পালকি শর্মা প্রতিদিন সকালের মতো আজো খুব ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে হারমোনিয়াম নিয়ে গলা সাধছে, সা রে গা মা পা পা-কি-স্তা-ন।
মর্নিং ওয়াক সেরে অর্ণব গোস্বামী হাজির হয়। সে হাত তুলে বলে, এখন থেকে সা রে গা মা তা সাধবে। কারণ তু-র-স্ক নিয়ে অনেক ভাটের আলাপ করতে হবে।
--হঠাত তুরস্ক কেন!
--বাড়ির পাশের পাকিস্তান তো ভারতের মতোই কাবাডি প্লেয়ার। কিন্তু তুরস্ক তো দাবা খেলে। বুঝেছো পালকি, তুর্কিয়ে হচ্ছে সাতরাঞ্জ কি খিলাড়ি।
গদি মিডিয়ার এক পাল হোস্টের হোয়াটস এপ গ্রুপে পালকি লিখে দেয়, অপারেশন মেরা সুলতান! এখন থেকে তুরস্ক নিয়ে আলাপ শুরু।
ময়ূখরঞ্জন দৌড়াতে দৌড়াতে স্টুডিওতে ঢুকে পড়ে। ভুলে যাবেন না কি করে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিলো। ভুলে যাবেন না কি করে গুপ্ত সাম্রাজ্য লুপ্ত হয়েছিলো। কি করে দিল্লি সালতানাতের অন্ধকার যুগ এসে পড়লো। আমরা যখন শাকপাতা খেয়ে পুঁতিয়ে গিয়েছিলাম; তখন তুরস্কের ডাকাতেরা ল্যাম্বরোস্ট খেয়ে এসে আমাদের শুঁটিয়ে লাল করে দিয়েছিলো। এবার তার প্রতিশোধ নিতে হবে; প্রবল প্রতিরোধে।
অর্ণব গোস্বামীর শোতে তুরস্কের ঘনঘটা নিয়ে আলাপ করতে যুক্ত হন অগ্নিবীণা সিক্রি ও বিমর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
খ্যাসখেসে গলায় অগ্নিবীণা সিক্রি বলেন, অপারেশন সিন্দুর সফল হয়নি তুরস্কের কারণে। তুরস্কের বানানো ড্রোন পেয়ে আমাদের শত্রুরা এ যাত্রা বেঁচে গেছে।
বিমর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বিশ্লেষণ করেন, তুরস্ক হয়েছে এমেরিকার অস্ত্র কারখানা। আমরা যেমন এমেরিকার বস্ত্র কারখানা।
টিভিতে এসব আলোচনা দেখে জিভের নীচে প্রেশারের ওষুধ দিয়ে বিজিত দোভাল টেনশনে পড়ে যান। তিনি যোগেশ অগ্নিহোত্রীকে ফোন করে বলেন, যোগেশ দেখো তো লালমনিরহাট এয়ারপোর্টে বিমান ওঠানামা করছে কিনা!
যোগেশ উত্তর দেয়, ইন্ডিয়ান মিডিয়ার খবর অনুযায়ী যুদ্ধ বিমান উঠছে আর নামছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে গোমাতা চরছে।
--এই মিডিয়াগুলো মাঝে মাঝে আমাকেই নার্ভাস করে দেয়। ঢপের চপ দিবি বাবা, একটু রয়ে সয়ে দে; কবে যেন টেনশনে টেঁসে যাই। যা হোক, তুমি টপ অপারেটিভ ধনঞ্জয়কে ঢাকায় রওনা করে দাও। খুঁজে দেখুক তুরস্কের কোন আইসক্রিম সেলার সেখানে নাচানাচি করছে কিনা।
ধনঞ্জয় ঢাকায় পৌঁছে মিলি ইসতিহবারাত তেসকিরাতি নামের আইসক্রিমের দোকান খুঁজতে থাকে। স্থানীয় ইনফরমার অপরাজিতা রীতিমতো বিউটি পার্লার সেজে এসে যোগ দেয় ধনঞ্জয়ের সঙ্গে। ধনঞ্জয় জিজ্ঞেস করে, বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে বেরিয়েছেন নাকি!
