স্কুলে ভর্তি, নাকি সেনাবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট?

১৪৯২ পঠিত ... ১৩:৪৯, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৮

শীতের রাত। স্ত্রীর ঘুম আসছে না। একটু লজ্জা লজ্জা করছে। স্বামীকে কি ডাকবে, নাকি ডাকবে না।

সব দ্বিধা ছেড়ে স্বামীকে আলতো টোকা, অ্যাই শুনছো? ঘুম জড়ানো কণ্ঠে স্বামীর উত্তর, হুম বলো।

––শোনো না গো, চোখ খোলো।

: হুম বলো।

––উফফ! আচ্ছা, জাতীয় পতাকার ডিজাইনারের নাম যেন কী বলছিলা?

পর দিন স্কুলের ভর্তি ফরম আনতে যাব। যেহেতু বাবা–মা দুজনকেই ডেকেছে, বীথিকে বললাম, আসলে ইন্টারভিউ নিবে তোমার আর আমার। বিশেষ করে তোমার। আমি তো আর ঋদ্ধিকে সময় দিতে পারব না। ওরা দেখবে, ছাত্রীর মায়ের জ্ঞান কেমন। 

আমার কথা শোনার পর বীথি পুরাতন বইয়ের বান্ডিল থেকে ধুলো জমা বিসিএস গাইড বের করল। সারাটা দিন ধরে সে কী পড়াশোনা! এই পড়াশোনার দশ শতাংশই ঠিক টাইমে করলে বউ আমার আজকে ফরেন ক্যাডারে চাকরি করত। 

কিন্তু বীথির দোষ নেই। আমি নিজেই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম ভর্তির নোটিশ পড়ে। প্লে গ্রুপে ভর্তির যোগ্যতায় আরও অনেক কিছুর পাশাপাশি উচ্চতা, ওজন, বুকের ছাতি... আরও কী কী সব যেন লেখা ছিল। এটা কি প্লে গ্রুপে ভর্তির নোটিশ, নাকি সেনাবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট?

দ্বিতীয়টাই হয়তো সত্যি। কারণ ঋদ্ধিকে ভর্তি করাতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা আমার হচ্ছে, এর নাম আসলেই যুদ্ধ! 

এত্তটুকুন একটা মেয়ে আমার। কথাই শিখল এই সেদিন। এখনো ঋদ্ধির গল্পে হালুম দোকানে গিয়ে চকলেট খায়। ঋদ্ধি সূর্য আঁকে নীল রঙের। উল্টো করে লেখে C। এখনো ওর কল্পনার জগত কত বর্ণিল। কাল বাসায় ফিরে সেই ঋদ্ধিকে দেখলাম, মন খারাপ। লটারিতে টেকেনি। এ নিয়ে দুটো স্কুলে লটারিতে টিকল না।

ঋদ্ধি বিড়বিড় করে বলছে, ভর্তির লতারি কপালে নাই! ওর মা ফোনে শাশুড়িকে এই কথা বলেছে। ওটা শোনার পর ঋদ্ধির মাথায় এই কথা ঢুকে গেছে! ভর্তির লতারি কপালে নাই! 

ঋদ্ধি আগে লিখতে বসলে ছবি আঁকতই বেশি। এখন নিজে থেকেই এ বি সি ডি লেখে। ছবি আঁকা বাদ! ম্যাডামরা যদি ভর্তি না নেয়! ভয় ঢুকে গেছে মনে! এত্তটুকুন একটা মেয়ের ছবি আঁকা, নীল রঙের সূর্য, হালুমের চকলেট খাওয়ার কল্পনার জগত আমরা ধ্বংস করে ফেলছি!

আইনস্টাইন তাঁর সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন কল্পনায়। তিনি বসে ছিলেন পেটেন্ট অফিসের চেয়ারে। সঙ্গে কাগজ কলম ছিল না। সেই সময়ই মনে মনে থিওরিটা ভেবে দাঁড় করিয়ে ফেলেন। পুরো কল্পনায় আবিষ্কার করা একটা থিওরি পৃথিবীকেই বদলে দেয়। মানবসভ্যতা যাত্রা করে নতুন এক যুগে। 

সকালে দেখি ঋদ্ধির মা মেয়ের গায়ে তিনটা চারটা করে জামা পরাচ্ছে। ভারী জ্যাকেট। কাহিনী কী! এত শীত তো পড়ে নাই। বীথি বলল, ওজন ১৩ কেজি চাইছে। ঋদ্ধির ওজন তেরো কেজি থেকে ২০০ গ্রাম কম! 

ইন্টারভিউয়ের সময় স্কুলের ম্যাডাম খুব গর্ব করে বললেন, আপনার মেয়ের এখনো চার বছর বয়স হয় নাই। আমাদের স্কুলে কিন্তু অনেক প্রেশার। আমরা প্লে গ্রুপেই বাক্য গঠন শেখানো শুরু করি। 

আর ইউ কিডিং মি! প্লে গ্রুপেই বাক্য গঠন? তাহলে তার নাম প্লে গ্রুপ কেন! অভিভাবকরাই নাকি চায় বেশি বেশি পড়া। যে স্কুল বেশি পড়ায়, সেই স্কুল তত ভালো! 

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা প্রতি বছর লাখ লাখ জিপিএ ফাইভ পাস করা শিক্ষার্থী পাব।

কিন্তু আমি লিখে দিতে পারি, যে শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুদের কল্পনার জগতটাকে এভাবে শুরুতেই দুমড়ে মুচড়ে গুঁড়িয়ে দেয়, সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কখনোই একজন আইনস্টাইন কিংবা রবীন্দ্রনাথ পাব না। 

১৪৯২ পঠিত ... ১৩:৪৯, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৮

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top