হিমু এবং কয়েকটি নীল করোনা : ষষ্ঠ পর্ব

২৭০৫ পঠিত ... ১৫:১২, এপ্রিল ১৯, ২০২০

এই মুহূর্তে আমার অবস্থান মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে। সময় সকাল সাড়ে সাতটা। অদ্ভুত একটা দৃশ্যে চোখ আটকে আছে।
'বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, জরুরি সাহায্য, অর্থায়নে- বাংলাদেশের জনগণ' লেখা ব্যানার টাঙানো একটা পিক আপ রাস্তার পাশে দাঁড়ানো। তার একটু দূরেই রাস্তার ফুটপাত ধরে অনেকগুলো মিষ্টি কুমড়া, লাউ, টমেটো ইত্যাদি তরকারি সাজিয়ে রাখা। লোকজন এসে দেখি নিজ নিজ দরকার মত তরকারি উঠিয়ে নিচ্ছি। আশ্চর্য দৃশ্য!
'ধন্যি দেশের ধন্যি রাজা,
সুখে আছে সকল প্রজা' টাইপ অবস্থা!
চালচোর প্রকৃতির কোনো বিটলা চেয়ারম্যান টাইপ লোককেও দেখা যাচ্ছে না, যে মুখে শাড়ির আঁচল দেয়া মহিলা কিংবা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে ত্রাণ নিতে আসা লোকদের ছবি তুলতে জোরাজুরি করছে। অথবা মাজেদা খালার বাসার কাজের মেয়ে জমিলার ল্যাংগুয়েজ কোড অনুযায়ী 'এক চোপাড় দিয়া' মাস্ক ফেলে দিতেও দেখা যাচ্ছে না কাউকে! এই অস্বাভাবিক দৃশ্য আমার হজম হল না।
দেশের জিডিপি তো এতও ভালো না! এমনিতেই মাজেদা খালুর বাসার ছাদে খালু যখনই বেশি মাতাল হয়ে যান, তখন প্রায়ই বলেন,
: দেশের জিডিপি বিরাট খারাপ অবস্থায় আছে হিমু।
: জ্বি খালু।
: আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?
: অবশ্যই হচ্ছে খালু। আপনাকে দেখলেই বুঝা যায় আপনে উচ্চশিক্ষিত, মানে বিরাট জ্ঞানী আর কি...
: মদ্যপ এবং একই সাথে জ্ঞানী, এমন কজন লোক তুমি দেখেছো হিমু?
: আপনি প্রথম, আপনি শেষ!
: আমাকে শেষ করে দেবে বলছো?

এরপর আর আমি কথা আগাই না। জ্বি হ্যাঁ বলে পার করে দেই। ছয় পেগ এন্টি করোনা তরল হজমের পর খালুর কথাবার্তা এমনিতেই এলোমেলো হয়ে যায়। তার উপর কোন এক কৃষি বিশ্বদ্যালয়ের প্রফেসর এর মাঝে ইথানল ভ্যাপ নিয়ে করোনা দূরীকরণের উপায় বের করেছেন। বাদলের ভাষ্যমতে 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' এই ব্যাখ্যা নাকি একাত্তর চ্যানেল নামে একটা চ্যানেল সম্প্রচার ও করেছে। এদিকে ইথানল নাকি এলকোহলের যৌগ জাতীয় কিছু! ইত্যাদি কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং যুক্তি মিলিয়ে খালু আমরণ মদ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতদিন লকডাউন চলবে।

মদ খাওয়া বন্ধ করলেই নাকি তিনি মরে যাবেন! আমি তাকে এ বিষয়ে কিছু বলিনি। হিমুরা মানুষের বিশ্বাসে বাঁধা দেয় না। মন্ত্রীরা যেমন বলে দেশ নিউইয়র্ক, ইউরোপ হয়ে গেছে, তাতেও আমরা কেউ বাঁধা দেই না। এই বিশ্বাস নিয়ে তারা যদি ভালো থাকে, কী সমস্যা!

