জো বাইডেনের উপদেষ্টা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোয়েন্দা

২৩ পঠিত ... ১৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে

বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এক মার্কিন নাগরিক গ্রেফতার হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগে। লোকটার ছবি দেখে সেই জো বাইডেনের উপদেষ্টার কথা মনে পড়ে গেল। দীর্ঘদিন ইউরোপ ও আমেরিকায় থাকা এরকম লোকেরা পশ্চিমে থাকলেও তাদের ফেলে যাওয়া গ্রামের পঞ্চায়েতির স্মৃতি ভুলতে পারে না। ইউরোপে এরকম একজন বয়স্ক মানুষকে সারাক্ষণ বিষণ্ণ থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এতো মন খারাপ করে থাকেন কেন! ছেলে মেয়ে মানুষ হয়ে গেছে; এখন জীবনকে উদযাপন করুন। উনি বলেছিলেন, এখানে সম্মান নাই ভাই, কেউ সালাম দেয় না। ভদ্রলোকের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে একটি ছবি উপহার দিয়ে উনি পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন। তখন সবাই তাকে সালাম দিয়েছিল।

জো বাইডেনের উপদেষ্টা লোকটার একই ইতিহাস। আমেরিকায় সুন্দর বাড়ি-গাড়ি আছে। কিন্তু আমেরিকায় তো কেউ কাউকে ভক্তি দেখায় না; খোদ জো বাইডেনকেই দেখায় না। তাই ঐ ভদ্রলোক জো বাইডেনের উপদেষ্টা সেজে ঢাকায় এসে; বিএনপি অফিসে বসে প্রেস কনফারেন্স করে; এরপর জেলখানায় গিয়েছিলেন; পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন।

ঢাকায় সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া লোকটি নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক বলে জাহির করেছেন। উনি নাকি ড. ইউনুসের পতন ঘটাতে এসেছেন। মিন্টো রোডে প্রাডোতে চড়ে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেফতার হয়েছেন। মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন।

একথা সত্যি যে, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের নানী-দাদীরা অন্যের বাড়িতে ফুচকি দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করেন। ফলে নাতি-নাতনিদের মধ্যে ফুচকি দেওয়ার টেন্ডেসি রয়েছে। কিন্তু এই দক্ষতা অন্যের বেড রুমে ফুচকি দেওয়া পর্যন্তই।

ফলে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের গোয়েন্দারা হানি ট্র্যাপ, গ্রাম্য ডাকাতের মতো মুখে গামছা বেঁধে অপহরণ, ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে লাশ ভারি পাথর বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া; বড় জোর আয়নাঘর বানিয়ে নির্যাতন করা; ঠিক এতটুকুই পারে। আর তাদের রয়েছে ভুঁইফোড় ওয়েব পোর্টাল ও ফেইক আইডির মাধ্যমে গোবর ছুঁড়ে মারা। যেহেতু পুকুর বা নদীতে গোসল করার আগে; গোবর ছোড়াছুড়ি করে পুলক পাওয়া ডিএনএ। তাই প্রোপাগান্ডা গোবর ছোঁড়ার বংশ ধারা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়।

কিন্তু কোনো দেশের সরকার পরিবর্তন করার মতো দক্ষতা ও কলাকৈবল্য দক্ষিণ এশীয় গোয়েন্দাবৃত্তির ডিএনএ-তে নেই। এরা বড় জোর পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ফুট ফরমায়েশ খাটতে পারে। কোথাও গিয়ে আগুন দিয়ে দিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাইজ্জা বাধিয়ে দিল; আইডেন্টিক্যালি গ্রামের চেয়ারম্যান তার লেঠেল দিয়ে গ্রামে যে হুজ্জোতি পাকায়; ওটুকুই পারে দক্ষিণ এশীয় গোয়েন্দারা।

পশ্চিমারা তাদের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গোয়েন্দাবৃত্তির ফর্মুলা তৈরি করে; যেখানে ডমিনো এফেক্ট আর গেম থিওরি সাজানো থাকে। একটা ইটে ধাক্কা দিলে বাকি ইটগুলো পরপর পড়তে থাকে; ফুটবল মাঠে এগারোজন খেলোয়াড় যেমন নব্বই মিনিট সক্রিয় থাকে; পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মস্তিষ্ক সেরকম সক্রিয় থাকে। ফ্রিডেরিশে নিটশের সুপারম্যানের থিওরি এই একটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেরা আইকিউ, স্মার্টনেস, যোগাযোগ দক্ষতার সম্মিলন ঘটে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের কাজে।

