আপনি মেয়ের বাবা? কংগ্র্যাচুলেশনস। আপনার আছে একটি জান্নাত ও হাজার হাজার বিপদ। জীবদ্ধশায় আপনি অনেকবার মান-ইজ্জত হারাবেন। মেয়ে জোরে কথা বলে ফেললে, জোরে হাসলে, কারও সাথে তর্ক করে ফেললে, হাতাকাটা জামা পরলে, জিন্স পরলে, লিপস্টিক দিলে, ফিট বোরখা পরলে। স্বামীর মাইর খেয়ে বাপের বাড়ি আসলেও আপনার মান-ইজ্জত যাবে, আবার না আসলেও মান-ইজ্জত যাবে। মেয়ে ধর্ষিত হলে ধর্ষকের মান-ইজ্জত যাবে না, মান-ইজ্জত যাবে মেয়ের বাবার। মান-ইজ্জত হারানো শেষে রয়েছে আত্মহত্যা কিংবা খুন হওয়ার সুবর্ন সুযোগ।
বগুড়ার ঘটনাটি জানেন? পত্রিকায় এসেছে। তবে বাবা দিবসের সাথে অ্যালগরিদমে পেরে ওঠে নাই।
গল্পটা স্কুলে পড়া একটা ছোট্টো মেয়ের। গল্পটা এক মেয়ের বাবার। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবাকে নাস্তা দিয়ে চুলে বেনি করে স্কুলে যায়। বিকেলে স্কুল থেকে এসে হয়তো এক্কাদোক্কা খেলতো। তার বাবা শাকিল। পেশায় রিকশাচালক। কখনও হাতে চানাচুর, কখনও একটুখানি ডালভাজা, আবার কখনও এক টুকরো লাল ফিতা, মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে যা পারে, তাই নিয়ে ফেরে হয়তো।
এই ছোট্ট মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায় এলাকার এক ক্ষমতাবান স্বেচ্ছাসেবক দলীয় নেতা। রিকশাচালক শাকিল রাজি হয় না। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভাবে। কিন্তু এই সাহসটাই ছিল তার অপরাধ। তাকে ধরে নিয়ে যায় দলবল। তাকে পেটানো হয়। তাকে মেরে ফেলা হয়। যত সহজে এক বাক্যে লিখে ফেলা গেল, ‘তাকে মেরে ফেলা হয়’ তত সহজেই তাকে মেরে ফেলা হয়। এই দেশের পুলিশ, আদালত, সরকার, জজ, ব্যরিস্টার, সমন্বয়ক, দেশনেতা, পীরবাবা কেউই কোনো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে নাই। মেয়ের বাবা শাকিল বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে না দিতে চাওয়ারে অপরাধে স্বেচ্চাসেবক দলের ওই নেতার আদালতে তার মৃত্যদন্ড কার্যকর করা হয়।
আপনারও কি একটা মেয়ে আছে?
এলাকায় কি এমন কেউ আছে, যার হাতের ইশারায় থমকে যায় রাস্তা, যার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে পাড়ার মানুষ?
আপনার মেয়েটাকে কি সে কখনও দেখে ফেলেছে? অথবা সামনে দেখবে?
আপনি কি শাকিলের মতো প্রস্তুত? নাকি আপনি এখনও ভাবছেন, আপনার কিছু হবে না?
পাঠকের মন্তব্য