কিন্তু সবাই তো হিমু না। বিশ্বাসের দাম সব জায়গায় তাই এক না। খালু যেমন অতি বিশ্বাস করে কাজের মেয়ে জমিলাকে বলেছিলেন, 'শোন জমিলা, চুলায় ভাত যখন চড়াবে আমাকে এসে জানাবে।'
রন্ধনকার্য সংক্রান্ত অপ্রত্যাশিত নির্দেশনা খালুর কাছ থেকে পেয়ে জমিলা স্বাভাবিকভাবেই বিরাট অবাক হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, 'কেন খালু!'
: কয়েক ফোটা মদ ঢেলে দেব। তাতে যে ভাতের মাড়টা তৈরি হবে, সেটা খেলেই করোনা সারবে।

অধিক বিস্ময়ে ফসিল (পাথরের উপরেরটা) হয়ে জমিলার মুখ খারাপ হয়ে যায়, 'পু** মারছে! কি কন খালু!'
: আহ হা, মুখ খারাপ করবে না জমিলা! যা বলছি তাই করবে। আর তোমার খালাকে এসব জানানোর দরকার নেই। আমাকে জানাবে। আমি এসে মদ ঢেলে দিয়ে যাব।

খালুর নিষেধ জমিলা শোনেনি। খালাকে সে সাথে সাথেই করোনা দূরীকরণের মহৌষধের কথা জানিয়ে দিয়েছে। সাথে নাকি ফিচলা হাসি দিয়ে জমিলা বলেছে, 'খালুরে দেখলেই বোঝা যায় উনি উচ্চশিক্ষিত, মানে বিরাট জ্ঞানী লোক!'

বাকিটুকু ইতিহাস। বাড়িতে তিনদিন ধরে খালুর ভাত বন্ধ। মাজেদা খালা আমার কাছে বিরাট দুঃখ নিয়ে এই আলাপ জুড়েছেন...
: হিমু।
: জ্বি খালা।
: তোর খালুর ঘটনা শুনেছিস? কী করেছে জমিলার সাথে?!
: না তো খালা! 'গৃহকর্মীর সাথে এ কী করলেন মদ্যপ গৃহকর্তা' টাইপের কোন ঘটনা নাকি?
: এক থাপ্পড়ে কান গরম করে দেব, বেয়াদব। যা মুখে আসে তাই বলিস। তোর শোনার দরকার নেই। দূর হ।
: আচ্ছা, বলো খালা। শুনছি।
বলার আগ্রহের কাছে খালার রাগ অতি সহজেই পরাস্ত হলো।
সারমর্ম যা পাওয়া গেল, তাতে খালুর ভাতের মাড়ের মহৌষধের এই ঘটনা জানলাম। সাথে এও জানলাম, জমিলা টিটকারি করে খালাকে বলেছে, 'খালা, কোনদিন জানি খালু কয় থানকুনি পাতা ছাগলের পাছায় ডইল্যা খাইলে এই রোগ যাবে!' কত বড় স্পর্ধা জমিলার, ভেবে নাকি খালা অবাক! আমি খালাকে আর ভেঙে বললাম না যে জমিলা ভুল কিছুও বলেনি। গ্রামগঞ্জে অলরেডি থানকুনি পাতা খোঁজার হিড়িক পরে গেছে।

মেসের পাশের দোকানের মফিজুর একবার আলাপে বলেছিল, 'হিমু ভাইজান। শেষ জমানায় মানুষ আগের যুগে আবার ফেরত যাবে। ঘাস, লতাপাতা খাবে।'

মফিজুর বলছিল আর পান খাচ্ছিল। সাথে পানের বোঁটাও মুখে দিয়ে চাবাচ্ছিল। চোখের সামনে শেষ যমানার উপযুক্ত প্রমাণ দেখে আমি অনেকক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আজকে জমিলার কথায় আবার মুগ্ধ হলাম। শেষ যমানা এসে যাওয়ার প্রমাণ চারিদিকেই পাওয়া যাচ্ছে মনে হয়।

আপাতত যমানা শেষ হয়ে গেলেও আমার যাত্রা শেষ হয়নি। মেসে যেতে হবে। তিন দিন হয় মাজেদা খালার বাসায় যাচ্ছি না। দুপুরের খাবার মিস হয়ে গেলে ঝামেলা আছে।

বিদ্যানন্দের গাড়িটা পাশ কাটিয়ে ফুটপাতে স্তূপাকৃতি করে রাখা তরকারির দিকে আগালাম। আরো দুটো ছেলেকে দেখলাম অদূরে পিপিই পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম এরা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনেরই হবে।