--নেমন্তন্ন খেয়েছি; ডেজার্টে আইসক্রিম ছিলো না। তাই আইসক্রিম খেতে বেরিয়েছি।
এক আইসক্রিম পার্লারে ঢুকতেই দেখে পাকিস্তানের গুলফরাজ বসে সেখানে, সঙ্গে এক এমেরিকান। ধনঞ্জয়কে দেখে সে জড়িয়ে ধরে, আ-ও মেরি জান।
টেবিলে ফিরে এলে অপরাজিতা জিজ্ঞেস করে, কে ওটা।
--আমার পুরোনো বন্ধু। একসময় ওয়াগাহ বর্ডারে আমরা যৌথভাবে জাল নোটের কারবার করতাম।
হঠাত তুরস্কের আহমেত এসে এমেরিকান লোকটার সঙ্গে খোশ গল্পে মত্ত হলে, গুলফরাজ উঠে এসে ধনঞ্জয়ের পাশে বসে। জিজ্ঞেস করে, এবার কি বেচতে এলে!
--পেয়াজ বেচার গ্রাহক খুঁজছি। তুমি কি বেচতে এখানে!
--দেখি কয়েকগজ লন বেচতে পারি কিনা।
ধনঞ্জয় অপরাজিতাকে জিজ্ঞেস করে, কি নেবে নাকি লন!
অপরাজিতা মাই ফুট বলে ব্যাগ থেকে টুথ ব্রাশ বের করে দাঁত মাজতে চলে যায়।
ধনঞ্জয় গুলফরাজকে জিজ্ঞেস করে, এমেরিকানটা কি বেচতে চায়? আর ঐ তুর্কীটা।
--এমেরিকান বোয়িং বেচতে চায়। আর তুর্কীটা ড্রোন বেচবে।
ধনঞ্জয় দুঃখ করে বলে, আমরা শালাই পেয়াজ আর লন নিয়ে থেকে গেলাম। ঐ লেভেলে পৌঁছাতে পারলাম না।
--আমরা রেললাইনের ধার থেকে কমোডে উঠেছি ক'দিন হলো। আর ওরা বহু আগেই কমোডে উঠে গেছে। ঐ পার্থক্য ঘুঁচানো কঠিন হে!
ধনঞ্জয় জিজ্ঞেস করে, তুর্কীরা নাকি এখন খুব সক্রিয় এদেশে।
গুলফরাজ বলে, হলিউড দেখে লোকে এমেরিকা নিয়ে আলাপ করে, বলিউড দেখে লোকে ভারত নিয়ে আলাপ করে, ড্রামা সিরিয়াল দেখে লোকে পাকিস্তান নিয়ে আলাপ করে। ইদানীং টার্কিশ সিরিয়ালের কদর হয়েছে। ফলে লোকজনের কল্পনার জগত বিস্তৃত হয়েছে।
অপরাজিতা আইসক্রিম পার্লারের প্রসাধন কক্ষ থেকে ময়ূখের শোতে যোগ দেয়। চোখ গোল গোল করে বলে, তুর্কিরা গিজ গিজ করছে এখানে। আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির শত্রু ঐ তুর্কীরা। ওরা লক্ষ্মণ সেনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলো। আমার মনে হয়, দেশরত্ন হাসিনাকেও ক্ষমতাচ্যুত করেছে ওরাই।
ব্রেকিং নিউজ ব্রেকিং নিউজ বলে উত্তেজিত হয়ে দৌড়াতে গিয়ে চেয়ারে বাড়ি খেয়ে পড়ে যায় ময়ূখ।



পাঠকের মন্তব্য