বিশ্বায়নের ছোঁয়ায় মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো যেভাবে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে, তেমনি এখন নতুন এক ট্রেন্ড দুনিয়াজুড়ে ঝড় তুলছে—ঘুষের গ্লোবালাইজেশন! আর এই আন্দোলনের সর্বশেষ সংযোজন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি চাকরিজীবীরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীদের একাংশ ‘Bribes are not a crime, it’s a lifestyle’!—এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের দাবি, বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষকে যেভাবে শিল্পে পরিণত করেছেন, তা আন্তর্জাতিক মানের উদাহরণ। সেই উদাহরণ অনুসরণ করেই তারা যুক্তরাষ্ট্রেও অবাধ ঘুষ খাওয়ার অধিকার আদায়ে রীতিমতো আন্দোলনে নেমেছেন।
বিশ্বব্যাপী ঘুষ সংস্কৃতির প্রসারে তারা বাংলাদেশকে দিয়েছে ‘ঘুষ গুরু’ খেতাব। আমেরিকান এক কর্মচারী বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশি সরকারি অফিসার ভাইয়েরা যেভাবে অফিসে বসে জনগণের টাকা দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে নিচ্ছেন—বাড়ি করছেন, গাড়ি করছেন, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন—তাতে আমরা আমেরিকানরা চরম অনুপ্রাণিত! অথচ আমরাই ঘুষে পিছিয়ে আছি, এটা খুবই দুঃখজনক।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে ঘুষের মাধ্যমে মানুষ আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি দেয়, বাচ্চাদের বিয়েতে বাড়ি কিনে দেয়, এমনকি দুর্নীতির টাকা দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে লোক দেখানো ফলাও করে ফিতা কেটে ফটোসেশন করে—এই দক্ষতা আমাদের নেই। এটা আমাদের জন্য এক গভীর আত্মসমালোচনার জায়গা।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ আন্দোলনকারীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে শাস্তির বিধান মানি না। আমরা চাই অফিস টাইমে বাইরের ক্লায়েন্ট সামলানোর অধিকার, চাই ফাইল আটকে রেখে ‘ক্যাশ অন হ্যান্ড’ সুবিধা। বাংলাদেশি ভাইদের মতো আমরাও চাই ঘুষের টাকায় ইউরোপ ট্যুর আর ক্যালিফোর্নিয়ায় জমি কেনার স্বাধীনতা!
তারা জানান, বাংলাদেশের সচিবালয় ঘেরাও দেওয়া ভাইদের জানাই আমাদের পক্ষ থেকে বিপ্লবী লাল-নীল-সবুজ সালাম। ওনারা আমাদের আইডল। উনাদের জয় মানেই আমাদের জয়। আমরা এই ঘুষ-সংস্কৃতির বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখি।
তাদের এক নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের খবর আমরা দেখেছি। যদি আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ না হয়, তবে আমরাও আমেরিকান কংগ্রেস ভবন ঘেরাও করব। শুধু কংগ্রেস ভবনই নয়, প্রয়োজনে হোয়াইট হাউসও ঘেরাও করব! এমনকি হোয়াইট হাউসের নাম পরিবর্তন করে ‘ঘুষ হাউস’ রাখার প্রস্তাবও দিয়েছি আমরা!
ঘুষ আন্দোলনের এই ট্রেন্ডে ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে আরও কয়েকটি দেশ। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ‘ঘুষ অলিম্পিয়াড’ আয়োজন করা হতে পারে, যেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।