দিনশেষে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে একটু ফেইসবুকে ঢুকতেই একটা রিল সামনে আসলো, আপনি কি আশিক চৌধুরীর মত প্রেজেন্টেশন স্কিলড হতে চান? বানাতে চান চোখ ধাঁধানো , মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় স্লাইড? তবে আজই নামমাত্র মূল্যে কিনে ফেলুন কোর্সটি, মাত্র ১৯৯৯...
বিষয়টা তেমন গা করলাম না। রিফ্রেশ দিতেই দেখলাম পোস্ট, জমানা এখন আশিকের! আরে, হ্যাঁ! তাই তো। পটুয়াখালীর আশিক তো ইদের পরই বিয়ে করলো। জমানা তো ওর হবেই। কত ইচ্ছে ছিল ড্যাং ড্যাং করে বিয়েতে যাবো, কায়দাটা যুতসই করতে পারিনি। কিন্তু এতদিন পর ওর বিয়ে নিয়ে পোস্ট? এইটা কে দিলো!
এলাকার এক ছোট ভাই রিল পাঠালো তার নিজের পেইজের। সে গাইছে ধনকে দেখলু তুই ননী সিনা মনকে চিনলু নাই, সুনাকে চিনলু বানাকে চিনলু আশিক চিনলু নাই... প্রায়ই বেসুরো গান গেয়ে সে ভিডিও বানায়। আমি সিন করি রেখে দেই, রিল শেষ করতে পারি না।
নিউজফিডে ফিরতেই চোখে পড়লো নিচতলার আংকেলের পোস্ট, ইন দ্য ইয়ার ১৯৯৮, কলেজে নবীণবরণ অনুষ্ঠানে কী প্রেজেন্টেশনটাই না দিয়েছিলাম! আজ মনে পড়ে গেল। বর্তমান যুগের মত কম্পিউটার থাকলে... তারপর কয়েকটা স্যাড ইমো!
পোস্টে উপরের তলার আন্টির কমেন্ট, আমাদের সময়ে মোবাইল থাকলে আপনি হতেন আশিক স্কয়ার! কমেন্টে আংকেলের লাভ রিয়্যাক্ট!
বুঝলাম, ঘটনা আমি এখনো ধরতে পারিনি।
আশিক লিখে সার্চ করতেই এল,
চিনে নিন এই আশিকে, যার রয়েছে শূন্যে ভাসমান অবস্থায় বিশ্বরেকর্ড...
ভিডিওটা শুরু হতে না হতেই পাশের বাসার হুমায়রা দৌড়ে আসলো। ওটাকে দৌড় না বলে উড়ে আসা বলাই ভালো।
আপু, আমি একটা সমস্যায় পড়েছি!
: কী সমস্যা?
: আমার একজনকে ভীষণ ভালো লেগে গেছে। লাভ অ্যাট দ্যা রেইট একদম ফার্স্ট সাইট।
: দারুণ ব্যাপার, অভিনন্দন!
: ফোনে ছবি এনেছি দেখাবার জন্যে।
: গত সপ্তাহে তো তিনজনকে দেখাইছ, আমার কারোর চেহারাই ঠিক মত মনে নেই।
: এইটা সিরিয়াস আপু! কখন থেকে শুধু ঐ গানটাই ঘুরছে মাথায়, তুমি আশিক, আমি প্রিয়া। আপনি বাসায় আসবেন বলে আমি অপেক্ষা করছিলাম যাতে এই সুখবরটা সবার আগে আপনাকে দিতে পারি। লোকটার নাম আশিক।
ব্যাপারটা কী এতটাই কোইনসিডেন্স?
: দেখি তোমার আশিককে। আরে, ইনি তো আশিক চৌধুরী। বিডার চেয়ারম্যান।
: চেয়ারম্যান!
আমিও তো তাই বলছি । দেশে কোনো চেয়ারম্যান কে আপনি দেখেছেন এভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে? আপনি কখনোই আমার পছন্দ কে গুরুত্ব দেন না। হেঁয়ালি করে কথা বলেন। ভাল্লাগে না।
ও বাসায় ফিরে গেল। যাক, এখন একটু শান্তিতে রিল অন্তত দেখা যাবে।
রিফ্রেশ দিতেই এল, ইউনুসের না, এখন সময় আশিকের! কোন খবর কী ছুটে গেল? যে হারে 'পার্টি' ওপেন হচ্ছে... নতুন রাজনৈতিক দল হল নাকি?’
আঁৎকায় উঠে রিল পুরোটা দেখলাম। আজকাল ‘ওয়াচ টিল দ্যা ইন্ড’ দিলে মানুষ সাথে সাথে স্কিপ করে নতুবা রিল টেনে শেষেরটুকু দেখে। এই রিলের শেষে ছিল, বুঝলেন তো? কীভাবে রিল বানালে ভিউটাইম বেশি হবে!
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মোবাইল রেখে বাইরে যাবার জন্য উঠতেই বসের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ, হোপ দিস মেসেজ ফাইন্ডস ইউ ওয়েল। মেইক অ্যান প্রেজেন্টেশন ফর এ মিটিং, আই লাইক দিস ওয়ান। হ্যাভা লুক অ্যান্ড মেইক ইউর ওউন। অ্যাটাচমেন্টে তেমন কিছু না, আশিক চৌধুরীর প্রেজেন্টেশন।
পাঠকের মন্তব্য