একদম ছোটবেলার পিটি লাইনের মত নির্দিষ্ট গ্যাপ রেখে রেখে লোকজন মনের আনন্দে এসে তরকারি নিয়ে যাচ্ছে। আমি আসলে এগিয়ে এসেছি এই অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যটা দেখতে।
আমার হঠাৎ মনে হল, বাবার দেয়া আমার মহাপুরুষ ট্রেনিংয়ে আসলে ঘাপলা আছে। ঘাপলা না থাকলে আমার উচিত ছিল এতদিনে এদের সাথে এসে যোগ দেয়া। আমি ট্রেনিং পেয়েও সাধারণ পুরুষদের মতো চুপচাপ বসে আছি। অথচ এরা ট্রেনিং বাদেই এই দুঃসময়ে মহাপুরুষের মতো মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে।

হঠাৎ খেয়াল করলাম, দাঁড়িয়ে থাকা দুজনের একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে। একটু দূরে এসে থামলো ছেলেটা, 'হিমু ভাই, আমাকে চিনেছেন?'
এসব ক্ষেত্রে আমার খুব বিপদ হয়ে যায়। আমি হঠাৎ করে অনেককেই চিনতে পারি না। আর পিপিই পরা কেউ মাস্কের ওপাশ থেকে কথা বললে চিনতে না পারা দোষের কিছুও না। না চিনলেও আমি একটা হ্যাঁ-বোধক আন্তরিক হাসি দিয়ে মুখেও বললাম, 'হ্যাঁ, চিনেছি।'
: চিনেন নাই হিমু ভাই। আপনার মিথ্যা বলা হয় না। মহাপুরুষ হইলে এইটাই সমস্যা, তারা মিথ্যা বললেই ধরা খায়।
আমি বেশ লজ্জাই পেয়ে গেলাম। ছেলেটাই নিজের নামটা আবার বললো, 'হিমু ভাই, আমি হিমু ভাই!'
: হ্যাঁ?
আমার মনে হলে আমি কানে ভুল শুনলাম। হিমু আমি ছাড়াও কারও নাম হতেই পারে, কিন্তু একটা লোকের নামে ভাই কেন থাকবে!

: জ্বি ভাই, আপনি আমারে এই নাম দিছিলেন। রাত বিরাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভার্সিটি জীবনের শুরু করেছিলাম। রক্ত খুঁজতাম মানুষের জন্য। আপনাকে আমি চিনতাম হিমু ভাই। একদিন আপনার সাথে দেখা হইলো। আপনি বলেছিলেন, আপনি যদি রাত বিরাতে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে হিমু হন, আমি তো হেঁটে হেঁটে সেই সাথে রক্তও জোগাড় করি। সেই হিসেবে আমি নাকি ডাবল মহাপুরুষ। আপনি আমার নাম দিয়ে দিলেন- হিমু ভাই। শুধু হিমু বললেই নাকি হয় না, ডাবল পাওয়ার দেয়ার জন্য নামে ভাই যুক্ত করা লাগে।

কথা বলতে বলতে 'হিমু ভাই' নামের এই শুকনো গড়নের গাঢ় শ্যামলা ছেলেটা মাস্কটা নিচু করলো। আমার ওকে মনে পড়েছে।
: হিমু ভাই, তুমি তো এখন ট্রিপল মহাপুরুষ হয়ে গেছো!
ছেলেটা খুব সরল সুন্দর হাসি দিলো। ভালো মানুষের হাসি দেখলে মন ভালো হয়। আমার মন ভালো লাগলো।
: হিমু ভাই, আপনি নিজের জন্য কিছু নেবেন না জানি, কারো জন্য কিছু নিয়ে যাবেন?
আমার মাথায় প্রথমেই মেসের পাশের চা দোকানদার মফিজুরের কথা মনে পড়লো। শেষ যমানার লতাপাতা খেয়ে সে যদি এই সময় পরিবার নিয়ে দিন পার করে, সেটা নিশ্চয়ই ভালো কথা না! এখন মফিজুরের দোকানও বন্ধ। আমি 'হিমু ভাই'কে জানালাম, আমি একটা পরিবারের জন্য খাবার নেবো। হিমু ভাই আমাকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো। আমি একটা পরিবারের প্রয়োজনমতো তরকারি উঠিয়ে নিয়ে নিলাম।

