মাঝি জো নাও ডুবোয়ে উছে কোন বাচায়ে

৮১ পঠিত ... ১৭:০৭, এপ্রিল ১২, ২০২৫

26thumb

মুখে রুমাল দিয়ে রাস্তাটা পার হবার অপেক্ষা করতে করতে হাত থেকে ফাইলটা পড়ে যায়। মাথার ওপর ঠাঠা রোদ্দুর; সেই রাজারহাট নতুন টাউন থেকে আসতে আসতে ঘেমে নেয়ে একাকার। হঠাৎ একটা নরম হাত এসে হাত স্পর্শ করে।

: দাঁড়াও; আমি ফাইলটা গুছিয়ে দিচ্ছি।

এত মিষ্টি কণ্ঠ জীবনে কখনও শোনেনি। নেত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে ভক্ত কলেজ ছাত্রী; সবাই তারস্বরে চেঁচাতো; কেউ কখনও এমন রিনি রিনি কণ্ঠে বলেনি, আমি ফাইলটা গুছিয়ে দিচ্ছি। এমন মিহি কণ্ঠ যাতে কাঁচের জানালায় চিড় ধরে যায়। ফাইলটা গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালে মনে হয় এক জ্যোতস্নাদায়িনী দেবী সামনে দাঁড়িয়ে। টিস্যু দিয়ে কপাল মুছে দিতে দিতে বলে, ওমা দর দর করে ঘাম ঝরছে। কোথায় যাবে হাসপাতালে; আমি সাথে চলছি।

রাস্তাটা হাত ধরে পার করে দেবার পরেও হাতটা ছাড়তে ইচ্ছা করে না। ডাক্তার প্রেশার চেক করে বলে, দুঃশ্চিন্তা করা ছাড়ুন মশয়; নইলে একদিন হার্টফেল করে মরবেন যে।

ডাক্তার এবার মেয়েটিকে বলে, শুনুন আপনার স্বামী দেবতার স্পেশাল কেয়ার প্রয়োজন। ওষুধ লিখে দিচ্ছি। নিয়ম করে খাওয়াবেন। আর উনাকে আনন্দে রাখতে হবে। হতাশা হলো সব চেয়ে বড় ব্যামো।

ডাক্তারের ফি দেবার জন্য পকেটে হাত রাখতেই, মেয়েটি বলে, রাকো দিকিনি; ও আমায় দেখতে দাও।

ব্যাগ খুলে টাকা বের করে ডাক্তারের ফি দেয় মেয়েটি। তারপর হাত ধরে হাসপাতালের নিচে নিয়ে আসে। এরপর ট্যাক্সি ডেকে তাতে তোলে।

হাত থেকে রোলেক্স ঘড়ি খুলে মেয়েটির হাতে দিয়ে বলে,

রিক্ত আমি শূন্য আমি,

দেবার কিছু নাই,

আছে শুধু ভালোবাসা,

গ্রহণ কর তাই।

মেয়েটা বলে, ঘড়ি খুলে দিলে অমঙ্গল হয় গো। শুধু ভালোবাসা পেলেই হবে আমার।

লাজরাঙ্গা হয়ে গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, কী সব ছাই ভস্ম করে জীবনটা ক্ষয় করেছে; কী এক সোনার হরিণের পেছনে ছুটে হার্টের ভালভ খুলে ফেলেছে। সবার জন্য এত করেও কারও মন পায়নি। জীবনে যত নারী এসেছে সবাই এসেছে একটা কিছু চাওয়া নিয়ে। শুধু ভালোবাসা চায় এমন কারো সঙ্গে এই প্রথম দেখা।

রাস্তায় ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে মিছিল দেখে বলে, তোমাকে বলা হয়নি, আমি কিন্তু মুসলমান।

: ভালোবাসার কোনো ধর্ম নেই গো।

রসিকতা করে বলে, যদি ওরা বলে আমি স্মার্ট বাংলাদেশ থেকে এসে লাভ জিহাদ করেছি।

স্মার্ট বাংলাদেশ শুনেই গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।

মেয়েটা হাসতে থাকে। হাসির রিনি রিনি শব্দে চারপাশের রোদ হঠাৎ হলুদ বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকে।

: এবার নামুন মশয়, একটু হেঁটে গেলেই আমার বাড়ি।

দূর থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি দেখে গুন গুন করে গেয়ে ওঠে,

কণ্ঠে নিলেম গান, আমার শেষ পারানির কড়ি—

একলা ঘাটে রইব না গো পড়ি॥

আমার সুরের রসিক নেয়ে

তারে ভোলাব গান গেয়ে,

পারের খেয়ায় সেই ভরসায় চড়ি॥

গান শুনে মেয়েটি বলে, তুমি তো বেশ রসিক জন হে!

