আপনি আমি কেন মামদানি হতে পারব না!

৩৪২ পঠিত ... ১৯:৫৫, নভেম্বর ০৯, ২০২৫

ফেসবুকে অনেকের মাঝেই মামদানিকে ইনগ্রুপ ভাবার ইউটোপিয়া দেখে মনে হলো; একটু রিয়ালিটি চেক করে রাখা প্রয়োজন।

মামদানি যেভাবে মোদির তীব্র সমালোচনা করে তাকে গুজরাটের কসাই বলেছেন; এটা বলার মতো সৎ সাহস আপনার নাই। মামদানির দাদা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারের সামনে গিয়ে হাত কচলায়নি। ফলে তার এই সৎ সাহস আছে।

মামদানি যেভাবে এলজিবিটিকিউ জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন ও সমানুভূতি দেখাতে পেরেছেন; এটা আপনি পারবেন না। কারণ সমাজের মানুষের জীবন যাপনে বৈচিত্র্য থাকবে; এই ব্যাপারটা মামদানি শৈশব থেকে শিখেছেন। কিন্তু আপনি শিখেছেন, সবাইকে আপনার মতো জীবন যাপন করতে হবে; এর অন্যথা হওয়া যাবে না।

মামদানি যেভাবে হিজাবি ও স্কার্ফ পরা আন্টিদের সমাজে দীর্ঘদিন একাত্ম হয়ে মিশেছেন; ওটা আপনি পারবেন না। কারণ ধার্মিক আন্টি আপনার চোখে আউটডেটেড; আর আধুনিক হতে গেলে আন্টিদের কেবল জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মতো পোশাক পরে ঘুরতে হয়; হিজাব নিয়ে হাসাহাসি করতে হয়।

মামদানি যেরকম তার স্ত্রীর পোশাকের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেন; আপনি তা করেন না। কারণ আপনার যুক্তি হচ্ছে, কেউ হিজাব না পরা মানেই-পর্দা পুসিদা না করা মানেই ইসলাম ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য মামদানির স্ত্রী সিরিয়ার মুসলমান। তার পূর্বপুরুষ আপনার অনেক আগেই ইসলামের দাওয়াত কবুল করেছেন। তিনি প্যালেস্টাইনের গণহত্যার প্রতিবাদে ছবি এঁকেছেন। মামদানির বিজয়ী ভাষণের সময় যে পোশাক পরেছেন, তার নকশা প্যালেস্টাইনের লোকশিল্প থেকে অনুপ্রাণিত।

মামদানির মা তার প্রথম চলচ্চিত্র সালাম বোম্বে'র উপার্জিত অর্থ মামদানির নানীকে দিয়েছিলেন। তিনি ঐ টাকা পথশিশুদের কল্যাণে ব্যয় করেছিলেন। এই ফিল্যানথ্রপি আপনার জীবন ধারায় নেই। আপনি এফলুয়েন্স অর্জন করে এলিট হতে চান। আর মামদানি অল্প বাড়ি ভাড়ার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। উগান্ডায় কেনা একখণ্ড জমি ছাড়া তার কোন স্থাবর সম্পত্তি নেই। মামদানির মা বলিউডের চলচ্চিত্রকার; কিন্তু ক্ষমতা-ঈশ্বরকে তেলাঞ্জলি দিয়ে দিল্লি বা বোম্বেতে প্লট জোগাড় করেননি। নিজ যোগ্যতা দিয়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। উচ্চবিত্ত না হয়ে সচ্ছল মধ্যবিত্ত থেকে সাদাসিধে জীবন যাপন করেছেন। এই মা একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও ছেলেকে মুসলিম পরিচয় গ্রহণে উতসাহিত করেছে। অথচ আপনি একটু প্রগতিশীল হলেই নিজের নাম রাখেন পথিকৃত বাতেন; আর ফেসবুকে যুক্তি দিয়ে বেড়ান কেন মামদানিকে মুসলমান বলা ঠিক নয়। কারণ আপনি শিখেছেন সোশ্যালিস্ট হলেই ইসলাম নিয়ে হাসাহাসি করতে হবে। মামদানির বাবা-মা এবং সে সোশ্যালিজমটা বেঙ্গল রেনেসাঁর সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কুঁচকুঁচানি থেকে শেখেননি।

