজকে নিকেতন যাই। পুরোনো এলাকা। মিস করবো খুব।’
আমরা নিকেতন চলে আসলাম। নয়ন ভাই রাতটা নিকেতনেই কাটালেন।
এরপর প্রায় একমাস কেটে গেলো। একদিন নয়ন ভাইয়ের ফোন।
: আজকের রাতটা তোর বাসায় রাখবি?
: কী বলেন ভাই! এভাবে বলতে হয় নাকি? আপনি কই?
: আমি নিকেতন।
: চলে আসেন।
নয়ন ভাই আসার পর যা শুনলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। জানা গেলো, নতুন বাসা নিলেও নয়ন ভাই একদিনও নতুন বাসায় থাকতে পারেননি। কারণ হিসেবে জানা গেলো, বাসায় এখনো ফ্যান লাগানো হয় নাই।
বাসায় ওঠার পরেরদিনই নয়ন ভাই ফ্যান লাগাতেন। কিন্তু নতুন এলাকায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি পাননি। সেদিন ছিলেন রাসেল ভাইয়ের বাসায়। কেয়ারটেকারের কাছ থেকে ইলেট্রিক মিস্ত্রীর নাম্বার নিলেন পরেরদিন। কিন্তু মিস্ত্রী ফোন না ধরায় ও পরে কল ব্যাক না করায় ওইদিনও ফ্যান লাগানো হয়নি। রাসেল ভাইয়ের বাসায় রাত কাটালেন। পরেরদিন অফিস থেকে বের হতে হতে বেজে গেলো ১১টা। এত রাতে মিস্ত্রীকে পাবেন না দেখে নয়ন ভাই উঠলেন আমাদের আরেক বন্ধু রনির বাসায়। একদিন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেলেন। একদিন জানা গেলো, মিস্ত্রীর নাম্বার ভুল। এভাবে প্রায় ১ মাস পর নয়ন ভাই মিস্ত্রী পেলেন। ফ্যান লাগালেন। কিন্তু দেখা গেলো ফ্যান নষ্ট।
নয়ন ভাই পুরো এক মাসই এর-ওর বাসায় থেকে বেড়াচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, তাইলে পরের প্ল্যান কী?’
: ফ্যান কিনতে হবে।
: কবে কিনবেন?
: একদিন সময় দে। দুজন গিয়ে কিনে আনি।
পরেরদিন সকালে নয়ম ভাই চলে গেলেন। আমিও নানান ব্যস্ততায় আটকে গেলাম। পদ্মা নদীতে অনেক জল গড়ালো। পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলো। রমজান মাস উপলক্ষে ইয়েমেন যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করলো সৌদি জোট। অস্কারের মঞ্চে ক্রিস রককে চড় মারলেন উইল স্মিথ। এমন নানান ঘটনাবহুল পৃথিবীতে একদিন নয়ন ভাইয়ের ফোন।
: তোকে না বলছি, একদিন সময় দে। ফ্যান কিনবো।
: ভাই, বলার পর এক মাস হয়ে গেছে। আপনি এখনো ফ্যান কিনেননি?
: না। সময় পাচ্ছি না।
: শিট। গরমে থাকছেন কীভাবে?
: বাসায় এখনো থাকা শুরু করিনি। কাল রাতে রাসেলের বাসায় ছিলাম। আজকে থাকা যাবে না।
: কেন?
: রাসেলের বউ নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। আমি কয়েকদিন পর পর ওদের বাসায় থাকি দেখে নানা গেঞ্জাম। এর মধ্যে, রাসেলের বউ অপবাদ দিয়েছে আমার আর রাসেলের মাঝে নাকি রংধনু প্রেম।
: কী বলেন এসব ভাই!
: হ। রাসেলের বউ কোথাও বেড়াতে গেলেই আমি ওর বাসায় থাকতে আসতাম। প্রতিবেশিরা নাকি ওনাকে বলছে কেস খারাপ। রাসেলের ডিভোর্সও হয়ে যেতে পারে।
: ভাই, আপনার কথা আমি কিছু বুঝতেছি না।
: বুঝা লাগবে না। তোর বাসায় আজকে থাকা যাবে? তোর গার্লফ্রেন্ডের নিশ্চয়ই এমন কোন ঝামেলা নাই!
: না ভাই। আসেন।
নয়ন ভাই আসলেন। পরেরদিন সকালে ফ্যান কিনতে যাবো ঠিক হলো। নয়ন ভাই প্রথমদিনই ফ্যান কিনে ফেলতেন। কিন্তু সাথে যাওয়ার জন্য কাউকে পাননি। কখনো নিজে সময় বের করতে পারেননি। একা একা ফ্যান কিনতে যেতেও ইচ্ছে করছিলো না। ফ্যান তো আর ফেলনা না, একটু দেখেশুনে কিনতে হয়। দুজন লাগে। তিনজন হলে আরও ভালো।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়ন ভাই বাসায় নেই। আমার ফোনে একটা মেসেজ, ‘অফিসে কাজের অনেক চাপ। সন্ধ্যায় ফোন দিবো। তখন ফ্যান কিনবো।’
রাতে আমি নয়ন ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন, আজকে ফ্যান কেনা হবে না। ওনার এক বান্ধবীর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাবেন। রাতে ওখানেই থাকবেন। ফ্যান কিনবেন আগামীকাল।
এভাবেই গরমকাল চলে গেলো। এক মধ্য অক্টোবরে নয়ন ভাইয়ের সাথে দেখা। তিনি এখনো ফ্যান কেনার সময় বের করতে পারেননি। নতুন বাসায়ও থাকা শুরু করেননি। আজকে রাতে থাকবেন এক ছোট ভাইয়ের বাসায়। বললাম, ‘আর ফ্যান কেনা লাগবে না। শীত চলে আসছে। এবার বাসায় থাকতে পারবেন।’
নয়ন ভাই বললেন, ‘ভালো বলেছিস। কাল একটু সময় দে। কম্বল কিনতে হবে একটা।’
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন