মহামারীর পৃথিবীতেও যে কারণে আর্ট এত দরকারি

৬৬০ পঠিত ... ২২:২২, জুন ১৬, ২০২০

সানডে টাইমস সম্প্রতি (১৪ জুন) আলোচিত একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। জরিপে বিশ্বজুড়ে বর্তমান মহামারির প্রেক্ষিতে মানুষ কোন কোন পেশাকে দরকারি এবং অদরকারি মনে করছে তার এক ধরণের প্রতিফলন দেখা গেছে। জরিপে ১৬ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী, বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও আয়ের এক হাজার লোকের মতামত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সানডে টাইমস। 

জরিপের ফলাফল সানডে টাইমস প্রকাশ করেছে এভাবে: জরিপকারী সিঙ্গাপুর ভিত্তিক কনজুমার গবেষনা প্রতিষ্ঠান মিলিয়্যু ইনসাইটের ভাষ্যমতে, অংশগ্রহণকারীদের  বিবেচনায় সেরা পাঁচ দরকারি পেশা হলো যথাক্রমে: 

১. ডাক্তার ও নার্স
২. পরিচ্ছনতাকর্মী
৩. ময়লাওয়ালা
৪. হকার
৫.ডেলিভারিম্যান। 

অন্যদিকে এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতে, সবচেয়ে অদরকারি পাঁচটি পেশা হলো:  

১. আর্টিস্ট
২. টেলিমার্কেটার
৩. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার অথবা গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ
৪. ব্যবসা পরামর্শক
৫. মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দরকারি পেশার তালিকায় সবার উপরে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে চিকিৎসক ও নার্সদের নাম। আর অদরকারি পেশার তালিকার শীর্ষস্থানে রাখা হয়েছে আর্টিস্ট। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৭১ ভাগ লোক মনে করেছে আর্টিস্টরা এই কোভিড-১৯ যুগে অদরকারি৷

অদরকারি পেশার তালিকায় আর্টিস্টের শীর্ষস্থানে উঠে আসায় বিশ্বজুড়ে অনলাইনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

অনেকেই মনে করছেন, কোন পেশা দরকারি আর কোনটা অদরকারি তা জনসম্মুখে ওভাবে না জানানোটাই ভালো হতো। শিল্পীদের অনেকেই এই তালিকায় দেখে কষ্ট পেয়েছেন।

'কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে আর কে করছে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই পরিস্থিতিতে তা ঘোষণার প্রয়োজন দেখা দিলো কেন? আমাদেরও অনুভুতি আছে।' বলেছেন এ্যাক্ট থ্রি থিয়েটারের পরিচালক চান্দ্রান রামা। তিনি জানিয়েছেন, কাউকেই পেশাচ্যুত করার প্রয়োজন নেই। 

 

আর্ট কেন প্রয়োজন? 

আমাদের সুস্থ ও ভালো থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের জিনিসের মধ্যে আর্টের গুরুত্ব ও ভূমিকা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হওয়া এই অবরুদ্ধ সময়ে টের পাওয়ার কথা। অনেকে বলছেন যে, আর্টের চাইতেও বেশি দরকারি আরও জরুরি জিনিসপত্র আছে। তাদের কথা ভুল নয়। তবে তারা বৃহত্তর দৃশ্যপট মিস করে যাচ্ছেন। অবশ্যই আমাদের ওষুধ দরকার, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা দরকার৷ আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আপনি যে দেশে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, আপনার জীবন-জীবিকা কোভিড-১৯ দিয়ে প্রভাবিত হবেই। যেকোনো ধরণের সংকটে মানুষের প্রথম প্রবণতা টিকে থাকা নিশ্চিত করা। যখন সেটি নিশ্চিত হয়ে যায় মানুষ তখন কম্ফোর্ট খোঁজে, সুস্বাস্থ্য খোঁজে। তার দরকার মানসিক ও আত্মিক সুস্বাস্থ্য। তবে সুস্বাস্থ্যের জন্যে শুধু দৈহিক চাহিদা পূরণ করলেই চলে না মানুষের। মানসিক ও আত্মিক চাহিদাও মেটাতে হয়। এখানেই আর্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

