ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত জানা-অজানা ১২টি তথ্য

৩৬৯২ পঠিত ... ১৮:৪৯, মে ০২, ২০১৯

এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায়ই আমরা নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন এসব শব্দ শুনি। এই সময় ক্রান্তীয় (ট্রপিকাল) অঞ্চলের সমুদ্রে সূর্যের তাপে স্বভাবতই সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে উপরে চলে যেতে থাকে। এতে করে ঐ বায়ুশুন্য অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন মেরু অঞ্চল থেকে ঠাণ্ডা বাতাস এসে সেই স্থান পূরণ করে এবং ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এরপর এই ঘূর্ণিঝড় তার গতিপথে কখনো উপকূলে আঘাত করে, আবার কখনো সমুদ্রেই মিলিয়ে যায়। উপকূলে আঘাত করে স্থলভাগে প্রবেশ করলে ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে তার শক্তি হারিয়ে ফেলে।

ট্রপিকাল সাইক্লোন নামে পরিচিত সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়গুলোকে এলাকাভেদে টাইফুন, হারিকেন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। প্রতি বছর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রায় ৮০টির মতো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তার কোনো কোনোটি ভয়ানক রূপ ধারণ করে ভয়াল জলোচ্ছ্বাসও নিয়ে আসে উপকূলে। বাংলাদেশ একাধিকবার এমন ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়েছিল।

সাইক্লোন এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কিছু সাইক্লোন বিষয়ে কিছু ফ্যাক্টস আজ থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য। 

  

১# ১৮৭৬ সালের ১ নভেম্বর ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলায় বরিশালের বাকেরগঞ্জে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল প্রায় ২৩০ কিমি/ঘন্টা গতিতে। ‘দ্য গ্রেট সাইক্লোন অফ বাকেরগঞ্জ’ নামে পরিচিত এই ঘূর্ণিঝড় ও সৃষ্ট প্রায় ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২ লাখ মানুষের।    

ভোলা সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চল

 

২# পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি হচ্ছে ‘ভোলা সাইক্লোন’। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর ঘন্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে দক্ষিণ উপকূলে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের অন্তত ১ লক্ষ ছিলেন জেলে।  

৩# স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টিকারী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে। ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিমি গতি এবং ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস নিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ। ক্ষতির পরিমাণ ১.৭ বিলিয়ন ডলার।

১৯৯১ সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্থ বিমানঘাঁটি

 

৪# ১৯৯১ সালের সাইক্লোন আর জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম বিমানঘাটিতে থাকা প্রায় দেড়শ বিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর মাঝে ৫টি সদ্য আনা বাক্সবন্দি এমআই-৮ হেলিকপ্টার, প্রায় ৩০টি শেনইয়াং এফ-৬ জঙ্গিবিমান পুরোপুরি ধ্বংস হয়।

৫# রাজধানীর বিজয় সরণির মোড়ে প্রায় দুই দশক ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শেনইয়াং এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি ১৯৯১ সালের সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

৬# ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বরিশাল ও সুন্দরবন উপকূলে ঘন্টায় ২৬০ কিলোমিটার গতি ও প্রায় ১৬ ফুট উঁচু ঢেউ নিয়ে আঘাত করে সিডর। প্রায় দশ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে সিডর ও ঘূর্ণিঝড়সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে।

সাইক্লোন সিডরের স্যাটেলাইট ইমেজ

 

৭# সাইক্লোন সিডরের আঘাত থেকে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল সুন্দরবন। সুন্দরবন নিজে সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চলকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল সিডরের ছোবল থেকে। এই ক্ষতি পুরপুরি পুষিয়ে উঠতে সুন্দরবনের আরও কয়েক দশক সময় লেগে যাবে।   

৮# বিষুবরেখার (ইকুয়েটর) উত্তরে যেসব সাইক্লোন সৃষ্টি হয়, সেগুলো ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে। আর বিষুবরেখার দক্ষিণে সাইক্লোনের বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরে।

৯# পৃথিবীর ইতিহাসে কোন ঘূর্ণিঝড় বিষুবরেখাকে অতিক্রম করেনি। অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধ্ব থেকে কোন ঝড় কখনো দক্ষিণে যায়নি, আর দক্ষিণ থেকে কোন ঘূর্ণিঝড় কখনো উত্তরে আসেনি।  

বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া ট্রপিকাল সাইক্লোনগুলো ম্যাপ

 

১০# বিষুবরেখার উত্তরে এবং দক্ষিণে চার ডিগ্রি করে অঞ্চলে কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবও পড়ে না তেমন একটা।  

১১# মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকায় ঘুর্ণিঝড়কে বলে সাইক্লোন, পূর্ব এশিয়ায় অর্থাৎ চীন জাপানে এর নাম টাইফুন, উত্তর আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান ও আটলান্টিক অঞ্চলে এর নাম হারিকেন। আর অস্ট্রেলিয়ায় ঘূর্ণিঝড় উইলি উইলি নামেও পরিচিত।

১২# শুধু বিষুব অঞ্চলই ঘূর্ণিঝড় থেকে নিরাপদ তাই না। দুই মেরু অঞ্চল এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ঘূর্ণিঝড় একেবারেই হয় না বললে চলে। এসব অঞ্চলে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কম থাকায় নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না।

৩৬৯২ পঠিত ... ১৮:৪৯, মে ০২, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top