: হিমু ভাই, শোনো। তোমাদের এই বিদ্যানন্দ আমাকে ভালো লাগা রোগে আক্রান্ত করেছে। আমি আমার খুব বিশেষ পছন্দের একটা মানুষকে নিয়ে তোমাদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে আসতে চাই। যদি আপত্তি না থাকে তোমাদের...
-হিমু ভাই, এইসব বিনয় সৌজন্যবোধ আপনার সাথে একেবারে যাইতেছেই না। যাকে নিয়ে আসবেন আমাকে জানিয়ে চলে আসবেন।

হিমু ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুপুর হবার কিছু আগে আগেই পায়ে হেঁটে আমার মেস এলাকায় চলে আসলাম। মফিজুরের দোকান বন্ধ, বন্ধই থাকার কথা। মফিজুরের টিনশেড বাসায় গিয়ে দরজায় টোকা দিলাম। দরজা খুলে আমাকে দেখে মফিজুর ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। ঘামে ভেজা জবজবে হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমু ভাইজান তরকারির ব্যাগ থেকে হালকা উঁকি দেয়া মিষ্টি কুমড়া, লাউ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এই দৃশ্য দেখা আর ভূত দেখা মফিজুরের কাছে সমান কথা। মেলোড্রামা করার সুযোগ না দিয়ে চলে এলাম এবং সাবধান করে দিয়ে এলাম, রান্না করা তরকারির বাঁটি আমার মেসে আসলে করোনাভাইরাসের বোমা মেরে আসবো মফিজুরের বাসায়। মফিজুর একজন আবেগপ্রবণ অতিথিবৎসল কৃতজ্ঞ নিম্নবিত্ত বাঙালি, এদের দিয়ে ভরসা নেই। করোনা রোগীকে দেখতে যে আম কাঁঠাল নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না ,এই কষ্টেই এদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, করোনা ভাইরাস বোমার কথা বলেও বিশেষ লাভ হবে না। মফিজুর ঠিক ঠিক দুপুরবেলা মিষ্টি কুমড়া নিয়ে আসবে বাটি ভর্তি করে।

মফিজুরের বাসা থেকে হেঁটে আমার মেসের সামনে এসে আমি ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম। এ কে!
মাজেদা খালার মেজো ননদের মেয়ে সাব্রিনা মেসের সামনে দাঁড়ানো। এই মেয়ে এখানে কী করে। আমি সামনে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
: আপনি বাসায় আসেন না তিনদিন হয়েছে হিমু সাহেব।
: জ্বি। মেসের ঠিকানা কি বাদল দিয়েছে?
: সেটা জানা তো আপনার জরুরি বিষয় না।
প্রচন্ড ঘামে চুপচুপা হয়ে আমার পাঞ্জাবি একেবারে ট্রান্সপারেন্ট হয়ে গেছে। এই অবস্থায় মেয়েটার সামনে আমি বেশ বিব্রত বোধ করছি। আর একটু খেয়াল করে দেখলাম, মেয়েটাকে আগে যত সুন্দর মনে হচ্ছিল, সে তার চেয়েও সুন্দর। তাতে অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল। ছেলেদের মেসের সামনে এসে দাঁড়ালে কি মেয়েদের রূপ বেড়ে যায়?
: আপনার মেসের দরজা সারাদিন সবসময় এভাবে হাঁ করে খোলা থাকে?
: জ্বি।
: কেন? মহাপুরুষদের ঘরে চোর-টোর আসে না?
আমি চুপ।
: আপনার মেসের পরিবেশ ভয়াবহ নোংরা হিমু সাহেব। এখানে থাকবেন না। খালা চিন্তা করছে, তাই এসে বলা। এছাড়া আমার এসে বলার কোন ঠেকা পড়েনি। আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?
: জ্বি, পেরেছি।
: গুড। আর একটা কথা, আপনি একটা ভুল ধারণা নিয়ে আছেন আমার সম্পর্কে, সেটা ভেঙে দেই।
: আমি কোনো ভুল ধারণা নিয়ে নেই।
: না, আছেন। আপনার মনে হচ্ছে আমি ইন্টার্ন ফাঁকি দিয়ে ঘরে বসে পালিয়ে আছি, বিষয়টা সত্যি না। একজন ডাক্তার হিসেবে আমি আমার মেডিকেলের, আমার ব্যাচের সবাইকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। একের পর এক রোগী আসছে, অথচ কোনো ডাক্তারের ঠিকঠাক মাস্ক নেই, পিপিই নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবাই আক্রান্ত হতাম, মারা যেতাম, কারো ক্ষতি ছাড়া উপকার হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়া আমরা নিশ্চিত আত্মহত্যার পথে এগোতে চাইনি। প্রশাসন ঠিকঠাক ইকুপমেন্টস দিলে আমরা সবাই কাজে ফিরবো।