আর্ট আমাদের এই বদ্ধ ঘরেও খুলে দেয় বিচিত্র সব জানালা, মুহূর্তে ঘুরিয়ে আনে উন্মুক্ত পৃথিবী!  আর্টিস্ট: Inna-Rafalska

আপনার জীবনে আর্টের প্রয়োজন যদি না-ই থাকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আপনি কি নাটক-সিনেমা দেখতে থিয়েটারে যাবেন না? আপনি কি কনসার্টে মিউজিকের তালে তালে নাচবেন না? আপনি কি সে রেস্টুরেন্টে যাবেন যেখানে কোনো মিউজিক নেই, চিত্রকর্ম নেই ওয়ালে, ডিজাইন নেই, যেখানে আছে শুধু খাবার? 

এখন এই লকডাউনের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয়ে গেলে আপনি কী করছেন? মুভি দেখছেন নেটফ্লিক্সে, হুলু/আমাজনে/ টিভিতে বা অন্য কোনো স্ট্রিমিং সার্ভিসে। অস্বস্তিকর দমবন্ধ পরিবেশ থেকে  বইয়ের জগতে ডুব দিচ্ছেন। কল্পনার কোনো অজানা ভূবন ঘুরে আসছেন। দেখছেন কোনো চমৎকার ছবি। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছেন সাউন্ডক্লাউড, স্পটিফাই বা ইউটিউবে। মজার কোনো ভিডিও দেখছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। আপনার রাগ-ক্ষোভ চমৎকাভাবে তুলে ধরেছেন কোনো সাহসী কার্টুনিস্ট।  

এগুলো জীবনের খুব সাধারণ কিছু অনুসঙ্গ। এর বাইরেও জীবনের সবক্ষেত্রে আর্ট এতো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যে সেগুলো বাদ দিতে গেলে জীবনই অবশিষ্ট থাকে না।

আমরা খেয়াল করি বা না করি বিশ্বব্যাপী এই সংকট ও গৃহবন্দিত্বের সময়ে, আর্টের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনে।

মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে তার প্রিয় নেটফ্লিক্স প্লেলিস্ট শেয়ার করছে। তার প্রিয় গান, ভিডিও এমনকি চিত্রকর্ম শেয়ার করছে তার আইসোলেশনের বাইরে অন্যান্যদের কাছে পৌঁছাতে, ভালোলাগাগুলো অন্যের সাথে শেয়ার কর‍তে। এইসব লিস্ট ক্যাজুয়াল জিনিসমাত্র বা শুধু মুহুর্তের বিনোদন এমনটা ভাবা বোকামি। এগুলো লিস্ট তৈরিকারকদের ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক প্রতিফলনও৷ অন্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ারও মাধ্যম।  

আবদ্ধ সময়ে টিভি, চলচ্চিত্র, বই বা ভিডিও গেম গতিশীলতার সুযোগ করে দিচ্ছে। এক রকম কল্পনার পৃথিবীতে ভ্রমণ যা এই কোভিড আক্রান্ত সময়ে অসম্ভব কাজ৷ শিল্প আমাদেরকে যুক্ত করে অজানায়, অদ্ভুতুড়ে আর অসম্ভবে।

জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘মানুষ ভাত খেয়ে বাঁচে না শুধু। সে পুঁই শাকের চচ্চড়ি ও কুচো চিংড়ির ঘন্ট খেতে পারে কিন্তু চিন্তা ও কল্পনা তবুও তার। সে পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ আবিষ্কার করতে পারে, অদৃশ্য সমুদ্রের শব্দ শুনতে পারে, ভোরের রাঙা সূর্যে অর্ধনারীশ্বরের ভয়াবহ সুন্দর রূপ দেখতে পারে।’

চিন্তা ও কল্পনার অধিকারী, সোনার সিংহ আবিষ্কারকারী মানুষের সর্বাঙ্গীন সম্ভাবনা ও এগিয়ে যাওয়ার জন্যেই এই বিপর্যস্ত পৃথিবীতেও আর্ট খুব প্রয়োজন।

৬৬০ পঠিত ... ২২:২২, জুন ১৬, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top