বাংলাদেশের লোক পশ্চিমে থেকে ব্যাক ইয়ার্ডের বাগানের সবজি আর একটা ওয়াইনের বোতল দিয়ে সাদা চামড়ার লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর পর কল্পনায় এমআইসিক্স বা সিআইএ হয়ে যায়। তখন তার চলাফেরা সন্দেহজনক হয়ে যায়। পশ্চিমে বেড়ে ওঠা সন্তানেরা ফোনে কথা বলার সময় কান খাড়া করে আড়ি পাতার প্র্যাক্টিস জারি রাখে। এরকম লোক কারও সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস করে, আপনি কি পোস্টে আছেন? বা অন্যকে জিজ্ঞেস করে উনি কোন পোস্টে আছেন? এভাবে দেশে কিছু সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচিত হয়। ঢাকায় এসে সামার সেলে কিনে রাখা পারফিউমের বোতল বা টাই উপহার দিয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ তোলে। প্রসঙ্গক্রমে বলে, আমি সেদিন ট্রাম্পরে বললাম; বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ; কিছু করা দরকার ডোনাল্ড। ডোনাল্ড কইলো, গো এহেড।

আমরা সহজ সরল মানুষ। বিদেশ থেকে কোন বিগ মাউথ এসে বাইডেন বা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দহরম মহরমের গল্প বললে; আমরা আলু থালু হয়ে তারে জাপটাইয়া ধরি। একটা জিনিস বুঝতে চাই না, দক্ষিণ এশিয়ার একটা লোক যতই করিতকর্মা হোক; সূক্ষ্ম বা কৌশলী কাজ তাকে দিয়ে হওয়া সুদূর পরাহত। পরচর্চা বিজ্ঞান ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় সমাজের কোন ব্যুতপত্তি নাই।  আর আছে ‘কামাসূত্র’।

বাংলাদেশ সমাজে গোয়েন্দা নিয়ে গল্পটা সবচেয়ে জনপ্রিয়। দুটো গোয়েন্দা গল্প পড়া আর গোয়েন্দা মুভি দেখা হয়ে গেলে; তখন আমরা একে অন্যকে গোয়েন্দা বলে তকমা দিয়ে টিলো এক্সপ্রেস খেলি। ভারত-পাকিস্তানের গোয়েন্দারা এখন নিজের অক্ষমতা বুঝতে পেরে স্পাই মুভিতে টাকা ইনভেস্ট করে; বিরাট সব বাহাদুরির গল্প বলে।

আমার দাদা বাঘ মেরেছিলর গল্পটা যেভাবে বাঘ চলে যাবার পর গাছের পাতা নড়তে দেখেছিলতে শেষ হয়; আমাদের সমুদয় বাহাদুরির গল্প ওরকম হয়।

বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা না থাকলে জাতির বুদ্ধি বিকশিত হয় না। ফলে সূক্ষ্মতম কাজ করার সক্ষমতা বংশধারাতে তৈরি হয় না। একটু পড়ালেখা শিখলেই একটা লোক যেভাবে ফেসবুকের একটা লেখাকে কঠিন ও অপাঠ্য করে তোলে; তাতে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হবে কি করে। সমাজে মৌলভি ও পুরোহিতেরা যেরকম কঠিন আরবি বা সংস্কৃত বলে তাক লাগিয়ে দিয়ে মনগড়া একটা অনুবাদ হাজির করে; সেইখান থেকে অর্জিত জ্ঞান নিয়ে ওয়াজিরা ওয়াজ করতে চলে যায়; আমাদের একাডেমিশিয়ানরা বড় বড় মনীষী আর তাদের থিওরির নেম ড্রপিং করে দুর্বোধ্য আলাপ করলে; সেখান থেকে অর্জিত আধাখ্যাঁচড়া জ্ঞান নিয়ে আমরা চলে যাই ইউটিউব ও টিভি টকশোতে।

ফলে যে কোন ক্ষেত্রেই আমি পারির সন্তুষ্টিতে গলার রগ ফোলানোর লোক অনেক আছে; কিন্তু সত্যিকারের পারার লোক বিরল। তাই দিনমান নানা কৌতুকে কেটে যায় আমাদের অসম্পূর্ণ জীবন। অনিষ্পন্ন আকাঙ্ক্ষার বাঘ বাহাদুর আর বাহুবলী রুপকথা নিয়ে আমাদের এইসব দিনরাত্রি।

২৩ পঠিত ... ১৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top