লেখা:
মেয়েদের প্রতি হলে নামাজ রুম আছে। আমি নিজে সেই রুমে নামাজ পড়েছি। ডিপার্টমেন্টে মেয়েদের আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা আছে।
আমার ধারণা আমাদের ছেলে বন্ধুদের সবার হলেও নামাজ রুম আছে! (যদিও এই বিষয়ে কখনও কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়নি) যদি নাও থাকে তবে মসজিদ আছে। সাধারণ মসজিদের সাথে সেন্ট্রাল মসজিদ সবই তো ছিল ক্যাম্পাসে। এছাড়া সেই জায়গাগুলোতে নামাজ আদায় করতে না পারলেও ক্যাম্পাসের পেছনে আমবাগান, গেরুয়া, ইসলামনগরে তো সাধারণ জনবসতির মসজিদও ছিল! এত জায়গা থাকতে কেন আসলে বাথরুমে (বাথরুম বলতে নাকি উনি গোসলখানাকে বুঝিয়েছেন) কাউকে নামাজ পড়তে হলো-বিষয়টা বোধগম্য হয় না।
জাহাঙ্গীরনগর এমন এক ক্যাম্পাস যেখানে আপনি আপনার ধর্মচর্চায় সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। আমি পেয়েছি। আমার বন্ধু পেয়েছে। আমি মুসলিম হয়ে নামাজ না পড়লে আমার অমুসলিম বন্ধুরা নামাজের কথা বলেছে। আমার অমুসলিম বন্ধু গোসল করে এসেই কেন পুজোটা না সেরে অন্য কাজ করল সেই আফসোস দেখে পরবর্তী দিনে আমি মনে করিয়ে দিয়েছি পুজো দিতে।
আমি এইখানে তাবলীগের লোক দেখেছি, সারারাত ইবাদত করা না ঘুমানো ক্লান্ত চোখ দেখেছি, আমি নিজে হিজাব পড়ি, রমজানে বন্ধুদের সেহরি না খাওয়াতে পেরে অমুসলিম বন্ধুর চোখে আফসোস দেখেছি। আপনি কেন দেখতে পাইলেন না?
আজকে এত এত কষ্টের বড় বড় স্ট্যাটাস যে দিচ্ছেন ইসলামকে ঢাল বানিয়ে, লজ্জা করছে না? আপনি তো আসলে ইসলাম কায়েম করতে চাননি। আমার ক্যাম্পাসের মতো এত অসাম্প্রদায়িকতা আপনি অন্য কোথাও দেখাতে পাবেন না। আপনি যে সময়ে ঢাকায় একটা কোরআন তিলওয়াত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে শোকজ খেতেন তখন এই ক্যাম্পাসে বড় বড় ইসলামিক অনুষ্ঠান হতো (আমার বিশ্বাস সেই আয়োজক দলে আপনারাও শামিল থাকতেন) তাহলে আজকে কেন শুধু শুধুই এত বড় বড় রচনা দিয়ে ক্যাম্পাসকে কলুষিত করছেন?
আপনি চেয়েছেন আপনার সংগঠনকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। এইটা আপনি বলেন। আপনি কেন বলবেন যে জাহাঙ্গীরনগর ছিল ইসলাম কায়েমের জন্যে সব থেকে কঠিন জায়গা? এখন একটা নিষিদ্ধ জিনিসকে বৈধতা দিতে আপনাকে কষ্ট তো করতেই হবে। আপনারা সেটাই করেছেন। কেন ইসলামকে ঢাল বানিয়ে ভিকটিক কার্ড প্লে করছেন? ইসলাম চর্চা জাহাঙ্গীরনগরে কঠিন ছিল না। আমার দেখা ৭ বছরে তো আমি দেখি নাই! আপনি কখন দেখেছেন আপনি জানেন!
যে জীবনে জাহাঙ্গীরনগরে পড়ে নাই আপনাদের আঁতাতে আজ তারাও বড় বড় পোষ্ট দিচ্ছে জাহাঙ্গীরনগরের কালচার নিয়ে! কীভাবে দিলেন এই সাহস? আমার জানা ছিল জাবি, জাবিয়ানদের এমন এক দূর্বল জায়গা যা অন্য কাউকে দেখানো যায় না। কোনো জাবিয়ান পারে না জাবিকে কলুষিত করতে, আপনারা করলেন!
ডিপার্টমেন্টাল ক্লাশ, অনেক কিছু না পাওয়ার আক্ষেপ-সবকিছু ছাপিয়ে তো জাবির প্রতি ভালোবাসাটা প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল। আমার জানা ছিল নিজেরা যতই ব্লেইম গেইমিং করি না কেন নিজের প্রতিষ্ঠানের উপর অন্য কারও দেওয়া অপবাদ আমরা সহ্য করি না, অথচ আজ নিজেরাই সে সুযোগ করে দিচ্ছি!!
গত কদিন ধরে এইসব দেখে দেখে বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল–মনে হচ্ছিল কীভাবে আসলে জাবিতে না পড়ে তারা এতকিছু জানল আর আমরা জানলাম না!
জীবন আমার কাছে স্বচ্ছ কাচের মতো। আমি আজকে যা বলেছি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি, এতে কোনো অস্বচ্ছতা নেই। আমি আপনাদের মতো মনে এক, আর মুখে আরেক ধারণ করে চলতে পারি না। আমি যা তা আমি সবার সামনেই বলতে পারি। আমাকে কারও আড়ালে চলতে হয় না, আমাকে কোনো কিছু লুকাতে হয় না। আমি মিথ্যা বলতে পারি না। আমি মুনাফিক সাজতে পারি না। ইসলাম আমাকে শেখায় :
‘আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, আমরা বিশ্বাস করি। আর যখন তারা তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথে আছি; আমরা তো কেবল তাদের সাথে ঠাট্টা করছিলাম। আল্লাহ তাদের সাথে ঠাট্টা করবেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতা সীমায় বিচরণ করতে দিয়ে সুযোগ দেবেন। এরাই হলো যারা হেদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা খরিদ করেছে, অতঃপর তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।’
[সূরা আল-বাকারাহ ২:১৪-১৬]
পাঠকের মন্তব্য