ক্রিকেট মাঠে ঘটে যাওয়া ১০টি মজার ঘটনা!

৫১৪৮ পঠিত ... ১৮:০২, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮

'ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা' এমন কথা হরহামেশাই শোনা যায়। একটা সময় ব্রিটিশ সাহেবরাই দুনিয়ার নানা প্রান্তে ক্রিকেট খেলেছেন নিজেদের মতো করে। ইংরেজ সাহেবরা দেখতে শুনতে ভদ্র হলেও, আচার আচরণে কতটা ভদ্রলোক ছিলেন সে বিষয়ে বিস্তর তর্ক হয়ে যেতে পারে। তবে ক্রিকেট দিনে দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নানান রকম মানুষ খেলেছে, খেলছে।

সময়ের পরিক্রমায় ক্রিকেট অনেক বদলে গেছে। আগে ছিল না এমন অনেক কিছুই এখন ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। তেমনই ক্রিকেটিয় সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে 'স্লেজিং'। এমনিতে স্লেজিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটাররা 'বিখ্যাত' হলেও মাঠে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্যে কমবেশি সব দলেই আপনি স্লেজিং বিশেষজ্ঞ পাবেন। স্লেজিং-এর ঘটনাগুলো এমনিতে বেশ মজারই হয়। শুধু স্লেজিংই না, এমনিতেও ক্রিকেটে প্রায়শই ঘটে থাকে কাকতালীয় নানান ঘটনা। এমনই ১০টি মজার ঘটনা আজ থাকছে আপনাদের জন্য।

১# রবি শাস্ত্রী-মার্ক উইটনি

দলের দ্বাদশ সদস্য হলেও বা কী আসে যায়, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের প্রত্যেকটি সদস্যই তো স্লেজিং এ আলাদা ডিগ্রিধারী মানুষ! মার্ক উইটনিও তাই সে ‘গুণ’ এর সুবাদে ভারতীয় ব্যাটসম্যান রবি শাস্ত্রীকে নাস্তানাবুদ করতে চেয়েছিলেন মুখের ভাষায়। শাস্ত্রীর খেলা একটি শট বদলি ফিল্ডার উইটনির কাছে গেলে অস্ট্রেলিয় এই খেলোয়াড় চিৎকার করে বলেন, ‘নিজের ক্রিজেই থাকো, নয়তো মাথা ফাটিয়ে দিবো’। কিন্তু উইটনি রীতিমত ছানাবড়া শাস্ত্রীর জবাবে। মুহূর্তও দেরি না করে শাস্ত্রী মুখ ভেংচে বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার স্লেজিং এর মত বল করতে পারলে তো আর দ্বাদশ খেলোয়াড় হতে না!’

২# ভিভ রিচার্ডস যেভাবে বলের সংজ্ঞা শেখালেন!  

ভিভ রিচার্ডসকে ধরা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। বলকে মাঠের বাইরে পাঠানোর পাশাপাশি মুখের ভাষাতেও দারুণ পটু ছিলেন অ্যান্টিগান এই মানুষটি। একবার কাউন্টি ক্রিকেটে তাকে বল করছিলেন ওয়েলশ ক্রিকেটার গ্রেগ থমাস। ভিভকে একটুঁ রাগিয়ে দিতেই কিনা থমাস তার হাতের বলটি দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি অবাক হলে জেনে রাখো, এটার রঙ লাল, দেখতে গোল আর ওজন ৫ আউন্স’। কিন্তু ঠিক পরের বলেই ভিভ বলকে মাঠছাড়া করে থমাসকে চিৎকার করে ডেকে বললেন, ‘গ্রেগ, তুমি নিশ্চয়ই জানো এটা কেমন দেখতে, এখন যাও খুঁজে নিয়ে আসো’।

৩# বিল উডফুল-ডগলাস জারডিন

ক্রিকেট মাঠের সবচেয়ে তীব্র অপমানটা বোধহয় সইতে হয়েছিল ইংলিশ ক্যাপ্টেন ডগলাস জারডিনকে। একটি ডেলিভারি মিস করার পর জারডিন অস্ট্রেলিয় ক্যাপ্টেন বিল উডফুলকে যেয়ে বলেন, ‘তোমার স্লিপ আমাকে বেজন্মা বলে গালি দিয়েছে’। কিন্তু উডফুলের অপমানসূচক উত্তরের জন্য তিনি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। উডফুল তার ফিল্ডারদের দিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কোন বেজন্মা এই বেজন্মাকে ‘বেজন্মা’ বলে গাল দিয়েছে?’ এমন প্রশ্নে উডফুল তো একেবারে আক্কেল গুড়ুম!

