যে কারণে আমি জিমে যাই

১৮৯৭ পঠিত ... ০৪:৪৪, নভেম্বর ১০, ২০১৭

মানুষ অনুরোধে ঢেঁকি গেলে। আমি ছোটখাটো পাহাড় গিলে ফেললাম!

সারাদিন চোখে চশমা এঁটে অফিস করি, রাতে সুবোধ বালকের মতো বাসায় গিয়ে হাই তুলে ঘুমিয়ে পড়ি। চমৎকার জীবন।

এই জীবনে বাগড়া দিলো ছোটভাই। হঠাৎ একদিন এসে বললো- 'চলো জিমে ভর্তি হই।'

আমি চোখ আকাশে তুলে বললাম- 'জিমে ভর্তি হয়ে কী হবে?'

-কী হবে মানে? কী হবে না তুমি সেটা জিজ্ঞেস করো। আমাদের গোলগাল চেহারায় চেকনাই লাগবে, হাতের গুলি ফুলে টনটন করবে, বুকের ছাতি বেড়ে পালোয়ানের মতো হবে। তোমাকে আর ঢিলাঢালা জামা পরে ঘুরতে হবে না, টাইট ফিটিংস গেঞ্জি পরে ঘুরতে পারবে।

'টাইট ফিটিংস' গেঞ্জি পরার আশায় আমি জিমে ভর্তি হলাম। ধারণা ছিল যে ঢোকা মাত্রই ইয়া ইয়া দু'টো মুগর তুলে ভাজতে শুরু করবো, পপাইয়ের স্পিনাচ খাওয়ার মতো তুড়ি দিয়ে আমার শরীরে গামা পালোয়ানের মতো পেশী কিলবিল করা শুরু করবে! হাসবেন না পাঠক, বহু বছর আগে বাংলা সিনেমায় রুবেলকে আমি একরাতে পেশী বানাতে দেখেছিলাম। সেই মুগ্ধতা আমার এখনও কাটেনি!

সারা জিমে তাগড়া তাগড়া সব জওয়ানেরা ডন-বৈঠক দেয়। পাহাড়ের মতো উঁচু লোহালক্কড়ের জঞ্জাল অবলীলায় তুলে ফেলে। আমি দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আমাকে ললিপপ সাইজের দু'টো ডাম্বেল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটা আর সবার সামনে বের করতেও লজ্জা লাগে!

দিন-কয়েক জিম করার পর একসময় হীনমন্যতা আমাকে জেঁকে ধরলো। ছোটভাই হু-হা শব্দে জিম করে যাচ্ছে, আমি কোনমতে শরীরটাকে বাঁকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ক্ষান্ত দিলাম। নাহ্‌, আর না! বীর কখনও পরাজয়ের ধারে কাছে ঘেঁষে না! জিম যখন আমার দ্বারা হবে না, জিমকেই আমি বরং ত্যজ্য ঘোষণা করলাম।

কিন্তু না না... একি? এইসব পালোয়ানদের হাতে দেখি লাল টুকটুকে টিফিনবক্স! ফুরিয়ে যাওয়া এনার্জি আবার পুরিয়ে নেবার পালা! ওমা! আমাকেও দেখি ডাকছে! কী জ্বালা...

অলংকরণ: আয়ান

প্রথমে তাদের বক্স থেকে বের হলো ডিম। একটা-দুটা না! সাত-আটটা করে ডিম। ডিমের আবার বাহার দেখো- কুসুমের 'ক'টাও নেই, একেবারে চেঁচে-পুঁছে সাদা! সেই সাদা অংশে আবার ম্যাগি মশলা মাখানো!

আমি 'আহা ছিছি কী দরকার...' বলতে বলতে ডিম মুখে দিলাম। ওরে আল্লাহ... কী জিনিস মুখে দিলাম? কুসুম ছাড়া কেবল ম্যাগি মশলা মাখানো ডিম কোন ম্যাজিকে এতো মজা হয়? ভদ্রতার ধার না ধেরেই মুখে পুরলাম আরেকটা। তারপর আরেকটা!

আরেকজনের পুঁটলি থেকে বের হয়েছে কলা, সাথে প্যাকেটের রুটি। সে রুটির কত রকমের বাহার! মাখন দেয়া রুটি, স্ট্রবেরি দেয়া রুটি, চকলেট ফ্লেবারের রুটি! আমি কপকপিয়ে রুটি খেলাম, কামড় দিলাম সফেদ কলায়। বরফে রাখা ঠাণ্ডা কলায় পেলাম হিম হিম স্বাদ। ঘাম ঝরানো কাঠফাটা গলায় সে ঠাণ্ডা বড়ই প্রশান্তির।

শেষপাতে প্যাকেটের আমদুধ। পালোয়ানদের বোধহয় কেবল গায়ে-গতরেই বাড়েনা, কলিজার মাপও মনে হয় পাল্লা দিয়ে বাড়ে। 'ওরে গ্লাস আন, পাইপ আন' বলে যেভাবে সবাই আমদুধ-স্ট্রবেরি দুধ এগিয়ে দিলো, শেষ কবে এমন সমাদর পেয়েছিলাম স্মরণে নেই। আমদুধ খেয়ে চোখ মুছলাম। এ চোখ মোছা পরিতৃপ্তির। পেটের সাথে মন ভরলেই কেবল চোখ এমনভাবে সাড়া দেয়।

এরপরেও জিম ছাড়ে কোন পাগল? ডিমে-দুধে-কলায় বাংলার প্রতিটি কোনে কোনে গড়ে উঠুক জিম। পেশীতে-মগজে-হৃদয়ে প্রতিটি বাঙালিই হয়ে উঠুক এমন পালোয়ান!

অলংকরণ: আয়ান

১৮৯৭ পঠিত ... ০৪:৪৪, নভেম্বর ১০, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top