সংস্কৃতির রাজধানী বলে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। সর্বত্র ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় যখন ক্যাম্পাসে সবকিছু অটোমেশনের যুগে প্রবেশ করেছে(!) ঠিক তখনই ক্যাম্পাসে কনসার্ট ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোকে সাইলেন্ট কনসার্ট হিসেবে আয়োজনের উদ্যোগ নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মুক্তমঞ্চ কিংবা ক্যাম্পাসের অন্য কোথাও নাচ গান কিংবা মাইকের ব্যবহার হয় এমন প্রোগ্রামে হেডফোন ব্যবহার বাধ্যতামূলক ও সূর্য ডোবার আগেই শেষ করতে বলার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনার জানান দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক উন্মাদনা কাজ করছে। যে ক্যাম্পাসে একসময় মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান করতে হলে তিন সপ্তাহ আগে লাইন ধরতে হতো, এখন সারা বছর প্রায় ফাঁকাই পড়ে থাকে। তারপরও যদি এখন সেখানে কোনো অনুষ্ঠান হয় সেটা কিন্তু কোনো শব্দ ছাড়া হবে। চাইলে এটাকে শিল্পের নবযুগও বলা যায়, কিংবা প্রশাসনিক কৃতিত্ব। দুদিকেই মানায়।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা, এখানে রাতে উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে নাচানাচি করে পড়াশোনার ডিস্টার্ব করার যে আদি প্রচলন আছে সেটাকে উৎখ্যাত করার জন্য সাইলেন্ট কনসার্টের প্রচলন করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাউন্ড সিস্টেমের সাথে ডাইনামিক্যালি কানেক্টেড থাকবে এমন হেডফোন ব্যবহার করা হবে সাথে কারও ব্যক্তিগত ব্লুটুথ হেডফোন দিয়ে কনসার্টের আনন্দ নিতে পারবে। এতে যেমন পরিবেশের ক্ষতি একদম শূন্যতে নেমে আসবে তেমনি করে কনসার্টের উপভোগ্যতা কয়েকগুন বাড়বে।
শীতকাল আসলে ভাপা পিঠা বিক্রির মতো সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম হয়। ক্যাম্পাসে যেখানে ৯০% শিক্ষার্থী রাতে পড়াশোনা করে সেখানে লাউড স্পিকারে ১০% শিক্ষার্থীর গান গাওয়া, নাচ করা একটা বিলাসী ব্যাপার। সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি পূরণ করতে পেরে প্রশাসনও বেশ চনমনে মেজাজে আছে। আগামী সপ্তাহেই হয়তো একটা সাইলেন্ট রেভ পার্টি আয়োজন করা হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে বলা হয়েছে নতুন এই এক্সপেরিয়েন্স নেওয়ার জন্য।
আভ্যন্তরীণ সূত্র থাকে জানা গেছে, রাতে উচ্চশব্দে গান বাজলে আশেপাশের হলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে নাচানাচি করে। পরীক্ষায় খাতায় গান লিখে আসে। এমন চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগ ছাড়া আর কোনো বিভাগই থাকতে পারবে না। পড়াশোনার মান রক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক র্যাংকিং-এ ওপরে টেনে তোলার জন্য অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন প্ল্যান করছিল প্রশাসন। সেই প্ল্যান মোতাবেক নতুন এই সিস্টেমের প্রচলন করতে যাচ্ছে। এতে যেমন শিল্পচর্চা থাকবে, পরিবেশ শান্তি থাকবে, তেমনি প্রশাসনও নিশ্চিন্তমনে ঘুমাতে পারবে।
এছাড়া সূর্য ডোবার পর ক্যাম্পাসে বড় অনুষ্ঠান করা যাবে না, এর পেছনে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নতুন এক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। সময়সীমার ব্যাখ্যায় এক কর্মকর্তা বলেন, সূর্য ডোবার পর শব্দ তরঙ্গ অনেক বেশি ছুটে বেড়ায়। প্রশাসনিকভাবে সামলানো কষ্টকর হয়ে যায়। ছাত্ররাও এই যুক্তিকে বিজ্ঞানের নতুন অধ্যায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছাত্রদের পড়াশোনার পরিবেশ রক্ষা করা। যেহেতু ৯০% শিক্ষার্থী রাতে পড়াশোনা করে, আর ১০% শিক্ষার্থী তখন গান গেয়ে বাকিদের পড়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, তাই শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এটিই।
এখন থেকে যদি কেউ মুক্তমঞ্চে শত শত মানুষকে নাচতে দেখে, কিন্তু শব্দ কিছু না শোনে, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। শুধু মনে করবেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক রাজধানী থেকে এখন সাইলেন্ট রাজধানী।