৪# এডো ব্র্যান্ডস-গ্লেন ম্যাকগ্রা

অস্ট্রেলিয়রাই যে সবসময় স্লেজিং যুদ্ধে জিতেছে বিষয়টা এমন না, যেমন ঘটেছিল একবার গ্লেন ম্যাকগ্রার ক্ষেত্রে। জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান এডো ব্র্যান্ডসকে খোঁচা দিয়ে ম্যাকগ্রা বলেন, ‘তুমি এতো মোটা কেন’? কিন্তু ব্র্যান্ডসের উত্তরটা ছিলো আরও ধারালো। ব্যাট উচিয়ে ম্যাকগ্রার দিকে তাক করে তিনি বলেন, ‘যতবারই আমি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসি, সে আমাকে একটি করে বিস্কুট খেতে দেয়’।

৫# পার্থিভ প্যাটেল-স্টিভ ওয়াহ

উইকেটের পেছনে অভিষিক্ত পার্থিভ প্যাটেলের বয়স মাত্র ১৭, উচ্চতা কাটায় কাটায় পাঁচ ফুট। আর তার সামনে কিংবদন্তী স্টিভ ওয়াহ। এসসিজির গ্রাউন্ডে ২০০৪ সালে পার্থিভ প্যাটেল তার অভিষিক্ত ম্যাচে ঘটালেন বিস্ময়কর ঘটনা, স্লেজ করার চেষ্টা করলেন তার চেয়ে বয়সে দ্বিগুনেরও বেশি স্টিভ ওয়াহকে। একটি স্লগ সুইপের পর পেছন থেকে প্যাটেল ওয়াহকে বলেন, ‘তুমি ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার আগে আর মাত্র একটিই স্লগ সুইপ করতে পারবে’। কিন্তু ‘বাচ্চা’ প্যাটেলকে শিক্ষা দিতে সেকেন্ডও দেরি হয়নি ওয়াহ’র। ঘুরে তাকিয়ে বললেন, ‘কিছুটা হলেও সম্মান দেখাও পিচ্চি। ১৮ বছর আগে আমার অভিষেকের ম্যাচে তুমি তো ডায়পার পরে ঘুরতে’!

৬# মার্ভ হিউজ যখন টিকেট চেকার! 

পেল্লাই গোঁফের আড়াল থেকে স্লেজিং এ বেশ ওস্তাদ ছিলেন অস্ট্রেলিয় বোলার মার্ভ হিউজ। তাকে স্লেজ করতে যেয়ে উলটো নিজেই বিপাকে পড়েছিলেন পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন জাভেদ মিঁয়াদাদ। অ্যাডিলেইড টেস্টে মিঁয়াদাদকে বল করতে এলে হিউজকে দেখে মিঁয়াদাদ বলে ওঠেন, ‘তুমি যেরকম মোটা, তোমার বাস চালক হওয়া উচিত ছিল’। বিধিবাম, এই হিউজের বলেই আউট হন মিঁয়াদাদ। মিঁয়াদাদ যখন প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটছেন তখন হিউজ পাশে যেয়ে বলেন, ‘টিকেট প্লিজ!’

৭# ‘পাকিস্তানি’ টেন্ডুলকার!

‘ক্রিকেটিয় ঈশ্বর’ টেন্ডুলকারকে কখনও ভারতের জার্সি ছাড়া অন্য কোন জার্সিতে কল্পনা করা সম্ভব? কল্পনায় এ চিন্তা না আসলেও বাস্তবে এটাই ঘটেছিল! ভারতের জার্সিতে টেন্ডুলকারের তখনও অভিষেক হয়নি। ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের এক প্রস্তুতি ম্যাচে তাকে ভারতের ড্রেসিংরুম থেকে পাঠানো হয় পাকিস্তানের হয়ে ফিল্ডিং করার জন্য। পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলছেন টেন্ডুলকার- এমন চিন্তা মাথায় না আসলেও বাস্তবে এমন কিম্ভূত ব্যাপার আসলেই ঘটেছে।

৮# ১১ এর কাকতাল

২০১১ সালের ১১ই নভেম্বর নেলসনে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচে স্থানীয় সময় ঠিক ১১টা বেজে ১১ মিনিটে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১১ রান! সময় আর খেলার এমন আধ্যাত্মিক কাকতাল ক্রিকেট দুনিয়া আগে কখনও দেখেনি।

৯# শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম ইজ গ্রেটার দ্যান লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড

ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। আর সেদিনের মিরপুর ক্রিকেট গ্রাউন্ড শের-ই-বাংলা মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে খেলা হয় ২০০৬ সালে। দুই স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ৪০ বছরের ফারাক থাকলেও মিরপুরে এখন পর্যন্ত ওয়ানডে সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০০’রও বেশি। আর লর্ডসে? মাত্র ৬৬ টি!

১০# টেস্টের শততম বার্ষিকীর ম্যাচ রেজাল্টে এ কোন জাদু! 

ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বপ্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয় মের্লবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ১৮৭৭ সালে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ৪৫ রানে। ঠিক তার ১০০ বছর পর ১৯৭৭ সালে টেস্টের শততম বার্ষিকী উদযাপনে সেই মেলবোর্নেই অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি টেস্ট ম্যাচ। মাঝে এক শতক বর্ষ চলে গেলেও ফলাফলটা আর বদলায়নি! সে ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ৪৫ রানে।

৫১৪৮ পঠিত ... ১৮:০২, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top