বনফুলের অণুগল্প: একফোঁটা জল

১৭৭৯ পঠিত ... ২২:২৯, আগস্ট ১২, ২০২০

অলংকরণ: তাইসির

রামগঞ্জের জমিদার শ্যামবাবু যে খেয়ালী লোক তা জানতাম। কিন্তু তার খেয়াল যে এতদূর খাপছাড়া হতে পারে তা ভাবিনি। সেদিন সকালে উঠেই এক নিমন্ত্রণপত্ৰ পেলাম। শ্যামবাবু তাঁর মাতৃশ্ৰাদ্ধে সবান্ধবে নিমন্ত্রণ করেছেন। চিঠি পেয়ে আমার মনে কেমন যেন একটু খটকা লাগল। ভাবলাম-শ্যামবাবুর মায়ের অসুখ হল অথচ আমি একটা খবর পেলাম না! আমি হলাম এদিককার ডাক্তার।

যাই হোক নেমন্তন্ন যখন করেছেন তখন যেতেই হবে। গেলাম। গিয়ে দেখি শ্যামবাবু গলায় কাচা নিয়ে সবাইকে অভ্যর্থনা করছেন। তাঁর মুখে একটা গভীর শোকের ছায়। আমাকে দেখেই বল্লেন, ‘আসুন ডাক্তারবাবু-আসতে আজ্ঞা হোক!’ দু’চার কথার পর জিজ্ঞাসা করলাম—আপনার মায়ের হয়েছিল কি?

শ্যামবাবু একটু বিস্মিত হয়ে উত্তর দিলেন—ও, আপনি শোনেননি বুঝি ! আমার মা ত আমার ছেলেবেলাতেই মারা গেছেন—তাকে আমার মনেও নেই—ইনি আমার আর এক মা-সত্যিকারের মা ছিলেন ।

ভদ্রলোকের গলা কাঁপতে লাগল। 

আমি বললাম—কী রকম? কে তিনি?

তিনি বললেন—“আমার মঙ্গল গাই—আমার মা কবে ছেলেবেলায় মারা গেছেন মনে নেই—সেই থেকে ওই গাইটিই তো দুধ খাইয়ে আমাকে এত বড় করেছে। ওরই দুধে আমার দেহ মন পুষ্ট। আমার সেই মা আমায় এতদিন পরে ছেড়ে গেলেন ডাক্তারবাবু!” 

এই বলে তিনি হু হু করে কেঁদে ফেল্লেন।

আমার বিস্ময়ের আর সীমা রইল না।

[বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়: একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। তিনি বনফুল ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত।]

১৭৭৯ পঠিত ... ২২:২৯, আগস্ট ১২, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top