: ওমা আমি সংস্কৃতি মন্ত্রী ছিলেম যে।

: বাবা ভিখিরিনীর ঘরে মন্ত্রী মশোয়; তোমায় যে কোথায় বসতে দিই।

: তোমার হৃদয়ের আসনখানিই যথেষ্ট গো; চাইনে আমার রাজ সিং হাসন।

: এখন বিশ্রাম করো, আমি একটু জলখাবারের ব্যবস্থা করি।

মেয়েটা ঘরেতে ভ্রমর এল গুন্‌গুনিয়ে।

আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে॥

গাইতে গাইতে কিচেনে কাজ করতে থাকে। খুবই অল্পসময়ের মধ্যে লুচি ভেজে, পাঁচ ফোড়ন দেয়া সবজি আর লাচ্ছি বানিয়ে ট্রেতে করে নিয়ে আসে।

মুগ্ধ হয়ে বলে, তোমার দশহাত নাকি গো!

: নাও আর ঢং করতে হবে না। খেয়ে নাও দেখি। আজ তোমায় গঙ্গার ধারে হাওয়া খেতে নিয়ে যাবো।

খেতে খেতে চাঁদপানা মুখখানির দিকে তাকায়। লুচি বানাতে গিয়ে চিবুকে একটু ময়দা লেগে আছে। দু'পাশ থেকে চুলের দুটি রিং ঝুলে আসে। বিধাতা নিজ হাতে গড়েছেন এই ময়ূরাক্ষী জ্যোতস্নাময়ীকে।

গঙ্গায় একটা বড় নৌকা ভাড়া করে সেখানে ওঠে দুজন। আজ ভীষণ চনমনে লাগছে। স্বপ্নের মতো লাগছে। প্রেশার নরমাল হয়ে এসেছে। হার্টের অপারেশনের পর দ্বিতীয় জনম পেয়ে ফুল বাগানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে মনটা চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু চারিদিকে বাজখায়ি নারীকন্ঠের হুংকার; শেয়ালের চিতকারে প্রতিদিনই একটু একটু প্রাণশক্তি হারিয়ে যাচ্ছিলো।  আজ আবার নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছা করছে।

: কী ভাবছো গো অমন উদাস হয়ে!

: ভাবছি খুনের মামলা মাথায় নিয়ে পলাতক আমি! আমি কি তোমার যোগ্য!

: খুনের মামলার আসামিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি যখন; প্রেমিক খুনী হলেও তা মানিয়ে নিতে হবে। জন্মেছি যখন খুনীদের অঞ্চলে। প্রায়ঃশ্চিত্য করো; আমি তোমায় আজমীর শরিফে নিয়ে যাবো। দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর,

ভালোবাসিবারে দে আমায় অবসর!

সাঁঝ নেমেছে। হাওড়া ব্রিজের আলো দূর থেকে দেখা যায়। নীল শাড়ি আর নীল টিপে অপরুপা লাগছে ওকে। মেয়েটা ফ্লাস্ক থেকে একটু খুশিজল ঢেলে গ্লাসে দেয়। আর মোবাইল ফোনে কিশোর কুমারের একটা গান বাজিয়ে দেয়।

চিঙ্গারি কই ভাড়কে, তো শাওন উছে বুঝায়ে

শাওন জো আগুন লাগায়ে উছে কোন বুঝায়ে...

হামছে মাত পুছো মন্দির টুটা স্বপ্নকা

লোগোকি বাত নেহি হ্যায় ইয়ে কিসসা হ্যায় আপনোকা।

৮১ পঠিত ... ১৭:০৭, এপ্রিল ১২, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top