মামদানি যখন বলেন, নিউইয়র্ক এমন এক শহর যেখানে দুপুরে মানুষ চার্চে যায়; রাতে যায় ক্লাবে; আপনি তখন হারাম ও হালাল বিতর্কে উত্তেজিত হয়ে ফতোয়া দেন, কেন ক্লাবে যাওয়া ও খুশিজল পান করা হারাম। আপনার নিজের লাইফ স্টাইল অন্যের ওপর চাপানোর যে জিদ, এটা আপনাকে মামদানির মতো উদার মানুষ হিসেবে তৈরি হতে দেয়নি। আপনি ওয়াজ শুনে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছু মানুষের সুনির্দিষ্ট কিছু রায় নিয়ে বড় হয়েছেন। আর মামদানি ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম দর্শন সম্পর্কে তার বাবার কাছ থেকে নানা মানুষের নানা অভিমত জানার সুযোগ পেয়েছেন।

মামদানিকে জায়নিস্টেরা হামাস জঙ্গিদের অর্থায়নে বেড়ে ওঠা নেতা; হিন্দুত্ববাদীরা ‘মামদানি ভারতীয় যতটা তারচেয়ে বেশি পাকিস্তানি’ বলে ট্যাগিং করেছে। এত কড়া ট্যাগিং আপনি নিতে পারবেন না; কারণ প্রগতিশীলতার পৈতে হারানোর ঝুঁকি আপনি নিতে পারবেন না। পৈতে বাঁচাতেই আপনার নানা কলাকৈবল্য। তিন-চার প্রজন্মের সিজনড প্রগতিশীল ছাড়া এরকম ঝুঁকি নিয়ে কেউ লড়াই করতে পারে না। মামদানি তার দাদা-দাদি, নানা-নানী, বাবা মা'র কাছ থেকে একজন মুসলিম সোশ্যালিস্ট হিসেবে গর্বিত আত্মপ্রকাশের আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে। এটা শিখতে তাকে কোনো ধর্ম মামা বা কোনো সংস্কৃতি মামার কাছে যেতে হয়নি।

আপনি যে গরীবের প্রতি ভালোবাসার অভিনয় করে করে ১৫১ জন বিশিষ্ট নাগরিক হয়ে উঠতে চান; মামদানি তো ওসব অভিনয়ের মানুষ নয়। সে ট্যাক্সিচালক আর সেলসকর্মীদের সঙ্গে সহজাত সমাজ রচনা করেছে। ওর মা তার চলচ্চিত্রে, নানী তার সমাজকর্মে যেভাবে হ্যাভস-নটের সঙ্গে মিশে গেছেন আত্মার আত্মীয়তায়।

আত্মবিশ্বাস, ফ্লেক্সিবিলিটি, জনপ্রিয় অভিমতের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস; সমস্ত মানুষকে নিজের চিন্তার ক্লোন হিসেবে দেখতে না চাওয়ার ম্যাচিউরিটি; সর্বোপরি সহজ-সরল শো-অফহীন জীবন চর্যাই মামদানি।

মামদানির স্ত্রী এই নির্বাচনে নেপথ্যে থেকে সমস্ত আর্ট ওয়ার্ক করেছেন; একটি মাত্র সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দিয়েছেন মামদানি মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হবার পর। আপনার স্ত্রী হলে দেখা যেতো ফেসবুকে আপনার পক্ষ নিয়ে ঝগড়ায় নেমে পড়ত। লোকজনকে ছোটোলোক, কাড়চা, বাঙ্গি, ছাপড়ি ডেকে অজনপ্রিয় ভাবী হিসেবে ফেসবুক অস্কার জিতে নিতো।

 

 

৩৪২ পঠিত ... ১৯:৫৫, নভেম্বর ০৯, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top