পাসপোর্ট অফিসের দেবতারা

৩১৩ পঠিত ... ১৮:০৮, মে ১৮, ২০২৩

Passport-office-er-debotara

প্রায় তিনঘণ্টা হয়ে গেলো দাঁড়িয়ে আছি। প্রথম দুইতলা তারপর সেই লাইন চারতলায় গিয়ে ঘুরে তারপর তিনতলায় কাউন্টারে এসে শেষ হয়। তবে ঝামেলা হচ্ছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কাউন্টারের রাজামশাইদের আনুকুল্য পাবো কিনা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এক মাঝবয়সী লোককে দেখলাম কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ‘খ’  আর ‘চ’ বর্গীয় মধুর বাক্য ব্যয় করতে করতে বের হয়ে যাচ্ছে। ওনাকেও নাকি তিন-চার ঘণ্টা যাবৎ এ কাউন্টার থেকে ও কাউন্টারে ঘোরাচ্ছে। এর মধ্যে আমার সামনে পেছনের মানুষজন বেশ কয়েকজনকে দেখলাম গায়েব হয়ে যেতে। একজনকে দেখলাম হাসিমুখে ছবি তুলে হাতে স্লিপ নিয়ে বেরও হয়ে যাচ্ছেন। আমাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গদগদ হয়ে বললেন, ‘হুদাই দাঁড়ায় আছেন মিয়া, দরবেশ ধরেন, দরবেশ ছাড়া মনে হয় না আজকে জমা দিতে পারবেন।‘ দরবেশ আবার কী? ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পেছনের লোক মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘কিছু খসাইতে হইবো বুঝলেন, তাইলে লাইন ফাইন নাই, আপনেরটা সরাসরি জমা হইয়া যাবো।‘  জিজ্ঞেস করলাম, ‘এনাদের পাবো কই?’ পেছনের ভদ্রলোক আবার হেসে বললেন, ‘এনারা হাওয়ায় ভাইসা বেড়ান। এমনে খুঁইজা পাইবেন না। নিচে গিয়া ডাক দিলেই দেখবেন দয়ালরা হাজির হয়ে গেছে।‘

জায়গাটা দেখতে বলে একটু নিচে গিয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখি দেবদূতের মতো হাজির হলেন একজন। এসে কানের কাছে একদম মৃদু স্বরে বলতে লাগলেন, ‘ভাই লাইনে আগায় দিতে পারুম, বেশি লাগবো না, ফাইলটা দেন।‘ বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করবো। কিন্তু তিনঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে রীতিমতো অসহ্য লাগছে, জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত লাগবে?’ বললো, ‘বেশি না এক হাজার।‘ আমার হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে বললো আমার পিছে পিছে আসেন। তিনতলায় গিয়ে বললো ‘এক কোণায় দাঁড়ান।‘  মিনিট দশেক পর ফাইলে ভেরিফিকেশনের সিল টিলসহ নিয়ে এসে বললেন, ‘চলেন, ছবি তোলায় নিয়া আসি, এখানকার কাম শেষ।‘ টিনের চালে কাক, আমি তো অবাক! যে কাগজ আমি গত তিনঘণ্টায় জমা দিতে পারলাম না, এই লোক দশমিনিটে জমা দিয়ে সাইনও নিয়ে এসে পড়লো? এ তো দেবদূতও না… সাক্ষাৎ দেবতা। ছবি তোলার ওখানে গিয়েও দেখি বিশাল লাইন, দেবতামশাই কোনো লাইনের পরোয়া না করেই আমাকে নিয়ে ঢুকে গেল ছবি তোলার ঘরে। ঘরে ঢুকে একজনের সাথে চোখে চোখে কি কথা হলো জানি না, আমার সব কাগজপত্র স্ক্যান করে হাতের আঙ্গুলের ছাপটাপ নিয়ে ছবি তুলে কাজ শেষ করে বের হয়ে গেলাম।   

নিচে এসে দেবতামশাইইয়ের হাতে একহাজার টাকা দেওয়া মাত্রই উনি হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে হাসিমুখে হাওয়া হয়ে গেলেন। মনটাই ভালো হয়ে গেলো। এতদিন শুধু দেব-দেবতাদের কথা শুনেই এসেছি, কিন্ত পাসপোর্ট অফিসে এসে যে এভাবে তাদের একজনের দর্শন পেয়ে যাবো আর সে আমার এভাবে কাজে লেগে যাবে কোনোদিন ভাবিও নি। অটোতে উঠতে উঠতে মনে মনে বললাম, ‘ভালো থাকুক এসব দেবতারা।‘

৩১৩ পঠিত ... ১৮:০৮, মে ১৮, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top