সাফাতের অন্যরকম রিমান্ড

৪২৫৯ পঠিত ... ১৩:০৩, মে ১৩, ২০১৭

নীলচে গালের উদীয়মান দাড়িতে বেশ স্মার্ট লাগছে সাফাতকে। হাফ হাতা ক্যাজুয়াল শার্টের সঙ্গে অ্যাশ কালারের জিন্স। হাঁটুর বাঁ পাশে লম্বা একটা ছেঁড়া, ওটা ঠিক ছেঁড়া না, ফ্যাশন। বসে আছেন তিনি বেঞ্চের মতো একটা চেয়ারে। মাথা ঈষৎ নিচু।

‘আপনাকে প্রথম যে প্রশুটা আন্তরিকভাবে করতে চাই, আপনি আপাতত কেমন আছেন?’

‘ডিফারেন্ট, মানে অন্যরকম। বলতে পারেন অন্যরকম অন্যরকম। এই অন্যরকম শব্দটা দুবার বলার কারণ হচ্ছে, আমি সত্যি অন্যরকম আছি, অন্তত এ মুহূর্তে। সারাজীবন যা ইচ্ছে তাই করেছি, এখন জনগণ আমাকে হাতের কাছে পেলে যা ইচ্ছে তাই করবে। আই ফিল থ্রিল। কজনের ভাগ্যে এরকম সময় আসে যে, সারাদেশের মানুষ কেবল তারই কথা বলছে, তারই বিষয় চিন্তা করছে!’

‘আপনার হাতে হাতকড়া, কোনো অনুভূতি?’

‘নট ব্যাড। আমার বাবার সোনার ব্যবসা। সোনার বিভিন্ন রকমের ব্যান্ড পরতাম হাতে। এখন লোহার।’ সাফাত তার হাতটা তুলে একবার দেখে নেন, ‘ভালো লাগছে। একই জিনিস সারাজীবন পরা একঘেয়েমি, সোনার বদলে এখন এটা লোহার। গুড, ভেরি গুড।’

‘একই জিনিস বেশিদিন ব্যবহার না করার একটা বাতিক আছে আপনার।’

‘আপনি ব্যাপারটা অন্যদিকে নেবেন না। দেখুন এই পৃথিবীর অনেক মানুষ অনেকগুলো বিয়ে করেছেন। কেউ দুটো, কেউ তিনটে। অনেকের আবার স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য মেয়ের কাছে যাওয়ার অভ্যাস আছে। সেখানে আমাকে দোষ দেবেন কেন? ওই যে একটা কবিতা আছে না, মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে ভ্রমণ...।’

‘কবিতা পড়েন নাকি আপনি?’

‘পড়ি না মানে! আমার প্রিয় কবি শহীদ কাদরী। ওনার একটা কবিতা আছে না--প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সঙ্গে শান্তি পাবে না শান্তি পাবে না...।’

‘আপনার নিশ্চয় প্রিয় কোনো গানও আছে?’

‘অবশ্যই। একটা না তিনটা--এক. মনে মনে যৌবনে লাগল আগুন, জল দিলে নেভে না জ্বলে যে দ্বিগুণ। দুই. একা একা কেন ভালো লাগে না, কোনো কাজে মন কেন বসে না। দু-একদিন হলো আরও একটা গান খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে আমার--লোকে যদি মন্দ কয়, সে তো নহে পরাজয়...।’

‘নিয়মিত বাংলা সিনেমা দেখতেন নাকি আপনি?’

‘এখনও দেখি। আমার প্রিয় সিনেমা হচ্ছে--সোনার ছেলে। প্রিয় ডায়ালগ--নায়িকা যখন বলে, দেহ পাবি শয়তান কিন্তু মন পাবি না। ঠিক তখনই ভিলেন যখন বলে, আমার তো ওটাই দরকার ললনা, হা হা হা...।’

‘সিনেমার প্রিয় দৃশ্য কোনটি--এটা আর জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি না। কারণ বুঝে গেছি কোন দৃশ্য আপনার প্রিয়।’

‘আপনি যেটা বুঝেছেন সেটা ভুল। ধর্ষণের দৃশ্য মোটেই আমার প্রিয় না। বাংলা  সিনেমার এই ধর্ষণের দৃশ্য নিয়ে আমার বেশ আপত্তি আছে। ধর্ষিতা হয়ে নায়িকা বাড়ি ফিরছে, কিন্তু তার গায়ের কাপড়-চোপড়ে কোনো পরিবর্তন নেই, যেখানে যা ছিল তাই থাকে। এটা হলো! এতে কি চোখের তৃপ্টি মেটে!’

‘এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, আপনি কোন নীতিবাক্যটি মেনে চলেন?’

‘পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে না।’

‘চমৎকার। তা উপন্যাস-টুপন্যাস পড়েন নাকি?’

‘আগে পড়তাম না, এখন পড়ি। শুরু করেছি কাশেম বিন আবু বকরের ফুটন্ত গোলাপ দিয়ে। মাশআল্লাহ, খারাপ না। এখানে আমি একটা কথা বলতে চাই। হিরো আলম নামে এক বদখতকে নিয়ে বিদেশি মিডিয়া খুব সচল ছিল, এখন কাশেম বিন আবু বকরকে নিয়ে আলোচনা চলছে। তার মানে কী, আমাদের দেশের স্টার, লেখক, শিল্পী এই মানের? এর চেয়ে ভালো কিছু নেই আমাদের। এটা বিদেশি চক্রান্ত! এই যে আপনারা এখন আমার পেছনে লেগেছেন, তার চেয়ে বরং সাধারণ একটা মানুষকে নিয়ে লেখালেখি করুন, তার মঙ্গল হবে। স্টার হয়ে যাবে সে। তখন কিছু একটা করে-টরে খেয়ে বাঁচতে পারবে।’

‘আপানার বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছে?’

‘হয়নি, তবে ভয়ে আছি।’

‘কেন?’

‘রাশিয়ান নেতা জোসেফ স্টালিনের অত্যাচারের প্রতিবাদ স্বরূপ তার ছেলে আত্মহত্যা করার জন্য নিজেকে গুলি করেছিল। কিন্তু গুলিটা যথাস্থানে লাগেনি, বেঁচে যান তিনি। এটা জেনে স্টালিন মন্তব্য করেছিলেন, ‘অপদার্থ, ঠিকমতো গুলি করতেও জানে না।’

সাফাত মনটা খারাপ করে বলেন, ‘বাবার সঙ্গে দেখা হলে বাবাও এরকম কিছু বলবেন, 'অপদার্থ, ঠিকমতো রেপ করতেও জানে না!’  

৪২৫৯ পঠিত ... ১৩:০৩, মে ১৩, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top