লেখা: শোয়েব মাহমুদ অনন্ত
সবচেয়ে ফালতু আলাপের একটা হইল বাংলাদেশের সংস্কৃতি কলকাতা কেন্দ্রিকতা মুক্ত হইতে পারে নাই। বাংলাদেশের সংস্কৃতি কোনোকালেই কলকাতামুখী ছিল না। এইখানে লোকে সেই শতবছর আগে থেকেই রাধারমণের গান গাইত, এইখানে দূরবীন সাঁই লিখত ‘নামাজ আমার হইল না আদায়রে আল্লাহ’, এইটা মুর্শিদি, ভান্ডারী, ভাটিয়ালির দেশ। যে দেশ ছাইড়া যায়া হেমাঙ্গ বিশ্বাস লিখতাছে’ ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কলকাইত্তার ওপর, তুমরা আমায় চিনোনি’।
বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতিতে কলকাতার নজরুল ইসলাম কিংবা রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের চেয়ে আব্দুল করিমের, লালনের প্রভাব বেশি। এইখানে মানুষ বিশ্বাস করে রমেশ শীল মইরা যায়া শাপলা ফুল হয়ে গেছিল বাবা মাইজভান্ডারির দয়ায়, এইখানে সৈয়দ শাহনুর শুকনা দিয়া নাও বাইয়া যায়। এই দেশে নজরুলের ঠুমরি, কর্ণাটক শ্যামন্তি রাগের গান আমাদের লোকজন সংস্কৃতি হইয়া উঠে নাই কখনও, এইনে মানুষ খুঁজে পাইছে বিচ্ছেদের বাজার, গান গাইছে কেরোসিন বাত্তি ধরায়া। এইসব বাদ দিলেও ৮০-২০০০ বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতই এনাফ ছিল, কলকাতাই বরং এইমুখী ছিল যে ন্যাকা সুরে কেমনে মাইলসের একটা কাভার করা যায়। এখন আপনি মানুষকে আমপাতার বাঁশি বাজাইতে দিবেন না, মাজারে যায়া গানবাজনা করতে দিবেন না, মানত করতে দিবেন না, বাউল দেখলে পাগল দেখলে পিটাইবেন, দেশের সমস্ত লোকজ সংস্কৃতি মব করে উচ্ছেদ করবেন, আপনার রাষ্ট্র একটা সীমাহীন সম্ভাবনার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে খাবে, এরপর শিল্পীদের কনসার্টও করতে দিবেন না, আবার এসে গল্প মারাবেন যে এসব ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে লোকের মনের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ, আপনার এইসব বুদ্ধিজীবিতা নিয়া মারা খান মিয়া।
এইসব ভাউতা দিয়া দেশের সংস্কৃতি নষ্ট করার ধান্ধা বেশিদিন টিকব না। এইনে লোকে চুল বড় কইরা, ঢোল বাজায়া নাচবেই, গাবেই ‘আওলাদে রাসুল মদীনার ফুল আমার বাবা মওলনা’, এইটা এমন এক দেশ যেইনে চান সরকারের নামে মামলা দিলে সে গান লিখে ফেলে, ম্যাজেস্টের শামসুল হক জাবিন দিলো না, মাতাল রাজ্জাক কয় শ্রীমধূসূদন বিপদভঞ্জন, ব্রজের ব্রজানন্দ নারায়ণ, ভজিব তোমার রাঙাচরণ দয়াল। আমরা পাগল, আমরা বাউল, আমরা দিনদুপুরে কানতে পারি, এহেই জগতে আমার কেহ নাই ওহ হো তাহেরী ভাই বইলা। মব করতে আসলে, আবার মবের পক্ষে ইলজিক্যাল বয়ান তৈরি করতে আসিলে একদম সোজা আলাপ, ‘বেশি ফাল পারিস না, পালাইবার জায়গা পাবি না।’