যেখান থেকে এলো ইংলিশ সমর্থকদের বুলি 'ইটস কামিং হোম'

৬৯০ পঠিত ... ২১:৪৮, জুলাই ১১, ২০১৮

বিশ্বকাপ এলেই ইংল্যান্ড দলকে নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়া উচ্চাশার পাহাড় গড়ে তোলে, তা তো নতুন কিছু নয়। তবে এবারের বিশ্বকাপে যেন ‘ইটস কামিং হোম ল্যাডস’, 'ইটস কামিং হোম' এই বাক্যগুলো একটু বেশিই শোনা গেছে! যেন ইংল্যান্ডে না গেলে বিশ্বকাপের আর বাড়িই ফেরা হবে না! ঈদের সময় না হলেও বিশ্বকাপের ঘরে (ইংল্যান্ডে) ফেরা নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন, কিংবা তার সাথে ইংল্যান্ড দলেরই বা সম্পর্ক কী এমন প্রশ্ন আপনার মনে জাগতেই পারে। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মে।

সে বছর ইউরো কাপের স্বাগতিক ছিল ইংল্যান্ড। সে বারের ইংল্যান্ড দলটাকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী ছিলেন সমর্থকেরা। দলে ছিলেন ডেভিড ব্যাডিয়েল, ফ্র্যাঙ্ক স্কিনার আর সে সময়ের জনপ্রিয় বৃটপপ ব্যান্ড দ্য লাইটনিং সিডস। ইংল্যান্ডের ‘জুলে রিমে ট্রফি’ (বর্তমানের বিশ্বকাপ) জেতার ৩০ বছর পূর্তি, ইংলিশ সমর্থকরা তো আশায় বুক বাঁধতেই পারেন! তাই তারা লিখে ফেলেন বিখ্যাত সেই গান, ‘থ্রি লায়ন্স’। ‘ইট’স কামিং হোম, ইট’স কামিং, ফুটবল’স কামিং হোম’, এরকমই ছিল সে সময় তুমুল জনপ্রিয় এই গানের লিরিক।

দারুণ খেলে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গেলেও টাইব্রেকারে জার্মানির কাছে হেরে বাদ পড়ে যায় ইংল্যান্ড। পেনাল্টি মিস করেন গ্যারেথ সাউথগেট। তখনকার খুব প্রচলিত একটা কৌতুকই হয়ে যায় এমন, ‘ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম থেকে বের হবার দ্রুততম উপায় কোনটি? উত্তরটা হচ্ছে্‌ সাউথ গেট দিয়ে।’ দুই বছর পরের ফ্রান্স বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ড তাদের স্কোয়াড প্রায় অপরিবর্তিত রাখে, সমর্থকদের আশার পারদটাও তখন উঁচুতে। তবে ফলাফলও মোটামুটি অপরিবর্তিতই থাকে। রাউন্ড অফ সিক্সটিনে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বাদ পড়ে যায় তারা।

পরের বিশ বছর ইংল্যান্ডের পারফর্মেন্সের গ্রাফটা নিম্নমুখী। প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টেই তারকাখচিত একটা দল নামিয়ে দিলেও ‘একটা দল’ কখনো হয়ে উঠতে পারেনি থ্রি লায়ন্সরা। যে ম্যাচগুলো হেসে খেলে জেতা উচিত, ভুলভাল খেলে সেগুলো হেরে যাওয়া কিংবা কঠিন ম্যাচগুলোতে ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে হেরে যাওয়া, ইংল্যান্ড জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ছিলো এমনই।

একটা সময় ‘ইটস কামিং হোম’ গানটি ব্যাঙ্গ করেই গাওয়া শুরু করে ইংলিশ সমর্থকেরা। ‘ইটস কামিং হোম, ইটস কামিং, দি ইংল্যান্ড ফুটবল টিম ইজ কামিং হোম’, গানটির লিরিক্স এভাবেই পালটে দেয় তারা। তার ওপর বিশ্বকাপের জন্য যখন সেই ’৯৬ এর পেনাল্টি মিস করা গ্যারেথ সাউথগেটকে কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, সমর্থকদের বিরক্তি আর হতাশার যেন ষোলকলাই পূর্ণ হয়।

বিশ্বকাপের জন্য ইউরোর অপরিবর্তিত স্কোয়াডটি রাখায় ইংল্যান্ড দলটি নিয়ে কারোই তেমন উচ্চাশা ছিল না। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে তিউনিশিয়ার সাথে কষ্টার্জিত জয়ের পরও তাই কেউ উচ্চবাচ্য করেনি। তবে পানামাকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পর থেকেই একটু একটু করে আশাবাদী হতে থাকে সমর্থকেরা। ইংল্যান্ড দলও কাউকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে পারে, এমনটা যে তাদের কল্পনাতীত। বেলজিয়ামের সাথে একই গ্রুপে থেকেও ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠে তারা সন্তুষ্টই ছিল। রাউন্ড অফ সিক্সটিনে পেনাল্টি শুট আউটে জেতার পর থেকেই মূলত ‘ইটস কামিং হোম’ পুনর্জীবিত হয়, এর আগে বিশ্বকাপে কখনোই যে পেনাল্টি শুট আউটে জেতেনি ইংল্যান্ড! হেন্ডারসন পেনাল্টি মিস করার পর বুকে কাঁপন ধরলেও পরে পিকফোর্ডের দূর্দান্ত সেভে জিতে যায় ইংল্যান্ড। সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ার পর তো ইংলিশরা ধরেই নিয়েছিল, বিশ্বকাপ নিয়েই ঘরে ফিরবে ছেলেরা! ইংল্যান্ডের রয়্যাল এয়ার ফোর্স মহড়াও নিয়েছে এক দফা, ধোয়া দিয়ে আকাশে লিখেছে- It's coming home!

কার্টুন: 442oons

 

অবশেষে ঘরে ফিরছে ইংল্যান্ড, যদিও বিশ্বকাপে আর 'ঘরে' ফেরা হচ্ছে না! তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা খেলেই স্টেডিয়ামের 'সাউথগেট' দিয়ে বের হয়ে ঘরে ফিরবে ঘরের ছেলেরা!

৬৯০ পঠিত ... ২১:৪৮, জুলাই ১১, ২০১৮

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top