ভদ্রঘরের পোলা হয়া রাত দুইটার সময় পার্টিতে কী করতে গেছিলি?

১১২৯৪ পঠিত ... ১০:৫৩, মে ১৩, ২০১৭

আর ইউ ওকে টু টক?

সামনে বসা পুলিশ অফিসারের প্রশ্ন। গলায় অঢেল কোমলতা। ধবধবে সাদা চামড়া। নীল চোখ। রিয়েল অ্যামেরিকান পুলিশ।

বাড়াকাত মোটেই ওকে না। ওকে থাকার কথাও না। পশ্চাৎদেশের ব্যথা কঠিন ব্যথা। কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে দংশেনি যারে!

বাড়াকাতের মনে হচ্ছিল অন্য কথা। এই ব্যথার চেয়ে আশীবিষের কামড় ভালো ছিল। হায় রে সাপ! তুই কামড় দিলি না, কামড় দিল অভিশাপ!

বাড়াকাত জোরে জোরে মাথা নাড়ল, ইয়া! আই অ্যাম ওকে!

অভিশাপই বটে। আল্লায় যারে দেয় ছাপ্পড় ফুইড়া দেয়। গজবটাও ঐভাবেই দেয়। নইলে কী সুন্দর সাজানো গোছানো এক জীবন। সব ছারখার! এক রাতের মধ্যে!

যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে।

বাড়াকাতের কোনো দুয়ার ভাঙে নি। বরং প্রশস্ত একটা খিড়কি দরজা তৈরি হয়েছে।

বাড়াকাত দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল একটা। তারপর বলল, আই অ্যাম রেডি!

অফিসার বলল, গুড! ইট উইল নট টেক এ লং...

লাইনটা শুনেই পেট গুরগুর করে উঠল আবার। ঠিক এই লাইনটাই বলেছিল জোপিটো আর ম্যাথিউ। টু ব্ল্যাক জায়ান্টস। দাঁত বের করে হেসে বলেছিল, ইট উইল নট টেক এ লং...

তারপর চলল সারারাত। মনে পড়তেই কেঁপে ওঠে বাড়াকাত।

অফিসার জিজ্ঞেস করল, তুমি ওদের চিনতে?

বাড়াকাত শ্বাস টানল, নাঃ! একজনকেই চিনতাম, ল্যারি!

কীভাবে ল্যারির সাথে পরিচয়?

ম্যানহাটানের এক রেস্টুরেন্টে। দু বছর আগে। আমরা একসাথে কাজ করতাম!

তারপর?

আমার বেশ ভালো বন্ধুই ছিল। লাস্ট উইকেন্ডে রাতে আচমকা ফোন করে বলল, কী করছ ফ্রেন্ড? ফ্রি আছ নাকি?

হুমম। তারপর?

বললাম, ফ্রি আছি। তখন ল্যারি বলে, চলে আস। আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি!

বললাম, রাত দুইটা বাজে। এই সময়ে?

ল্যারি বলে, ডোন্ট ওরি মাই ফ্রেন্ড। আই উইল পিক ইউ আপ। প্লিজ ডোন্ট সে নো!

কোথায় পার্টি হচ্ছে?

ব্রোঙ্কসে। বন্ধুর নিজের বাড়িতে।

ব্রোঙ্কস শুনে ভালো লাগল না। বললাম, এই রাতে ওদিকে যাব না। ওখানে ভালুক সাইজের শ্যামসুন্দর কিছু আছে। তাদের দেখলে হার্টের আয়ু কমে।

ল্যারি বলল, ট্রাস্ট মি। নো হার্ম উইল হ্যাপেন। ধুম মজা হবে। অফুরান ড্রিঙ্ক আর বারবিকিউ চিকেন। তারপর এক পরত গলা নামিয়ে বলল...

বাড়াকাত চুপ মেরে গেল। অফিসার ভুঁরু তুলে তাকাল, কী বলল?

বাড়াকাত দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল আবার একটা। বলল, দেয়ার উইল বি লটস অফ হট চিকস ম্যান!

আর কিছু বলল?

আড়চোখে পুলিশের দিকে তাকাল বাড়াকাত। তারপর একটু উদাস হওয়ার চেষ্টা করল।

লুক মিস্টার ব্যারিকেড, তুমি সব খুলে বল। ইনভেস্টিগেশনের জন্য সবরকম তথ্য জরুরি।

খুকখুক করে কাশল বাড়াকাত, ল্যারি আরো বলল, দেয়ার ইজ এ গুড চান্স দ্যাট উই ক্যান এরেঞ্জ এ গ্যাংব্যাং পার্টি। এন্ড অফকোর্স ইউ ক্যান জয়েন!

