আজতাক আমাদের মিডিয়া হাউজ প্রত্যেক হোলিতে রঙ খেলে দুই পাত্তর মেরে নিউজে ভান্ড মারেনি; এমন ঘটনা ঘটেনি। আজ নিউজের তেমন চাপ নেই। তবু আগে যেমন একটা দুইটা পাকিস্তান পাকিস্তান বলে তোতাপাখি প্যাকেজ বানাতে হতো; আজকাল তেমনি বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে একটা দুটো প্যাকেজ বানাতে হয়। পাকিস্তান প্যাকেজের টি আর পি কমে এসেছে। জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি আর যাদব ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা এতো ট্রল করেছে যে এখন আর কেউ পাকিস্তান ইস্যুটাকে কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না।
তাতে অসুবিধা হয়নি; আমরা গতবছর ৫ আগস্ট থেকে নতুন তোতা কিনেছি সারাক্ষণ বাংলাদেশ বাংলাদেশ করার জন্য। তো এবার হলির দিন হলো কি; অসুর ভট্টাচার্য দাদা আমাদের বাংলাদেশ ডেস্কের অপরাজিতা দিদির গালে রঙ লাগিয়ে দিয়ে বললেন, সোনা আজ একটা জমিয়ে বাংলাদেশ প্যাকেজ করো দিকিনি। অপরাজিতাদি দাদার ভুঁড়িতে বুড়ো আঙ্গুলের গুঁতো দিয়ে বলে, ছাড়ো তো অসুরদা। আমাদের সবারই বয়স হয়েছে।
সিলসিলা মুভির রেখার মতো ঠমক দেখিয়ে অপরাজিতা ডেস্কে গিয়ে বসে ল্যাপটপ অন করে টিস্যু দিয়ে গাল মুছতে থাকে। অসুরদা সঞ্জীব কুমারের মতো উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে।
অপরাজিতা দিদি সামনে চোখ লাল করে বসে থাকা রাসু অধিকারীকে জিজ্ঞেস করে, এই রাসু আজ বাংলাদেশের হাইলাইট কি রে!
রাসু ফোন খুলে পড়তে থাকে, পাকিস্তান থেকে চাল নিয়ে পৌঁছেছে একটি জাহাজ; কে জানে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আসছে কিনা জাহাজে করে।
: নাহ, এটা জমবে না রে, এর আগে জাহাজে আসা পেয়াজকে গ্রেনেড হিসেবে দেখিয়ে বড্ড লোক হাসিয়েছে ময়ূখরঞ্জন।
: বোঝো না কেন দিদি, যত হাহা তত ভিউজ।
রাসু হাতের মুড়ানো বিড়িটাতে একটা টান দিতেই দূর থেকে অসুরদা নাক খাড়া করে বলে, ঐ রাসু তুই আবার আপিসের মধ্যে জয়েন্ট ফুঁকছিস; তোকে নিষেধ করেছি না; ডিউটি আওয়ারে কোন ফুঁকাফুঁকি নয় কো।
অপরাজিতা দিদি বলে, ছেড়ে দাও অসুরদা আজ হোলির দিন। ওদেরই তো আনন্দের দিন। তোমার মনে নেই, তুমি কেমন ফুঁকে এসে একবার ব্রেকিং টিকার চালিয়ে দিয়েছিলে, দেহ রাখলেন পোপ পল্টু। অথচ পোপ তখন হাসপাতালে চোখ খুললেন। এই রাসু আর কি নিউজ আছে বল।
রাসু ইউরেকা ইউরেকা বলে ওঠে, ভারত গরু বাংলাদেশে পাঠাতে রাজি নয়।
পাশের ডেস্কের ঘনাদা টিপ্পনি কাটে, সেই ৫ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশের গরুগুলো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলকাতায় এসে জমা হয়েছে। যেখানেই যাই, দেখি বাংলাদেশের গরু উদাস মনে হেঁটে যাচ্ছে। শুনলাম গরুদের আধার কার্ডও হচ্ছে।
জয়েন্ট ফুঁকে রাসুর ব্রেন বেশ খোলতাই হয়েছে। সে এবার দিদির দিকে একটু রঙ স্প্রে করে দিয়ে বলে, ভারত গরু পাঠাচ্ছে না, তাই পাকিস্তানের জাহাজে ঘোড়া আসছে।
দিদি প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলে, রাসু তুই ওসব মৌটুসি-বুম্বা-টুম্পার দিকে বালাম পিচকারি খেল গিয়ে। মাথাটা কি একেবারেই গেছে নাকি! ঘোড়ার মাংস কে খায়!
ঘনাদা মুখটা সিরিয়াস করে বলে, অর্ণব গোস্বামী যদি রুটির অভাবে পাকিস্তানিদের মাটি খাওয়াতে পারে; আমরা কেন গরুর অভাবে বাংলাদেশিদের ঘোড়া খাওয়াতে পারবো না। ছেড়ে দাও দিদি; আমি বিশিষ্ট সাংবাদিক সুশির বাইট নিয়ে প্যাকেজ বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি।
ঘনাদা সুশিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, খবরটা কি সত্যি নাকি, গোমাংসের অভাবে বাংলাদেশের মানুষ ঘোড়ার মাংস খাচ্ছে!