মেয়েটার মনটা দেখলাম হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল। আমারও খারাপ লাগছে। খারাপ লাগার কারণে আমার খারাপ লাগা আরও বাড়লো, হিমুদের আবার খারাপ লাগবে কেন? আমি জানতে চাইলাম, 'এখন সমস্যার সমাধান হয়েছে?'
: হয়েছে।
: কংগ্রাচুলেশন। আমি বাসায় আসবো সাব্রিনা। আপনি আসুন। এগিয়ে দিচ্ছি।
: এগিয়ে দিতে হবে না হিমু সাহেব। সৌজন্যতা করবেন না। সৌজন্যতা আপনার সাথে যাচ্ছে না।

কি বিপদ! একই দিনে একেবারে ভিন্ন জায়গার দুইজন একই কথা বললো! আমি কি সারাজীবন মানুষের সাথে এতই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছি! এই সংশয়েই হয়তো সাব্রিনা মানা করা স্বত্তেও একরকম স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করে আমি মেয়েটাকে এগিয়ে রিক্সায় উঠিয়ে দিলাম।

 

২.
মেসের রুমে ঢুকতেই চোখ পড়লো আমার বিছানার পাশে রাখা টি-টেবিলটার উপর। সেখানে একটা স্টিলের বাটি দেখা যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত উপরের ঢাকনাটা তুললেই গরম ভাপ ওঠা মিষ্টি কুমড়ার তরকারি দেখা যাবে! আনমনে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মফিজুরকে 'করোনাভাইরাস বোমা'র ভয় দেখানোতে সে যে একটুও ভয় পায় নাই, সেটা প্রমাণ করতে মফিজুর সময় নিয়েছে আধা ঘন্টা! আমি নিশ্চিত, করোনাভাইরাসের শরীর থাকলে মফিজুরের গালে এসে এখন ঠাস করে একটা চড় দিয়ে যেত।

: বাইরইচস ক্যা? এই তুই বাইরইচস ক্যা...
ডায়লগদাতা একজন পুলিশ। ডায়লগ হজম করছেন একজন সাংবাদিক। শুধু ডায়লগ হজম করেই সাংবাদিক নিস্তার পাচ্ছেন না। পাছার উপর লাঠির বাড়িও হজম করছেন। আমি নিশ্চিত এই সাংবাদিকের জায়গায় আমি থাকলে এতক্ষণে বাংলা সিনেমার নায়ক কাজী মারুফের মত মাটিতে ফ্রগজাম্প স্টাইলে বসে পড়ে মাটি চাপড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বলতাম, 'এইই, তুই কি বললি, কি বললি, কু*** বাচ্চা, তুই কি বললি, কি বললি...!' আমি লক্ষ্য করেছি, কাজী মারুফ আর মাজেদা খালার বাসার কাজের মেয়ে জমিলা এই দুইজনের মুখই খুব খারাপ। এবং প্রচন্ড কাকতালীয় হলেও এই সত্য আমি আবিষ্কার করেছি, জমিলার প্রিয় নায়ক কাজী মারুফ। কাজী মারুফের নাম জমিলা দিয়েছে, 'কালো বন্দুক ভাইজান'। জমিলাকে যদি জিজ্ঞেস করি, 'কিরে জমিলা কালো বন্দুকের কাজ কী? জমিলা ফিচকা টাইপ হাসি দিয়ে বলে, 'শরমের কাম!'

পুলিশের ভাষা শুনে আমি বোঝার চেষ্টা করছি ইনি কোন অঞ্চলের। আমি এগিয়ে গিয়ে দিনের দ্বিতীয় স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করলাম, মানে হালকা বোঝাবার চেষ্টা করলাম, 'দেখেন ভাই, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন জানি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একের পর এক ডিউটি করছেন। কিন্তু এই সাংবাদিক ভাইও আপনার মতোই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পৌঁছাচ্ছেন মানুষের কাছে। ওনাকে পেটাচ্ছেন কেন?'