অফিসার গম্ভীর গলায় বলল, হুমম।

বাড়াকাত ভেজা গলায় বলল, আমি অবশ্য জয়েন করতাম না। আই অ্যাম ফ্রম এ রয়েল ফ্যামিলি। আই ওয়ান্টেড টু বি এ ভিউয়ার অনলি। কিউরিসিটি ডিমান্ড।

আই বিলিভ ইউ। বাট কিউরিসিটি কিল্ড দ্যা ক্যাট। তারপর?

গিয়ে দেখি, একটা সত্যি আরেকটা মিথ্যা।

কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা?

দেয়ার অয়্যার নো হট চিকস!

এন্ড?

দেয়ার ওয়াজ এ রিয়েল গ্যাংব্যাং পার্টি! এন্ড আই ওয়াজ দেয়ার বয়!

বাড়াকাত হুহু করে বেদনাঘন ফন্টে কেঁদে উঠল!

অফিসার গভীর গলায় বলল, আই অ্যাম সো সরি!

পুলিশ স্টেশনের ছোট একটা রুম। সেখানেই কথা চলছে। পাশের রুমে বসে আছে বাড়াকাতের ভাই শাফকাত। তিনি অস্থিরতা রোগে আক্রান্ত। একটু পর পর হাত-পা, মাথার চুল খামচাচ্ছেন। চোখের পানিও ফেললেন বারকয়েক। বললেন, আমরা মুগুরহাটের হাজীবাড়ির পোলা। আমগোরে এইভাবে অপমান। সব পানিতে গেল। দেশটা কই যাইতাছে! আমরা কি এই দেশ চেয়েছিলাম?

তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা চলছে। চেষ্টা করছেন এলাকার আরো দুয়েকজন বাঙালি ভাই। বাড়াকাতের দুর্ঘটনার কথা শুনে তারাও দৌড়ে এসেছেন। এ কেমন কথা? এমন তো তাদেরও ঘটতে পারত! বন্ধুবেশে ডেকে নিয়ে গণবলাৎকার। দেশ নিয়ে এমনিতেই কত টেনশন। এখন এর মধ্যে যুক্ত হল পশ্চাৎদেশ! ভাবা যায়?

অফিসার বলল, তাদের চেহারার বিবরণ দিতে পার?

বাড়াকাত ভয়ার্ত গলায় বলল, মোটা, কালো, লম্বা...

অফিসার থমকে খানিক তাকিয়ে থেকে বলল, ওকে, আই গট ইট!

আরো খানিকক্ষণ চলল ইন্টারভিউ। শেষ করে রুম থেকে বেরোল বাড়াকাত। তাকে দেখেই আবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠল শাফকাত। দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরতেই হাত ঝাড়া দিল বাড়াকাত, ছাড়! ধরবা না! পুরুষমানুষের স্পর্শ অসহ্য লাগে!

শাফকাত শার্টে চোখ মুছে বলল, কী কস, আমিও পুরুষমানুষ? আমি তোর ভাই...

বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে বাড়াকাত বলল, তোমরা সব পুরুষই এক...

শাফকাত রাগে খেঁকিয়ে উঠে বলল, আর তুই খুব ধোয়া তুলসীপাতা, না? ভদ্রঘরের পোলা হয়া রাত দুইটার সময় তুই পার্টিতে কী করতে গেছিলি?

বাড়াকাত গলা ফাটিয়ে বলতে গেল, আবালের মতো কথা কইয়ো না!

কিন্তু তার গলায় স্বর ফুটল না। চুপসে গেল ফুটো বেলুনের মতো। তার মনে পড়ে গেছে মাস ছয়েক আগের কথা। বন্ধুর বার্থডে পার্টিতে গিয়ে রেপড হয়েছিল দুই ছাত্রী। সে ঘটনা শুনে সবজান্তার মতো মাথা নেড়েছিল বাড়াকাত। তারপর শাফকাতের মতো সেও খেঁকিয়ে উঠে বলেছিল, ভদ্রঘরের মাইয়া রাইত দুইটার সময় পার্টিতে কী করতে গেছিল?

১১২৯৪ পঠিত ... ১০:৫৩, মে ১৩, ২০১৭

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top