লেখা: মানস নাথ
বাঙালি এমন মেছো যে বৃষ্টির নাম রেখেছে ইলশেগুঁড়ি,
পাখির নাম মাছরাঙা, আর ঘ্যানঘ্যানে পোকার নাম দিয়েছে মাছি।
গসিপ করাকে বলে ফিশফাস, গোলমাল শুনলে মাছের বাজার আর ভান করা বোঝাতে বলে ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না।
দুর্ধর্ষ ভিলেনের নাম রেখেছে মছলিবাবা,
অতি চালাক বোঝাতে বলে গভীর জলের মাছ।
আদরের মেয়ের নাম পুঁটি,
আর জুতোর দোকান মানেই বাটা।
আবার মাছ রান্না করতেও চাই বাটা মশলা।
ফুটবলের লড়াইতে চাই চিংড়ি ইলিশ।
জাঁদরেল নেতাকে আড়ালে বলে রাঘব বোয়াল,
আর আমাদের মতো ফেবু-লেখিয়েদের বলে চুনোপুঁটি।
এমন কত যে মাছের নামে নাম রেখেছে বাঙালি!
আমাদের প্রিয় ঠাকুরের নামও ভোলা। আমাদের প্রিয় মাছের নামও ভোলা। প্রিয় ময়রার নামও ভোলাময়রা। এই জন্যই সবাই বলে মাছে ভাতে বাঙালি। যতই বলো কাঁকড়ার জাত, আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। জয় বাঙালি।
আমরা মাথামোটা গোঁয়ারকে বলি যশুরে কই। পেটমোটা হলে কাতলা। মাছচাষ করাকে বলি পিসিকালচার। বালি, পাথর,কয়লা, পুকুর, চাকরি চুরি করলে কেস নেই, কিন্তু মাছ চুরি করলে পুলিস পেটি কেস দেয়৷
জায়গার নাম চিংড়িহাটা, ট্যাংরা। কফিহাউজের সেলিব্রিটির নাম ভেটকি আর গোয়েন্দার অ্যাসিস্ট্যান্টের নাম তোপসে।
বিষ্ণুর প্রথম অবতারও মাছ।
লোককথায় মৎসেন্দ্রনাথ। নাথ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা।
সুন্দর চোখের নাম মীণাক্ষী,
নায়িকার নামও তাই।
নিষ্ঠুর বোঝাতে মাছের মা,
কষ্ট সহ্য করার উদাহরণ কই মাছের জান।
ভূতের নাম মেছো,
আর কাজ না হলে বলা হয় ধরি মাছ না ছুঁই পানি।
এইভাবেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকি,
আর নিশ্চিত জানি—
এ লেখাটা কেউ কপিপেস্ট করে ঝেড়ে দিয়ে
ভাজা মাছ উলটে খেতে না পারার ভান করবে। এদিকে জানে না আমিও মাছের তেলে মাছ ভেজে দিয়েছি।
আর ধরা পড়লে একটাই উত্তর—
সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার!
পাঠকের মন্তব্য