উন্নয়ন ও বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

২৩১ পঠিত ... ১৬:৩৪, মে ০৩, ২০২৩

উন্নয়ন-ও-বাংলাদেশ-মিষ্টান্ন-ভাণ্ডার

আজকে রওনা দিতে দিতে খানিক দেরি হয়ে গেলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা ত্রিশ। দরজায় তালা লাগানোর সময় মনে মনে নিজেরে গালি দিয়ে বললাম, ‘ধুর শালা, কালকে যে ক্যান রাত জাইগা সিনেমাটা দেখতে গেলাম।‘ মেইনগেট থেকে বের হয়ে গলির মোড়ে আসতে আসতে নাকের মধ্যে পেতে শুরু করলাম সেই সুঘ্রাণ। অফিসের বাস ধরতে দেরি হয়ে যাবে আরও দশ মিনিট, কিন্তু এই ঘ্রাণকে উপেক্ষা করে যাওয়ার সাধ্য মনে হয় না কোনোদিন আমার হবে। চোখের সামনে দিয়ে একটা বাস যেতে দেখেও ঢুকে গেলাম বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। তাওয়ায় চলছে পরোটার নৃত্য আর পাশেই তিনটা বড় গামলা ভর্তি ডাল, সবজি আর হালুয়ার নদী। দুপুরে অফিসে দুলাল মিয়ার মোটা চালের ভাতের সাথে নেহাত অনিচ্ছায় বানানো মুরগির তরকারির ঝোল আর ডালের পর রাতে বেশিরভাগ দিন মেসে পাঙ্গাশের সাথে সংসার করে আমার জীবনে প্রেম বলতে এখন টিকে আছে সকালের এই নাস্তাটাই।  

আগে মাত্র তাওয়া থেকে নামিয়ে পিটিয়ে আহত করে ফেলা নরম তুলতুলে দুটো পরোটাকে ডাল-ভাজির নদীতে ডুবিয়ে খাওয়ার পর তিন নাম্বারটাকে একটু ‘থোড়া’ এক্সট্রা হালুয়ার সাথে মাখামাখি করে খাওয়ার পর মুখের ভেতর যে স্বর্গানুভূতি হয় তার তুলনা আর কিছুর সাথেই চলে না। আজও তেমন প্রস্তুতি নিয়েই ঢুকেছিলাম। পরোটার অর্ডার দেওয়ার খানিক বাদে টেবিলে ডাল-ভাজি আর পরোটা দুটোই চলে এলো। খুব আয়েশ করে দু’টো খাওয়ার পর তিন নাম্বারের জন্য একটু এক্সট্রা হালুয়ার জন্য বাটিটা এগিয়ে দিতেই মেসিয়ার আনিস ভাই বললেন, ‘আজ থেইকা আর এক্সট্রা হালুয়া দেওন যাইবো না, ডাইল ভাজিই দিতে কইসে মালিক।‘ শুনে তো আমার মাথায় বাংলা সিনেমার বজ্রপাত শুরু হয়ে গেলো। ঝালের সমুদ্রে সাতার কাটতে কাটতে জিভ মাত্র অপেক্ষা করছে একটু মিষ্টি হালুয়ার ঝর্ণাধারায় নিজেকে সঁপে দিতে এর মাঝেই কিনা এমন দুঃসংবাদ! আমাদের কথোপকথন থেকেই কাউন্টার থেকে মালিক গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,  ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়তি, ভাজি খাইলে ভাজিই লইবেন, আর হালুয়া খাইতে হইলে এক্সট্রা আরেক প্লেট লওন লাগবো।‘

মনমড়া হয়ে ‘থোড়া’ ভাজি দিয়ে পরোটা খেতে লাগলাম, ধুর শালা কী জীবন। কিছুই নাই এই জীবনটায়, আছে খালি উন্নয়ন আর উন্নয়ন। বাসায় ফুডপান্ডার ডেলিভারিম্যানরা চলে আসবে এই ভয়ে ফেসবুকে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছি সেই কবে। শেষবার ভোট দিতে গিয়ে শুনি গায়েবি প্রক্রিয়ায় AI ব্যবহার করে নাকি আমার ভোটও হয়ে গেছে। এখন জীবনের আনন্দের শেষ সম্বল আমার এই সকালের নাস্তাটাও গেলো। আগে যে টাকায় চারটা পরোটা খেতাম এখন সে টাকায় তিনটা খাই। এরমধ্যে হালুয়াটাও গায়েব হয়ে গেলো। মতি মিয়ার মতো ‘ধুর শালা নাস্তাই খামু না’ বলতে বলতে হাত ধুয়ে বিল দিয়ে বেরিয়ে এলাম বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে। সাথে বের হয়ে এলো আমার একটা দীর্ঘশ্বাস। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভাবছিলাম, সবকিছুর উন্নয়ন হলেও আমার নাস্তাটার অবনতি হয়ে গেলো। এর মাঝেই দেখি প্রগতি বাস চলে এসেছে, উঠে গেলাম অফিসে যাওয়ার উন্নয়নের মহাসড়কে।

২৩১ পঠিত ... ১৬:৩৪, মে ০৩, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top