এরিয়া ৫১ মিমস: কী, কেন ও কীভাবে ভাইরাল হলো অনলাইনে!

১৮৬৯ পঠিত ... ১৮:৩৬, জুলাই ২৩, ২০১৯

ঠিকঠাক গবেষণা ও কেস স্টাডি করলে হয়তো নারী মনের রহস্যও বের করে ফেলা সম্ভব, কিন্তু ইন্টারনেটে কীভাবে কোন কিছু ভাইরাল হয় তা বের করা কোনভাবেই সম্ভব না। একটি মুরগির ডিমের ইনস্টাগ্রাম  প্রোফাইল, আমেরিকার হারামবে নামের এক মৃত গরিলা, কিংবা একটি ড্রেসের রঙ সোনালী না নীল- এগুলো ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি ‘ট্রেন্ডিং’ জিনিসের তালিকায় ছিলো -অনলাইনে না থাকা কোন মানুষকে তা বিশ্বাস করানো কঠিন কাজই হবে।  

 

 

বিচিত্র এই ইন্টারনেট জগতে বর্তমানে সবচেয়ে ট্রেন্ডিং জিনিস সম্ভবত ‘এরিয়া ৫১’। যারা অবসরে কিছুক্ষণের জন্য নিউজ ফিড হালকা ব্রাউজ করা ছাড়া তেমন একটা অনলাইনে সময় দেন না, তারা হঠাৎ নিউজ ফিডে এরিয়া ৫১ নিয়ে মিম, টুইট স্ট্যাটাসের বন্যা দেখে স্বাভাবিকভাবেই একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এরিয়া ৫১ জিনিসটা কী?  আর এখানে যাওয়ার জন্য সবাই হঠাৎ এত মরিয়া হয়ে উঠলো কেন?

 

 

হলিউডের সিনেমা-সিরিজ কিংবা আমেরিকান ভিডিও গেমের ভক্ত হলে হয়তো বা এরিয়া ৫১ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের কাছেই নেভাদায় বিরান মরুভুমির মাঝে অবস্থিত মার্কিন বিমানবাহিনীর ‘নেভাদা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জ’। কাগজ কলমে ‘হোমি এয়ারপোর্ট’ বলা হলেও সবার কাছে এটি ‘এরিয়া ৫১’ নামেই এটি পরিচিত। মার্কিন বিমানবাহিনী কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গোপনীয় নানা এয়ারক্র্যাফট আর ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে এখানে গবেষণা করা হয় বলে অফিসিয়ালি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বহু বছর ধরেই অনেকে আবার দাবি করে আসছেন, পৃথিবীতে এলিয়েনদের স্পেসশিপ বা ইউএফও এসেছিলো, কিন্তু সেটি মার্কিন এয়ারফোর্স উদ্ধার করে এই এরিয়া ৫১-এ এনে লুকিয়ে রেখেছে। এলিয়েন ও তাদের স্পেসশিপের উপর গবেষণা করা হয় বলেই এখানে এত গোপনীয়তার তোড়জোড় আছে বলে অনেকেই মনে করেন। এর ভেতরে জীবিত এলিয়েন আছে বলেও অনেক মনে করেন। তবে তাদের এই ধারণার কোন শক্ত ভিত্তি বা প্রমাণ নেই। 

 

এরিয়া ৫১

কিন্তু হঠাৎ করে এরিয়া ৫১ আবার আলোচনায় আসে ২৭ জুনের পর থেকে। ‘Shitposting cause im in shambles’ নামের এক মিম পেজ আর ‘SmyleeKun’ নামের এক ভিডিও গেম স্ট্রিমার মিলে ফেসবুকে  এ বছরের ২০ সেপ্টেম্বরের জন্য একটি ইভেন্ট খুলেন, যার নাম ‘Storm Area 51, They Can’t Stop All of Us’. যাকে বাংলা করলে ‘চলো চলো এরিয়া ৫১ চলো, মোদের সবাইকে রুখতে পারবে নাকো’ বললেও খুব বেশি ভুল হবে না।

 

ইভেন্টটির ডেসক্রিপশনে লেখা আছে, ‘আমরা সবাই এরিয়া ৫১-এর “এলিয়েন সেন্টার টুরিস্ট এট্রাকশন”এ দেখা করবো, এবং ভেতরে ঢোকার প্ল্যান করবো। যদি আমরা সবাই নারুটোর মতো  দৌড়ে যাই, তবে আমরা বুলেটের চেয়েও জোরে যেতে পারবো। চলো এবার এলিয়েন দেখে আসি।’ এছাড়াও এই এরিয়া ৫১ মিশনের একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের লিংকও দেয়া আছে সেখানে। তবে এই ওয়েবসাইটে একটি টিশার্ট কেনার লিংক ছাড়া বিশেষ কোন তথ্য এখনো দেয়া হয় নি। 

 

 

