লেখা: ফারিয়া জামান নিকি
সাহারাকে আমিও মাঝে মাঝে বুঝি না। আমার তার কিছু কাজ পাগলাটে লাগে। আমি তার কিছু কাজের সাথে একাত্মতা বোধ করি না। আমার এটাও মনে হয়েছে তার অ্যাকশন হয়তো কুয়্যার কমিউনিটিকে হুমকির মুখে ফেলবে। তার হয়তো সোসাইটির সাথে মধ্যস্থতা করে বেঁচে থাকা উচিত। কখনও কখনও বেঁচে থাকাও রেজিজস্টেন্স।
আসলে আমি সাহারাকে ভালোবাসি। আমি চাই না আমার নন এনজিও কুয়্যার কমরেড এত তারাতাড়ি হারাইয়া যাক। আবার মাঝে মাঝে ও যে সহিংসতার পোস্ট দেয় সেগুলো নিয়ে আমার রাগ হয়। আমি জানি, বুঝি সে ক্রোধ থেকে লেখে, তবুও ডানপন্থীরা তার সেইসব পোস্ট নিয়ে LGBTQ মানুষের হত্যাযোগ্যতা বাড়াইতে চায় সেটা অনেক সময়েই আমরা মোকাবিলা করতে পারি না। কারণ, মিডিয়া ন্যারেটিভ বানানোর ক্ষমতা তাদের যতটা আছে, আমাদের নাই।
তাইলে আমি আসলে কী চাই? আমি কীভাবে LGBTQ মানুষের অধিকার আদায় করতে চাই?
এটার আমার কাছে কোনো উত্তর নাই। গতকাল থেকে নিজের সাথে একটা যুদ্ধ গেলো। মনে হলো আমরা কি সাহারাকে একটা সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতেছি? আমাদের কি উচিত হইতেছে মেয়েটাকে মরার দিকে নিয়ে যাওয়া?
এই প্রশ্ন আমাকে আরও বেসিক প্রশ্নর দিকে ঠেলে দিয়েছে। মানুষের জীবন, সে জীবন কি খালি টিকে থাকার জন্য? আমি নিজেও কি টিকে থাকাকেই সফলতা মনে করি? এই আমিই কি ইরানে যখন একটা মেয়ে প্রচণ্ড ক্রোধে সব কাপড় খুলে ফেলে তখন পাওয়ারফুল ফিল করি না? এই আমিই যখন ভারতে মুসকান হিন্দুত্ববাদী মবের সামনে 'আল্লাহু আকবার' বলে সেটা সাপোর্ট করি না? এইগুলো তো কোনোটাই 'সেফ' দাবি আদায়ের পদ্ধতি না।
হয়তো যদি আমার বিপ্লবীদের সাথে দেখা হইতো, তাদেরও আমি বলতাম সাবধান থাকতে, বেঁচে থাকতে। আরামে বেঁচে থাকা আর পরিবর্তন—এই দুইটার মধ্যে একটা আমাদের বেছে নিতে হয়।
আমি চাই দেশে LGBTQ মানুষ লিগ্যাল অধিকার পাক। বিয়ে একটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সেটা যেমন সত্য, LGBTQ মানুষের নিগ্রহও একটা পুঁজিবাদী শোষণ এটাও সত্য।
আমি জানি আপনারা বলবেন, এই সমাজে যেখানে LGBTQ মানুষের নিরাপত্তা নাই,বাঁচার অধিকার নাই সেখানে বিয়ের অধিকার ম্যাডনেস।
প্রিয় কমরেডরা, আমাদের বামপন্থীদের বিপ্লব কতটুকু বাস্তবসম্মত? তবুও কি আমরা সাম্যের একটা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি না? এটা কি ম্যাডনেস না?
আমরা যারা সাম্যের কথা বলি, অধিকারের কথা বলি সবাই খানিকটা ম্যাডই। সাহারাও ম্যাড, খালি আরেকটু তীব্রভাবে ম্যাড। আর বর্তমান দুনিয়াতে যারা পাগল না, তাদের ন্যুনতম এম্প্যাথি নাই। মানসিকভাবে সুস্থ মানুষরাই আসলে সাইকোপ্যাথ। নতুবা এই জুলুমের পৃথিবীতে মানসিক সুস্থতার কোনো এলিমেন্ট নাই।
হয়তো সাহারা মরে যাবে কিংবা বেঁচে থাকবে। হয়তো সাহারা সেইন হবে কিংবা ইনসেইন। তাতে কিছু যায় আসে না। তার ম্যানিফেস্টোটা, কুয়্যার অধিকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট হিসেবে এই দুনিয়াতে থেকে যাবে।
সাহারাকে নিয়ে আমার একগাদা ভাবনা, দুশ্চিন্তা, ক্রোধ আর ভালোবাসা একসাথে হিট করে। ওকে নিয়ে বেশীক্ষণ ভাবতে পারি না। আপনাদের অনুরোধ করবো সাহারার ফেইসবুক পোস্ট না দেখে ওর ম্যানিফেস্টোটা পড়ার জন্য। বাংলাটা পড়া খুব কঠিন, পারলে ইংরেজিটা পইড়েন। এটা একটা চমৎকার লেখা।
পরিশেষে সাহারার জন্য চে'র একটা কথা বলে শেষ করতে চাই, 'বাস্তববাদী হও, অবাস্তবকে দাবি করো।'
সকলের এই সমাজে টিকে থাকার প্রয়োজন নাই। সাহারার মতো মানুষ ভাংচুর করতে জন্ম নেয়। সাহারাকে ভাংচুর করতে দেন। সাহারা লিবারেল, বিগট, লুথা, এনজিও এক্টিভিস্টসহ অনেক মানুষের ভাবনায় যে একটা ঝড় আনতে পারছ- এটাই বা কয়জন পারে?
পাঠকের মন্তব্য