চেরনোবিল নিউক্লিয়ার ডিজাস্টার নিয়ে যে ১৮টি ফ্যাক্টস আপনি নাও জানতে পারেন

১১৪৮ পঠিত ... ২০:৪৪, জুন ১১, ২০১৯

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। ঠিক তেমনিভাবে টিভি সিরিজের বেলাতেও 'ব্রেকিং ব্যাড' কিংবা 'গেম অফ থ্রোনস' জনপ্রিয়তার হুমকিস্বরূপ দেখা দিয়েছে এইচবিও'র নতুন মিনি সিরিজ 'চেরনোবিল' (Cherenobyl)। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলে ঘটে যাওয়া নিউক্লিয়ার ডিজাস্টারের ঘটনা নিয়ে বানানো হয়েছে সিরিজটি। এযাবৎকালে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক নিউক্লিয়ার দুর্ঘটনা হিসেবে এক কলংকের নাম হয়ে আছে 'চেরনোবিল'। যার ক্ষয়ক্ষতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাগিতে আমেরিকার করা অ্যাটোম বোম আক্রমণকেও ছাড়িয়ে গেছে। 

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তর ইউক্রেনে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। সোভিয়েত সরকার এই দুর্ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। দেশবাসীকে অন্ধকারে রাখতে যা করা সম্ভব সব করার চেষ্টাই তারা করেছিল। ঘটনাটির দুইদিন পর সুইডেনের একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে অ্যালার্ম বাজা শুরু হলে তারা বুঝতে পারে, কাছাকাছি কোথাও তেজস্ক্রিয়তা অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। পরে সুইডিশদের কারণেই পুরো বিশ্ববাসী জানতে পারে এই দুর্ঘটনার কথা। তবুও এই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে বাকি পৃথিবীর অপেক্ষা করতে হয়েছিল অনেকদিন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ইউক্রেনের স্বাধীনতার পর সবাই জানতে থাকে দুর্ঘটনার সত্যিকারের চিত্র। এমনকি ধারণা করা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পিছনেও এই নিউক্লিয়ার বিপর্যয়ের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। ইদানিং টিভি সিরিজটি কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় এসেছে চেরনোবিল। সেই চেরনোবিল নিয়ে ভয়াবহ ও চমকপ্রদ কিছু তথ্য আজ থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।  

১# ইউক্রেনে অবস্থিত চেরনোবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টটি বিস্ফোরিত হয় রাত ১টা ২৩ মিনিটে। দিনটি ছিল ২৬শে এপ্রিল, ১৯৮৬। ৪ নাম্বার রিএক্টরের ওভারহিটের ফলেই বিস্ফোরণটি ঘটে।

 

২# ইন্টারন্যাশনাল নিউক্লিয়ার ইভেন্ট স্কেলের (আইএনইএস) মতে, এটি নিউক্লিয়ার ইতিহাসে মানুষের তৈরি সবচেয়ে ভয়াবহ এবং গুরুতর নিউক্লিয়ার দুর্যোগ।

 

৩# বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, এই ঘটনায় যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত হয়েছে তা হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর ফেলা পারমাণবিক বোবার রেডিয়েশনের ১০০ গুণ।

 

৪# এই ডিজাস্টারের ফলে হওয়া নিউক্লিয়ার রেইন ও তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল আয়ারল্যান্ড পর্যন্ত।

 

৫# এই মারাত্নক দুর্ঘটনার কারণে রাশিয়ান ফেডারেশন, দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইউক্রেনকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মাশুল গুণতে হয়েছিল।

 

৬# প্রায় ৮ লাখ মানুষ এই ক্ষতিকর নিউক্লিয়ার রেডিয়েশনের মুখোমুখি হয় যার মধ্যে ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং অন্তত ৭০ হাজার মানুষলে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়।

 

৭# চেরনোবিল বিপর্যয়ের পর আক্রান্ত ২০% মানুষ আত্নহত্যা করেছিল।

 

৮# সরকারি ক্ষতিপূরণের সুবিধা নিতে কিছু পরিবার আক্রান্ত অঞ্চলে ফিরে যায়। বর্তমানে তেজস্ক্রিয়তায় দূষিত এলাকাটি প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের বাসস্থান।

 

৯# এলাকাটি বর্তমানে বিশ্বের অনন্য সব বন্য প্রাণীর আবাসস্থলেও পরিণত হয়েছে এবং দিনে দিনে এদের সংখ্যা শুধু বেড়েই চলছে যার মধ্যে হরিণ, ঈগল, নেকড়ে উল্লেখযোগ্য।

 

১০# এলাকাটির পার্শ্ববর্তী বনের নাম দেওয়া হয়েছে 'রেড ফরেস্ট'। রেডিয়েশন লিকিং বা তেজস্ক্রিয় রশ্নির বিকিরণের ফলে জঙ্গলটি ব্রাইট জিনজার বর্ণে রূপ নেওয়ার কারণেই এমন নামকরণ।

 

১১# ইস্টার্ন ইউরোপের দ্বীপস্বরুপ দেশ বেলারুশের প্রায় ৭০% এলাকা দূষিত হয়েছে চেরনোবিল দুর্যোগের ফলে৷

 

১২# পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিনপিস’এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দূর্ঘটনার ফলে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

 

১৩# রিপোর্ট থেকে জানা যায়, চেরনোবিলের সর্বশেষ চুল্লি বন্ধ করা হয়েছে ২০০০ সালে। যদিও বলা হয়ে থাকে যে,  প্রায় ২০০ টনের মত তেজস্ক্রিয় উপাদান এখনও নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের ভেতরে রয়েছে।

 

১৪# ইউ.এস নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশন (এনআরসি)-এর মতে, এই নিউক্লিয়ার বিপর্যয়ের কারণে চার মাসের মধ্যে চেরনোবিলের ২৮ জন কর্মী মারা গিয়েছেন।

 

১৫# বিশেষজ্ঞদের মতে চেরনোবিলের নিউক্লিয়ার স্টেশনটি সম্পূর্নভাবে নিষ্ক্রিয় হতে আরো ১০০ বছরেরও বেশি সময় প্রয়োজন।

 

১৬# বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের আশেপাশের এলাকাগুলো পুনরায় পারমাণবিক বর্জ্রপ্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহার করা হবে।

 

১৭# দূর্ঘটনার ফলে প্রায় ৯০% স্থানীয় শিশু ও ৫% বয়স্ক লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও তেজস্ক্রিয় রশ্নির বিকিরণের ফলে পরবর্তী সময়ে ১ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷

১৮# বর্তমানে চেরনোবিল হল পশু পাখি ও অল্প কিছু মানুষের আবাসস্থল যারা টুরিস্ট সাইটের ভেতরে কাজ করে। কিন্তু,  কেউই সেখানে বেশিক্ষণের জন্য থাকতে পারে না। টুরিস্ট সাইটের কর্মীরা ৩ সপ্তাহ কাজ করে এবং ভিজিটরদের পাওয়ার স্টেশনে কয়েক ঘন্টার বেশি থাকার অনুমতি নেই।

১১৪৮ পঠিত ... ২০:৪৪, জুন ১১, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top