পুলিশ ভদ্রলোক আমাকে আপাদমস্তক দেখলেন। মুখে মাস্ক মেই, পায়ে জুতা নেই, চুল উসকো খুসকো। পুলিশের দৃষ্টিতে বিস্ময় দেখে মনে হলো, বোধহয় আমিই করোনাভাইরাস! করোনাভাইরাস দেখতে মানুষের মত হলে আমার মত হতো। এবং জীবনে এই প্রথম পুলিশ ভাইজানদের সাথে বিটলামি না করে ঠান্ডা মাথায় কথা বলার পরও আমি পেছনে নবাবী বাড়ি অনুভব করলাম। এবং সেই সাথে সাংবাদিকের প্রশ্ন আমার উপর ট্রান্সফার হলো, 'তুই বাইরইচস ক্যা??'
আমার মনে হল একটু ফাজলামো করি। বললাম, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে!

সাংবাদিক দেখলাম এই তীব্র লাঠির বেদনায়ও আমার এমন উত্তর শুনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছেন। জনাব 'বাইরইচস ক্যা' সাহেব আমাদের দুজনকে আরও দুটো বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিলেন। কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে ফার্মগেটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলেন, 'আপনি কী করেন?'
: আমি সাংবাদিক।
সত্যি সাংবাদিক আমার উত্তর শুনে বিরাট অবাক হলেন। অবাক হবার কারণ আছে যথেষ্ট। সকাল থেকে রোদে হেঁটে এই শেষ বিকেলে আমার চেহারায় চালচোর ভাব বিদ্যমান। এমন কেউ তো নিজেকে সাংবাদিক দাবি করলে তো ঝামেলা।
: আপনি সাংবাদিক!? কোন পত্রিকার?
: শেষের আলো।
ইচ্ছে করেই বললাম। আমি সাংবাদিক সাহেবের গলায় জার্নালিস্ট আইডি কার্ড ঝুলানো দেখছি। ওখানে লেখা প্রথম আলো।
: ওহ। আপনাদের হেড অফিস কই? নাম শুনিনি আসলে কখনো।
: শোনার কথা না। আমরা আখেরি নিউজ দেই। হেড অফিস আজিমপুর গোরস্থানের সাথেই। গিয়ে 'করোনা হিমু' বললেই সবাই আমার খোঁজ দিয়ে দেবে। কখনো কোন আখেরি নিউজ দেয়ার দরকার হলে আমাকে জানাবেন। করোনার দিন। অনেক আখেরি নিউজ দরকার হবে। আসি....

সাংবাদিক সাহেবের মুখ অর্ধেক খোলা রাখা অবস্থায় রেখে চলে এলাম। আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দিলাম না। কারণে অকারণে সাংবাদিকদের নানান প্রশ্ন আমার পছন্দ হয় না।

আমাকে এখন একটা কল করতে হবে। কলটা দেব রূপাকে। অনেকদিন আমি কাউকে কল দেই না। সন্ধ্যা নেমে গেছে, রূপার এখন বাড়িতেই থাকার কথা। আমি আবার উল্টো পথে হেঁটে কারওয়ান বাজার সিগন্যালে এসে 'বাইরইচস ক্যা' পুলিশ সাহেবের কাছে একটা কল করার জন্য তার ফোন চাইলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে বাইরইচস ক্যা সাহেব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার ফোনটা দিয়ে দিলেন। আমি রূপাকে কল দিলাম। রিং হচ্ছে।
: হ্যালো রূপা।
: শুনছি বল।
: আচ্ছা, তোমার কি কখনোই একটু ইচ্ছে করে না কল ধরে 'হিমুউউ, তুমি কেমন আছো?!' এভাবে কথা বলতে?
: না হিমু। তুমি জানো আমার অযথা মেলোড্রামা পছন্দ না।
: সেটাও ঠিক।
: কেন কল করেছো বল।
: এমনি করেছি।
: না। এমনি করনি। কোন কারণেই করেছো।
: আমি কি সবসময়ই কোন কারণে কল করি?
: হ্যাঁ, তুমি সবসময়ই কোন না কোন কারণেই কল করো। ছোট কিংবা তুচ্ছ কারণও তো কারণ।
: আজকের কারণটা তাহলে তোমার ভাল্লাগবে।
: শুনি।
: রূপা, তুমি কি নীল একটা শাড়ি পরে আজকে বাসা থেকে বের হতে পারবে? পরনে নীল শাড়ি। মুখে নীল মাস্ক। আজকে আমরা একটা সুন্দরতম জায়গায় যাব।
(ফোনের ওপাশে কঠিন নীরবতা, এপাশেও মি. 'বাইরইচস ক্যা'কে দেখে মনে হল তিনি আমাকে আরেকটা নবাবী বাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন)
: রূপা, লাইনে আছো?
: হু।
: কিছু বলছো না যে? বের হবে?
: হবো। একটা রিক্সা নিয়ে বাসার সামনে এসে দাঁড়াবে। আমরা রিক্সায় করে সুন্দরতম জায়গায় যাব।
: আচ্ছা।

