গোলাম আজম নিয়ে যে তথ্যগুলো আপনি কোনো বইতেই পাবেন না

২০৯৪ পঠিত ... ১৭:০২, মে ১২, ২০২৫

18

গোলাম আজমকে নিয়ে নানা ধরনের মিসইনফরমেশন অনলাইন এবং অফলাইনে ছড়িয়ে আছে। কেউ বলেন তিনি রাজাকার ছিলেন, কেউ বলেন তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা সাজিয়েছেন, কেউ বলেন তিনি বাংলাদেশই চাননি। আসলে তিনি কী ছিলেন?

যুগে যুগে নানা মহামানব পৃথিবীর বুকে পা দিয়েছেন। নষ্ট মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন সহস্র বছর। এমনই এক মহামানব বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরবটর অধ্যাপক গোলাম আজম।

আপনি মানতে নারাজ হলেও ফ্যাক্ট-ইতিহাস সবসময় সত্যি বলে না। ইতিহাস কখনও কখনও হিরোকে জিরো সাজায়, আর জিরোকে হিরো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও হিরোকে জিরো সাজানোর এক উল্লেখযোগ্য ভিকটিম গোলাম আজম।

গোলাম আজম জন্মেছিলেন এই বাংলার মাটিতে, তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল বাংলার ঘাস আর মাটির ঘ্রাণ। খুব ছোটোবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন বাংলাদেশের। ছোটোবেলায় আমরা যখন ক-তে কাক আর ব-তে বাঘ পড়তাম, তিনি পড়তেন ক ত- কালরাত, গ-তে গোলাম, আর ব-তে বাংলাদেশ। যুদ্ধ পূর্ববর্তী অবস্থার কথা বাদ দিলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আজম অভূতপূর্ব অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় জিয়াউর রহমানকে তিনি রাইটিং প্যাড ও কলম সাপ্লাই দেন। যুদ্ধের সময় গোলাম আজম আবহাওয়াবিদ হিসেবে পালন করেছেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কোনদিন যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের সফলতার হার বেশি, কোনদিন মুক্তিযোদ্ধাদের আহত হবার সম্ভাবনা বেশি বা কোনদিন বৃষ্টি হবে ইত্যাদি তিনি রাত জেগে হিসাব কষতেন বাড়ির ছাদে বসে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি ছিলেন লিভিং ব্যারোমিটার। 

শুধু আবহাওয়া কিংবা রাজনীতিই নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও গোলাম আজমের ভূমিকা অপরিসীম। প্রথমবারের মতো যখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ‘আমার সোনার বাংলা’ রেকর্ড করছিলেন, তখন গানের পেছনে যেই বাতাসের শব্দ শুনি—তা ছিল গোলাম আজমের হাতপাখার বাতাস। পরবর্তীতে সেই পাখাটি  ‘স্বাধীনতা পাখা’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে রায়েরবাজারের এক দোকানে।

শুধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ই নয়-যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধারা যখন মাঠে ঘাটে দরদর করে ঘামছিলেন, তখন তিনি প্রশান্তির মূর্তি হিসেবে নেমে হাত পাখার বাতাস দিয়েছেন, রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে দিয়েছেন। প্রেশার কমে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বানিয়ে দিয়েছেন ওরস্যালাইন আর প্রেসার বেড়ে যাওয়াদের তেঁতুলের শরবত।

আপনারা জেনে আরও অবাক হবেন, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে যখন মেহেরপুরে মুজিবনগর সরকার গঠন হয়, তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন গোলাম আজম। তার নির্দেশে ও পছন্দমতো চেয়ার টেবিল, চা নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে তিনিও নিজের গাছের ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। কিন্তু ফটোগ্রাফারের ব্যর্থতার কারণে সেই বিশেষ মুহূর্তের ছবি ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে।

তাই বলে গোলাম আজম কি হারিয়ে যাবে?

না।

তিনি হলেন ইতিহাসের পাতার সেই মানুষটি, যিনি কাজ করে গেছেন নীরবে নিভৃতে, কোনোপ্রকার উচ্চবাচ্য কিংবা বক্তৃতা ছাড়াই লড়ে গেছেন দেশের হয়ে। গোলাম আজম হলেন সেই লড়াকু সৈনিক যার কল্যাণে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই দেশের মাটিতে। গোলাম আজম ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আমাদের মনে ও অস্তিত্বে।

২০৯৪ পঠিত ... ১৭:০২, মে ১২, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top