সুশি জিজ্ঞেস করে, কী খাইতেছে কইলেন!
: ঘোড়ার মাংস।
: ঐডা আবার কী!
: ঘোড়া ঘোড়া; হর্স।
: ও গুরাও দেকতেছি আপনেগো ঐখানে গিয়া ঘোড়া হইছে। দাড়ান দেখি খবর লাগাই।
সুশি সিলেটের হাওর অঞ্চলে ফোন করে মকসেদকে বলে, ও মকসেদ ভাই একটা মরা গুরা জবু দিয়া খাওয়াইবেন নাকি এতিমগো।
: একটু আগে কইলা একটা মাইয়ারে জাপটাইয়া ধইরা নৌকায় তুলতে; অহন আবার কও গুরা জবাই দিতে। আ্মার তো হাত দুইটা। কোনডা করুম।
: উইমেন ইস্যুটা চুইং গামের মতো; তুমি জাপটাইয়া না ধরলেও আরেকজন ধরবো; তহন হাওরে প্ল্যাকার্ড নিয়া নৌকা মিছিল করবা। এখন গুরার ব্যবস্থা করো।
সুশি ঘনাদাকে ফোন করে বলে, আপনি জানলেন ক্যামনে, আসলেই তো লোকজন গুরার মাংস খাইতেছে।
: গুরা না বলুন ঘোড়া।
অনেক কষ্টে সুশির একটা বাইট নিয়ে নেয় ঘনাদা। কিন্তু ঘোড়া উচ্চারণটা স্পষ্ট হয় না। সুশি পাঁচবার গুরা বলেছে।
পাকিস্তান থেকে জাহাজে ঘোড়া আসার খবরটাকে সাবস্ট্যনশিয়েট করতে ডিফেন্স এক্সপার্ট রিটায়ার্ড মেজর চক্রাণু ঝুনঝুনিওয়ালাকে ফোন করে।
মেজর ঝুনঝুনিওয়ালা বলে, খিলাফতিরা হলো গিয়ে তাজা ঘোড়া এস্তেমাল করে। আর ঘোড়াগুলো হলো গিয়ে মরা হয়ে গেলে পুওর আদমিদের খাইয়ে দেয়। পাকিস্তান হলো গিয়ে আই এম এফ-এর লোন ফেরত দেবে আর ক্যায়সে! তাই হর্স ট্রেডিং করেছে চোট্টোগ্রাম পোর্ট দিয়ে। লোকেশানটা বুঝবেন গিয়ে চোট্টোগ্রাম।
স্টোরি দাঁড়িয়ে যায়। রসভরী গুহ স্টুডিওতে দাঁড়িয়ে হাঁক দেয়, ভারত শাফ জানিয়ে দিয়েছে গরু দেবে না বাংলাদেশকে। ক্ষুধার্ত মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় ঘোড়া খাচ্ছে। বিস্তারিত শোনা যাক বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক সুশি সাহার কাছ থেকে। জায়ান্ট স্ক্রিনে সুশির বাইট বা বক্তব্যের কামড় দিয়েই আবার চেঁচিয়ে ওঠে রসভরী গুহ, কিন্তু সমতল বাংলাদেশে এতো ঘোড়া আসবে কি করে; তাহলে কি আবার পাকিস্তান! গ্রাফিক্সে ঘোড়া ভর্তি পাকিস্তানি জাহাজের এনিমেশন দিয়ে নেপথ্যে চিঁ হি হি হি আওয়াজ জুড়ে দিয়ে গুহ বলে, ডিফেনশ একশপার্ট মেজর চক্রাণু ঝুনঝুনিওয়ালার কথা শুনুন। সব রহশ্য উন্মোচন করতে উনি এখন আমাদের শটুডিওতে। ঝুনঝুনি স্টুডিওর চেয়ারে বসে ভুঁড়ি এলিয়ে পাকিস্তানের হর্স ট্রেডিং-এর গল্প বলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।
অসুর ভট্টাচার্য নিউজরুম থেকে দৌড়ে এসে রসভরী গুহর গালে রঙ মাখিয়ে দিয়ে বলেন, শুপার্ব রসভরী শুপার্ব।
পাশে দাঁড়িয়ে ঘনাদা বলে, সবই তো করলাম আমি; আর আমারও তো দুটি গাল আছে অসুরদা।
: আরে রাকো তো ঘনা; ঐ এক ঘ্যানঘ্যান করুনিকো; যাও গরুর মাংশের অভাবে ক্ষুধার্ত বাংলাদেসিরা নাশতায় ঘোড়ার মাংশ খাচ্ছে টাইটেল দিয়ে ইউটিউবে তুলে দাও।
পাঠকের মন্তব্য