আমি আর কিছু না বলে খট করে ফোন রেখে দিলাম।

কিছু কাজ আছে। এগুলো শেষ করে রূপাকে আনতে যাব। রূপাকে নিয়ে আজ বিদ্যানন্দের রাতের স্বেচ্ছাসেবী তারাদের দলে ভিড়বো। রূপার এমন কিছু স্বেচ্ছাসেবী দল খুব পছন্দ। মেয়েটা আজ খুশি হবে।

 

৩.
রূপাকে নিয়ে আমি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি ট্রাক ভর্তি তরমুজের সামনে। রূপার পরনে নীল শাড়ি, আমার পরনে হলুদ পিপিই!

অনেক কষ্ট করে আমার জন্য এই হলুদ পিপিই যোগাড় করেছে বিদ্যানন্দের হিমু ভাই। সারাপথ রিক্সায় এভাবে এসেছি। রাস্তায় লোক কম। যে দু একজন আছে, তারাও নীল শাড়ি আর হলুদ পিপিই'র কম্বিনেশন খুব একটা ভালো ভাবে নিয়েছে বলে মন হল না! তাতে কোন সমস্যা নেই। এই করোনার দিনেও রূপাকে নিয়ে বের হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃতি আমাদের খুব ভালোভাবে নিয়েছে।

তাতেই হবে।

হিমু ভাই এবং বিদ্যানন্দের বাকিরা বিরাট কাজে ব্যস্ত। আমি আর রূপাও এই কাজে ঢুকে যাব। হিমু ভাই এগিয়ে আসলো। আমি কিছু বলার আগে রূপাই কথা বলে উঠলো, 'শোনেন হিমু ভাই, এই যে ট্রাক ভরে ভরে তরমুজ, তরকারি দেখা যাচ্ছে, এগুলো কই যাবে এই রাতে?'
হিমু ভাইয়ের উত্তরে যা পাওয়া গেল তাতে আমি পুনরায় ভালো লাগা রোগে আক্রান্ত হলাম। এই তরকারিগুলো ওইসব কৃষকের ক্ষেত থেকে কিনে আনা, যারা লকডাউনের এই দুর্দিনে বেঁচা বিক্রি বন্ধে অসহায় দিন পার করছিলেন। একদিকে কৃষকের মুখে হাসি হলো, এদিকে না খেয়ে থাকা লোকের পেটে বিনামূল্যে খাবার। কারণ, এই খাবারগুলো বিনামূল্যে নিম্নবিত্ত অসহায় লোকেদের ঘরে চলে যাবে রাতের আঁধারে। সাহায্যের এত সুন্দর মডেল আর হয়!

আমার হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলের কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা গাছের চারদিকে চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে যাচ্ছিল গাছের গোড়ায়। আমি জানতে চেয়েছিলাম, 'কিরে, তুই কী করিস?'
: গাছের গোড়ায় বাইড়াইতেছি।
: সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। দুনিয়ায় পেটানোর এত কিছু থাকতে গাছ পেটাচ্ছিস কেন?
ছেলেটা অল্প সময় আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, 'ক্ষুধায়, এভাবে বাড়ি মাইরা ঘুরলে ক্ষুধা মাথায় আসে না।'

হিমু না হয়ে অন্য কেউ হলে আমার চোখ এখন ছলছল করে উঠতো। কিন্তু মহাপুরুষ হয়ে এই কাজ আমি করতে পারি না। ওলট পালট কিছু করলেই স্বপ্নের মধ্যে বাবা এসে জ্বালাতন করে, জ্ঞান দেয়। ভালো লাগে না।
এই যে, আজ যেমন দেবে। এই করোনার মধ্যে রূপাকে নিয়ে কেন বের হয়েছি! এখন এসব ভাবতেই ইচ্ছে করছে না।

 