এই ইভেন্ট থেকেই শুরু হয় এরিয়া ৫১ নিয়ে জল্পনা কল্পনা। বর্তমানে ১.৯ মিলিয়ন ফেসবুকার এই ইভেন্টে ‘গোয়িং’ অপশন সিলেক্ট করেছে। ১.৪ মিলিয়ন ফেসবুকার এতে যাওয়ার ব্যপারে আগ্রহও প্রকাশ করেছে। এরিয়া ৫১-এ যাওয়া হোক বা না হোক, এই ‘ইন্টারনেট-ভাঙা’ ট্রেন্ডটি নিয়ে আলোচনায় মেতেছে পুরো অনলাইন বিশ্ব। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, রেডিট, টাম্বলার, নাইনগ্যাগ- সবখানেই চলছে এরিয়া ৫১ নিয়ে আলাপ-আলোচনা।   

 

 

 

স্বাভাবিকভাবেই মিমাররাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এত অদ্ভুত একটি প্ল্যান নিয়ে বানানো মিমগুলো যে আরো অদ্ভুত হবে- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সবাই মিলে যেভাবে এয়ার ফোর্সের নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এরিয়া ৫১-এ ঢুকবে, সেখান থেকে এলিয়েন বন্ধুদের ছাড়িয়ে আনার পর কীভাবে একসাথে সবাই মিলে চিল করবে, কিংবা লুকিয়ে রাখা ইউএফও নিয়ে কীভাবে আকাশ মহাকাশ ঘুরে বেড়াবে- এসব নিয়ে মিমের পাশাপাশি পছন্দমতো কোন এলিয়েন জীবনসঙ্গী বেছে নিয়ে ফরেভার সিঙ্গেল লাইফের যন্ত্রনার অবসান ঘটানো যাবে, এমন রসিকতাও করছেন অনেকেই। 

১#

 

 

২#

 

৩#

 

 

৪#

 

 

৫#

 

 

৬#

 

 

৭#

 

কৃতজ্ঞতা: rantages goatposting

 

৮#

 

 

৯#

 

 

১০#

 

 

১১#

 

 

১২#

 

 

শুধুমাত্র ইন্টারনেটেই ভাইরাল এই ট্রেন্ডটি কিন্তু মার্কিন বিমানবাহিনী অতোটাও হালকাভাবে নিচ্ছে না। এয়ারফোর্সের একজন মুখপাত্র ১৬ জুলাই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, এরিয়া ৫১ শুধুই মার্কিন বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান টেস্টিং এবং ট্রেনিংয়ের একটি স্থান। কিন্তু কোন অনুপ্রবেশকারী এর ভেতরে আসার চেষ্টা করলে তা বিপদজনক হতে পারে। 

এই ট্রেন্ডে ইতিমধ্যে ‘মাশাটে’ সিনেমার অভিনেতা ড্যানি ট্রেহো, গেম অফ থ্রোনসের অভিনেতা লিয়াম কানিংহ্যামসহ অনেক তারকাও টুইটারে এরিয়া ৫১ মিশনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। সংগীতশিল্পী লিল ন্যাস ইতিমধ্যে এই ট্রেন্ড নিয়ে ৪টি গানও রিলিজ দিয়েছেন। আরো তারকাও সামনে এ ব্যপারে মুখ খুলবেন, তা আশা করাই যেতে পারে।

 

তবে সে আশায় অপেক্ষা না করে অনলাইনের মিমাররা চাক নরিস, ইলন মাস্ক, কিয়ানু রিভস প্রমুখ সেলিব্রিটিদের এরিয়া ৫১ মিশনে যাওয়ার ফেইক স্ন্যাপচ্যাটের মজার সব ছবি পোস্ট করেই যাচ্ছেন। 

 

 

আর দশটি ভাইরাল জিনিসের মতো এটিও ইন্টারনেটে শুরু হয়ে ইন্টারনেটেই শেষ হয়ে যাবে, নাকি আসলেই কেউ এরিয়া ৫১-এর উদ্দেশ্যে লংমার্চে বের হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল যথেষ্ট।অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর এলে মিলিয়ন মিলিয়ন এলিয়েনপ্রেমীদের অনেকেরই এরিয়া ৫১ রেইড করার আগ্রহ মিলিয়ে যায়। নেভাদার মরুভূমিতে ২ হাজার মানুষ এই সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশের জন্য রওনা দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রধান ফটকে পৌঁছায় মাত্র শ’খানেক হার্ডকোর এলিয়েন ফ্যান। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন সেনাদের কড়া নিরাপত্তা (এই ইভেন্টের জন্য আরো কড়াকড়ি) ভেদ করে কেউ প্রবেশ করতে পারে নি তথাকথিত ‘এলিয়েনের আস্তানা’ এরিয়া ৫১-এ। ফটকের সামনে ছবি তোলা ছাড়া তারা ভেতরে ঢোকার তেমন কোন চেষ্টা করে নি বলে জানা যায়। এ ঘটনা চলাকালে একজন গ্রেফতার হয়েছে, তাও পাবলিক ইউরিনেশনের জন্য। Storm Area 51, They Can’t Stop All of Us ইভেন্টটি আসলে একটি বড়সড় eআরকি ছাড়া আর কিছু ছিলো না বলা নিতান্ত ভুল হবে না।

এরিয়া ৫১ যাত্রার পরিকল্পনাটি সফল না হলেও, এর মিম আর মজার টুইটের জন্য ইন্টারনেটের অন্যতম ভাইরাল ট্রেন্ড হিসেবে মনে থাকবে নেটিজেনদের।

 

১৮৬৯ পঠিত ... ১৮:৩৬, জুলাই ২৩, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top