৪.
রামপুরা ওয়াপদা রোডের জাহাজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর রূপা। রাত বাজে এগারোটা। সাথে আরো দুইজন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবী। আমাদের সাথে এক পিক আপ তরকারি। একেক বাসার সামনে চুপচাপ একেকটা কার্টন রেখে আসতে হবে। লিস্ট করা আছে কাদের বাসায় যাওয়া হবে।

রূপার চোখমুখে আনন্দের আভা আসলে ওর চোখমুখে দেবী ভাব স্পষ্ট হয়ে যায়। রূপা এই তথ্যটা জানে না। কিংবা হয়তো জানে।
পাশাপাশি একটা করে কার্টন কোলে নিয়ে এক বাসার সামনে যেতে যেতে রূপাকে বললাম, 'তুমি তো স্বেচ্ছাদেবী হয়ে গেছো!'
: কেন!
: এই যে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করতে এসে তোমার চোখমুখে দেবী ভাব এসেছে। এজন্য তুমি স্বেচ্ছাদেবী!
: ফাজলামো করছো?
: আচ্ছা বাদ দাও সেসব কথা...
বলেই আমি ফ্যাক করে হেসে দিলাম। রূপাও চেহারার গম্ভীর ভাব খুব চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারলো না। এই 'বাদ দাও সেসব কথা' উক্তির একটা নিগূঢ় রহস্য আছে আমার আর রূপার কাছে!

থালার মত চাঁদ উঠেছে আকাশে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমাদের এই এলাকায় তরকারি বিতরণ প্রায় শেষের দিকে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে মূল সড়কে ফেরার সময় একটা অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য দেখে আমি আর রূপা দাঁড়িয়ে গেলাম।

রাস্তার সিকিউরিটি গার্ড এক লোককে একটা তরকারির বাক্স দিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি রাস্তার পাশেই একটা যাত্রী ছাউনির মত জায়গায় সেই কাটন মাথার নিচে দিয়ে চোখমুখে প্রশান্তি নিয়ে শুয়ে আছেন, আর বেশ শব্দ করে মোবাইল ফোনের ওপ্রান্তে খুব সম্ভবত তার সন্তানের সাথে কথা বলছেন, 'চিন্তা কইরো না আম্মাজান, খাওয়া দাওয়া নিয়া চিন্তা নাই। শহরে কিছু ভালো পুলাপান আছে গো আম্মা। খাবার আইসা আইসা দিয়া যায় প্রতি রাতে।'

অদূরেই বিদ্যানন্দের পিকআপ দাঁড়ানো, চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত রাস্তায়।
সেখানে লেখা, 'অর্থায়নে বাংলাদেশের জনগন'...

আমার ভেতরটা হঠাৎই আকুলি বিকুলি করে উঠলো। রূপার দিকে তাকালাম।
: রূপা, তোমার হাতটা একটু এগিয়ে দেবে।
রূপা অবাক হয়ে আমার চোখ-মুখের দিকে তাকালো। আমার এই সম্মোহনী চোখ ও চেনে! রূপা ওর হাত বাঁড়িয়ে দিল। আমি আমার হ্যান্ড স্যানিটাইজারটা বের করে দুই চাপ রূপার হাতে দিলাম, দুই চাপ নিজের হাতে।
তারপর রূপার হাত আমার হাতের মাঝে নিয়ে শক্ত করে ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
আমার ভাবভঙ্গি আর কর্মকান্ড দেখে রূপা খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে, হেসেই যাচ্ছে।

পুরো শহর লকডাউন। কোথাও কেউ নেই। এত নীরব নিঃশব্দ রাস্তায় আমরা কখনো হয়তো একসাথে হাটিনি। হঠাৎ মনে হলো, এই বিশ্বজগৎ খুব সুন্দর।

প্রকৃতিও বোধহয় তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে কোলে নেবার আগে সবকিছু একটু স্যানিটাইজ করে নিচ্ছে।

[চলবে]

 

আরও পড়ুন: 

হিমু এবং কয়েকটি নীল করোনা : পঞ্চম পর্ব

হিমু এবং কয়েকটি নীল করোনা : চতুর্থ পর্ব

হিমু এবং কয়েকটি নীল করোনা : তৃতীয় পর্ব

হিমু এবং কয়েকটি নীল করোনা : দ্বিতীয় পর্ব

হিমু এবং কয়েকটি নীল করোনা : প্রথম পর্ব

২৭০৫ পঠিত ... ১৫:১২, এপ্রিল ১৯, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top